সাইবার ক্রাইম কি ও সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রনে আমাদের করনীয় কি

 বর্তমান সময়টা ইন্টারনেট কেন্দ্রীক! ইন্টারনেট আমাদের জীবনকে গতিশীল করেছে। এরই পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগঠিত হচ্ছে বিভিন্ন অপরাধ। যা সাইবার ক্রাইম নামে পরিচিত। আজ আমরা এই সাইবার ক্রাইম কি এবং সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমাদের করণীয় কি সে বিষয়ে জানব।ইন্টারনেট কে কেন্দ্র করে সংগঠিত অপরাধকে সাইবারক্রাইম বলে। বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশের ফলে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে সেইসাথে সাইবার ক্রাইম বেড়ে চলছে। আমাদের সাইবার ক্রাইম কি সে বিষয়ে জানতে হবে এবং সাইবার ক্রাইমের শিকার হলে আমাদের কি করতে হবে সে বিষয়ে জানা অত্যন্ত জরুরী।
সাইবার ক্রাইম কি ও এর নিয়ন্ত্রনে করনীয় কি?
কী কী ধরনের সাইবার ক্রাইম হয়ে থাকে তা হলো-
১- বিনা অনুমতিতে কোন প্রোগ্রামের মাধ্যমে অন্যের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে অন্যের কম্পিউটার ব্যবহার করা বা ক্ষতি সাধন করা।এ ধরনের কাজ হলো হ্যাকিং। হ্যাকিং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে হ্যাকার বলা হয়।এক কথায় বলা যায় অনিয়ম তান্ত্রিক প্রোগ্রামার ই হলো হ্যাকার।

২- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে কোন ব্যক্তির গতিবিধি অনুমতি ছাড়া ট্রাক বা অনুসরণ করা। এভাবে ট্রাকিং করে অন্যের কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করাবার চেষ্টা করা কে সাইবার আক্রমণ বলে। যা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অনৈতিক বিষয়।

৩- সফটওয়্যার পাইরেসির মাধ্যমে বিনা অনুমতিতে কারো সফটওয়্যার কপি করা। অন্যের সফটওয়্যার নিজের নামে বিতরণ করা কিংবা সামান্য পরিবর্তন করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া অনৈতিক বিষয়।

 এছাড়া সামাজিক অপরাধ গুলো করার পেছনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা।তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোন ব্যক্তিকে সামাজিক ভাবে হেয় করা,মানসিক চাপে রাখা, কিংবা দূরবর্তী এলাকা থেকে কোন কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করা যা সমাজের বা ব্যক্তি বিশেষ ক্ষতি করতে পারে ইত্যাদি কাজ ও অনৈতিক পর্যায়ে পড়ে। এগুলো সাইবার ক্রাইম এর আলোচ্য বিষয়।
সাইবার অপরাধের প্রকারভেদ
বর্তমানে আমাদের দেশে তথ্য প্রযুক্তি আইন 2006 এর 57(1) ধারা তে বলা হয়েছে,
 " যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে যা মিথ্যা ও অশ্লীল যার দ্বারা কারো মন মানহানির ঘটে বা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।আর এ ধরনের তথ্যগুলোর মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হলে অনধিক 10 বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে"

 আবার,পর্নোগ্রাফি আইন 2012 তে বর্ণিত আছে,
" কোন ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্ণোগ্রাফি সরবরাহ করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং 2 লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন"

 অনেকেই এসব আইন সম্পর্কে জানেন না বলে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের শামিল হচ্ছে। ফলে এসব অপরাধ ও অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়েছে।
সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রনে করনীয় 
সমাজের কাছে নিজের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা এআইটিপি নির্দেশিত বিষয়গুলো অনুসরণ করতে পারি।
যেমন-
১- আমরা নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কে জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করব।
২- আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সকল কাজ সামাজিক দায়িত্বশীলতার সাথে পালন করব।
৩- সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সকল নিয়ম কানুন শ্রদ্ধার সাথে মেনে চলবো।
৪- ব্যক্তি এবং সমাজের সমস্যা তৈরি হয় বা জন-উদ্যেগের কারণ হয় এমন কোনো তথ্য তুলে ধরবো না।
৫- ব্যক্তিগত স্বার্থে অবৈধভাবে কোন বিষয়ে ধারণা বা জ্ঞানকে ব্যবহার করব না।

 উপরোক্ত সকল বিষয়গুলো আমরা যদি সবাই মেনে চলি তাহলে সাইবার অপরাধ বা সাইবার ক্রাইম অনেকাংশে কমে যাবে। আমাদের ব্যক্তিগত প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করে থাকি। প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের বিবেক- বুদ্ধি ও বিবেচনাকে নৈতিকতার মানদন্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না।নিজস্ব সুচিন্তা কে কাজে লাগিয়ে যে কোন অপরাধমূলক কাজকে প্রতিহত করা যায়। পেশাগত ও সামাজিক আচরণ আইসিটি প্রফেশনালদের  সিদ্ধান্ত গ্রহণের সহায়ক ভূমিকা পালন করে।সকল ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার একটি নৈতিক মাত্রা থাকে, যা অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি ও নৈতিকতা রক্ষা করতে পারলে কম্পিউটার অপরাধ, সাইবার অপরাধ, হ্যাকিং, সফটওয়্যার পাইরেসি  প্রকৃতি অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজের প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।
Next Post Previous Post