নেকলেস লেখক গী দ্য মোপাসাঁ অনুবাদ:পূর্ণেন্দু দস্তিদার শেষ পর্ব
সে পুলিসের কাছে ও গাড়ির আপিসে গিয়েছিল এবং পুরস্কার ঘােষণা করে একটা বিজ্ঞাপন দিয়ে এসেছে। সে যথাসাধ্য করে এসেছে বলে তাদের মনে কিছুটা আশা হলাে।
ঐ ভয়ানক বিপর্যয়ে মেয়েটি সারাদিন এক বিভ্রান্ত অবস্থায় কাটাল। সন্ধ্যাবেলা যখন ললাইসেল ফিরে এল তখন তার মুখে যন্ত্রণার মলিন ছাপ, কিছুই সে খুঁজে পায়নি।
সে বলল, তােমার বান্ধবীকে লিখে দিতে হবে যে হারখানার আংটা তুমি ভেঙে ফেলেছ, তাই তা তুমি মেরামত করতে দিয়েছ। তাতে আমরা ভেবে দেখবার সময় পাব।'
তার নির্দেশমত মেয়েটি লিখে দিল।এক সপ্তাহ শেষ হওয়ায় তারা সব আশা ত্যাগ করল। বয়সে পাঁচ বছরের বড় লােইসেল ঘােষণা করল :
‘ঐ জড়ােয়া গহনা ফেরত দেবার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।'পরদিন যেই বাক্সে ওটা ছিল, তার ভিতরে যেই স্বর্ণকারের নাম ছিল, তার কাছে তারা সেটা নিয়ে গেল। সে তার খাতাপত্র ঘেঁটে বলল :
‘মাদাম, ঐ হারখানা আমি বিক্রি করিনি, আমি শুধু বাক্সটা দিয়েছিলাম।'
তারপর তারা সেই হারটির মত হার খোজ করার জন্য, তাদের স্মৃতির উপর নির্ভর করে এক স্বর্ণকার থেকে অন্য স্বর্ণকারের কাছে যেতে থাকে। দু’জনেরই শরীর বিরক্তি ও উদ্বেগে খারাপ হয়ে গেছে।
প্যালেস রয়েলে তারা এমন এক হীরার কন্ঠহার দেখল সেটা ঠিক তাদের হারানাে হারের মতাে। তার দাম চল্লিশ
হাজার ফ্রা। ছত্রিশ হাজার ফ্রাতে তারা তা পেতে পারে।
তিন দিন যেন ওটা বিক্রি না করে সে জন্য তারা স্বর্ণকারকে বিশেষভাবে অনুরােধ করল। তারা আরও ব্যবস্থা করল যে, যদি ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হওয়ার আগে ঐ হারটি খুজে পাওয়া যায়, তারা এটা ফেরত দিলে চৌত্রিশ হাজার ফ্ৰা ফেরত নিতে পারবে।
হসেলের কাছে তার বাবার মৃত্যুর পরে প্রাপ্ত আঠারাে হাজার ফ্রা ছিল। বাকিটা সে ধার করল ।
মাদার লােইসেল যখন জড়ােয়া গহনা মাদাম ফোরস্টিয়ারকে ফেরত দিতে গেল তখন শেষােক্ত মেয়েটি নির্জীবকণ্ঠে বলল :
ওটা আরও আগে তােমায় ফেরত দেওয়া উচিত ছিল; কারণ, তা আমারও দরকার হতে পারত।
তার বান্ধবী সেই ভয় করেছিল, তেমনভাবে সে গহনার বাক্সটি খুলল না। যদি বদলে দেওয়া হয়েছে সে টের পেত, সে কী মনে করত? সে কী বলত? সে কি তাকে অপহরক ভাবত?
এবার মাদার লাইসেল দারিদ্র্যের জীবনের ভয়াবহতা বঝতে পারে। সে তার নিজের কাজ সম্পূর্ণ সাহসের।
সঙ্গেই করে যায়। এ দুঃখজনক দেনা শোধ করা প্রয়ােজন। সে তা দেবে। দাসীকে তারা বিদায় করে দিল
তারা তাদের বাসা পরিবর্তন করল। নিচু ছাদের কয়েকটি কামরা তারা ভাড়া করল।।
ঘরকন্নার কঠিন সব কাজ ও রান্নাঘরের বিরক্তিকর কাজকর্ম সে শিখে নিল। তার গােলাপি নখ দিয়ে সে বাসন,ধােয়, তৈলাক্ত পাত্র ও ঝােল রাধার কড়াই মাজে। ময়লা কাপড়-চোপড়, শেমিজ, বাসন মাজার গামছা সে
পিরষ্কার করে দড়িতে শুকাতে দেয়। রােজ সকালে সে আবর্জনা নিয়ে রাস্তায় ফেলে। সার প্রত্যেক ধাপে শ্বাস
নেবার জন্য থেমে থেমে সে জল তােলে। সাধারণ পরিবারের মেয়ের মতাে পােশাক পরে সে হাতে ঝুড়ি নিয়ে মুদি, কসাই ও ফলের দোকানে যায় এবং তার দুঃখের পয়সার একটির জন্য পর্যন্ত দর কষাকষি করে।
প্রত্যেক মাসেই সময় চেয়ে কিছু দলিল বদল করতে হয়, কাউকে কিছু শােধ দিতে হয়।
তার স্বামীও সন্ধ্যাবেলা কাজ করে। সে কয়েকজন ব্যবসায়ীর হিসাবের খাতা ঠিক করে। রাত্রে এক পাতা পাঁচ ‘সাও' হিসেবে সে প্রায়ই লেখা নকল করে।
এরকম জীবন দশ বছর ধরে চলল।
দশ বছরের শেষে তারা সব কিছু মহাজনের সুদসহ প্রাপ্য নিয়ে সব ক্ষতিপূরণ করে ফেলতে পারে। তাছাড়া কিছু তাদের সঞ্চয়ও হলাে।
মাদার ললাইসেলকে দেখলে এখন বয়স্কা বলে মনে হয়। সে এখন গরিব গৃহস্থঘরের শক্ত, কর্মঠ ও অমার্জিত মেয়ের মতাে হয়ে গেছে। তার চুল অবিন্যস্ত, ঘাঘরা একপাশে মােচড়ানাে, হাতগুলাে লাল। সে চড়াগলায় কথা বলে এবং বড় বড় কলসিতে জল এনে মেঝে ধােয়। কিন্তু কখনও, তার স্বামী যখন আপিসে থাকে, জানালার ধারে বসে বিগত দিনের সেই সান্ধ্য অনুষ্ঠান ও সেই ‘বল’ নাচে তাকে এত সুন্দর দেখাচ্ছিল ও এমন অতিরিক্ত প্রশংসা পেয়েছিল, তার কথা সে ভাবে।।
যদি সে গলার সেই হারখানা না হারাত তাহলে কেমন হতাে? কে জানে কে বলতে পারে? কী অনন্যসাধারণ এই জীবন আর তার মধ্যে কত বৈচিত্র্য! সামান্য একটি বস্তুতে কী করে একজন ধ্বংস হয়ে যেতে আবার বাচতেও পারে!
এক রবিবারে সারা সপ্তাহের নানা দুশ্চিন্তা মন থেকে দূর করার জন্য সে যখন চামপস্-এলিসিস-এ ঘুরে
বেড়াচ্ছিল, হঠাৎ একটি শিশু নিয়ে ভ্রমণরতা একজন মেয়ে তার চোখে পড়ল । সে হলাে মাদাম ফোরস্টিয়ার।
সে এখনও যুবতী, সুন্দরী ও আকর্ষণীয়া। দেখে মাদাম ললাইসেলের মন খারাপ হয়ে গেল। সে কি ঐ মেয়েটির
সঙ্গে কথা বলবে? হ্যা, অবশ্যই বলবে। তাকে যখন সব শােধ করা হয়েছে তখন সব কিছু খুলে সে বলবে। কেন।
বলবে না?
সে মেয়েটির কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল : 'সুপ্রভাত, জেনি।তার বন্ধু তাকে চিনতে পারল না। এক সাধারণ মানুষ তাকে এমন অন্তরঙ্গভাবে সম্বােধন করায় সে অবাক হলাে। সে ব্ৰিতভাবে বলল :
‘কিন্তু মাদাম-আপনাকে তাে চিনলাম না-বােধহয় আপনার ভুল হয়েছে-
‘না, আমি মাতিলদা লােইসেল।
তার বান্ধবী বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠে বলল : 'হায়, আমার বেচারী মাতিলদা! এমনভাবে কী করে তুমি বদলে গেলে—'
‘হ্যা, তােমার সঙ্গে দেখা হবার পর থেকে আমার দুর্দিন যাচ্ছে—বেশ কিছু দুঃখের দিন গেছে—আর সেটা হয়েছে শুধু তােমার জন্য'
‘আমার জন্য? তা কী করে হলাে?'
'সেই যে কমিশনারের ‘বল’ নাচের দিন তুমি আমাকে তােমার হীরার হার পরতে দিয়েছিলে, মনে পড়ে?”
‘হ্যা, বেশ মনে আছে।'
‘কথা হচ্ছে, সেখানা আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম।
‘কী বলছ তুমি? কী করে তা আমায় তুমি ফেরত দিয়েছিলে?
‘ঠিক সেখানার মতাে একটি তােমাকে আমি ফেরত দিয়েছিলাম। তার দাম দিতে দশ বছর লেগেছে। তুমি
বুঝতেই পার, আমাদের মতাে লােক যাদের কিছুই ছিল না, তাদের পক্ষে তা সহজ ছিল না। কিন্তু তা শেষ
হয়েছে এবং সেজন্য আমি এখন ভালােভাবেই নিশ্চিন্ত হয়েছি।'
মাদাম ফোরস্টিয়ার তাকে কথার মাঝপথে থামিয়ে বলল :‘তুমি বলছ যে, আমারটা ফিরিয়ে দেবার জন্য তুমি একখানা হীরার হার কিনেছিলে?”
‘হঁ্যা। তা তুমি খেয়াল করনি? ঐ দুটি এক রকম ছিল।
বলে সে গর্বের ভাবে ও সরল আনন্দে একটু হাসল। দেখে মাদার ফোরস্টিয়ার-এর মনে খুব লাগল। সে তার
দুটি হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল :
‘হায়, আমার বেচারী মাতিলদা! আমারটি ছিল নকল। তার দাম পাঁচশত ফ্রার বেশি হবে না।
প্রত্যেক মাসেই সময় চেয়ে কিছু দলিল বদল করতে হয়, কাউকে কিছু শােধ দিতে হয়।
তার স্বামীও সন্ধ্যাবেলা কাজ করে। সে কয়েকজন ব্যবসায়ীর হিসাবের খাতা ঠিক করে। রাত্রে এক পাতা পাঁচ
‘সাও' হিসেবে সে প্রায়ই লেখা নকল করে।
এরকম জীবন দশ বছর ধরে চলল।
দশ বছরের শেষে তারা সব কিছু মহাজনের সুদসহ প্রাপ্য নিয়ে সব ক্ষতিপূরণ করে ফেলতে পারে। তাছাড়া কিছু
তাদের সঞ্চয়ও হলাে।
মাদার ললাইসেলকে দেখলে এখন বয়স্কা বলে মনে হয়। সে এখন গরিব গৃহস্থঘরের শক্ত, কর্মঠ ও অমার্জিত
মেয়ের মতাে হয়ে গেছে। তার চুল অবিন্যস্ত, ঘাঘরা একপাশে মােচড়ানাে, হাতগুলাে লাল। সে চড়াগলায় কথা
বলে এবং বড় বড় কলসিতে জল এনে মেঝে ধােয়। কিন্তু কখনও, তার স্বামী যখন আপিসে থাকে, জানালার
ধারে বসে বিগত দিনের সেই সান্ধ্য অনুষ্ঠান ও সেই ‘বল’ নাচে তাকে এত সুন্দর দেখাচ্ছিল ও এমন অতিরিক্ত
প্রশংসা পেয়েছিল, তার কথা সে ভাবে।
যদি সে গলার সেই হারখানা না হারাত তাহলে কেমন হতাে? কে জানে কে বলতে পারে? কী অনন্যসাধারণ এই
জীবন আর তার মধ্যে কত বৈচিত্র্য! সামান্য একটি বস্তুতে কী করে একজন ধ্বংস হয়ে যেতে আবার বাচতেও পারে!
এক রবিবারে সারা সপ্তাহের নানা দুশ্চিন্তা মন থেকে দূর করার জন্য সে যখন চামপস্-এলিসিস-এ ঘুরে
বেড়াচ্ছিল, হঠাৎ একটি শিশু নিয়ে ভ্রমণরতা একজন মেয়ে তার চোখে পড়ল। সে হলাে মাদাম ফোরস্টিয়ার ।
সে এখনও যুবতী, সুন্দরী ও আকর্ষণীয়। দেখে মাদাম লাইসেলের মন খারাপ হয়ে গেল । সে কি ঐ মেয়েটির
সঙ্গে কথা বলবে? হ্যা, অবশ্যই বলবে। তাকে যখন সব শোধ করা হয়েছে তখন সব কিছু খুলে সে বলবে। কেন।
বলবে না?
সে মেয়েটির কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল : ‘সুপ্রভাত, জেনি।
তার বন্ধু তাকে চিনতে পারল না। এক সাধারণ মানুষ তাকে এমন অন্তরঙ্গভাবে সম্বােধন করায় সে অবাক
হলাে। সে ব্ৰিতভাবে বলল :
‘কিন্তু মাদাম-আপনাকে তাে চিনলাম না-বােধহয় আপনার ভুল হয়েছে-
‘না, আমি মাতিলদা ললাইসেল।'
বলে সে গর্বের ভাবে ও সরল আনন্দে একটু হাসল। দেখে মাদার ফোরস্টিয়ার-এর মনে খুব লাগল। সে তার
দুটি হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল :
‘হায়, আমার বেচারী মাতিলদা! আমারটি ছিল নকল । তার দাম পাঁচশত ফ্রার বেশি হবে না।'
ঐ ভয়ানক বিপর্যয়ে মেয়েটি সারাদিন এক বিভ্রান্ত অবস্থায় কাটাল। সন্ধ্যাবেলা যখন ললাইসেল ফিরে এল তখন তার মুখে যন্ত্রণার মলিন ছাপ, কিছুই সে খুঁজে পায়নি।
তার নির্দেশমত মেয়েটি লিখে দিল।এক সপ্তাহ শেষ হওয়ায় তারা সব আশা ত্যাগ করল। বয়সে পাঁচ বছরের বড় লােইসেল ঘােষণা করল :
‘ঐ জড়ােয়া গহনা ফেরত দেবার ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।'পরদিন যেই বাক্সে ওটা ছিল, তার ভিতরে যেই স্বর্ণকারের নাম ছিল, তার কাছে তারা সেটা নিয়ে গেল। সে তার খাতাপত্র ঘেঁটে বলল :
‘মাদাম, ঐ হারখানা আমি বিক্রি করিনি, আমি শুধু বাক্সটা দিয়েছিলাম।'
তারপর তারা সেই হারটির মত হার খোজ করার জন্য, তাদের স্মৃতির উপর নির্ভর করে এক স্বর্ণকার থেকে অন্য স্বর্ণকারের কাছে যেতে থাকে। দু’জনেরই শরীর বিরক্তি ও উদ্বেগে খারাপ হয়ে গেছে।
প্যালেস রয়েলে তারা এমন এক হীরার কন্ঠহার দেখল সেটা ঠিক তাদের হারানাে হারের মতাে। তার দাম চল্লিশ
হাজার ফ্রা। ছত্রিশ হাজার ফ্রাতে তারা তা পেতে পারে।
তিন দিন যেন ওটা বিক্রি না করে সে জন্য তারা স্বর্ণকারকে বিশেষভাবে অনুরােধ করল। তারা আরও ব্যবস্থা করল যে, যদি ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হওয়ার আগে ঐ হারটি খুজে পাওয়া যায়, তারা এটা ফেরত দিলে চৌত্রিশ হাজার ফ্ৰা ফেরত নিতে পারবে।
হসেলের কাছে তার বাবার মৃত্যুর পরে প্রাপ্ত আঠারাে হাজার ফ্রা ছিল। বাকিটা সে ধার করল ।
মাদার লােইসেল যখন জড়ােয়া গহনা মাদাম ফোরস্টিয়ারকে ফেরত দিতে গেল তখন শেষােক্ত মেয়েটি নির্জীবকণ্ঠে বলল :
ওটা আরও আগে তােমায় ফেরত দেওয়া উচিত ছিল; কারণ, তা আমারও দরকার হতে পারত।
তার বান্ধবী সেই ভয় করেছিল, তেমনভাবে সে গহনার বাক্সটি খুলল না। যদি বদলে দেওয়া হয়েছে সে টের পেত, সে কী মনে করত? সে কী বলত? সে কি তাকে অপহরক ভাবত?
সঙ্গেই করে যায়। এ দুঃখজনক দেনা শোধ করা প্রয়ােজন। সে তা দেবে। দাসীকে তারা বিদায় করে দিল
তারা তাদের বাসা পরিবর্তন করল। নিচু ছাদের কয়েকটি কামরা তারা ভাড়া করল।।
ঘরকন্নার কঠিন সব কাজ ও রান্নাঘরের বিরক্তিকর কাজকর্ম সে শিখে নিল। তার গােলাপি নখ দিয়ে সে বাসন,ধােয়, তৈলাক্ত পাত্র ও ঝােল রাধার কড়াই মাজে। ময়লা কাপড়-চোপড়, শেমিজ, বাসন মাজার গামছা সে
পিরষ্কার করে দড়িতে শুকাতে দেয়। রােজ সকালে সে আবর্জনা নিয়ে রাস্তায় ফেলে। সার প্রত্যেক ধাপে শ্বাস
নেবার জন্য থেমে থেমে সে জল তােলে। সাধারণ পরিবারের মেয়ের মতাে পােশাক পরে সে হাতে ঝুড়ি নিয়ে মুদি, কসাই ও ফলের দোকানে যায় এবং তার দুঃখের পয়সার একটির জন্য পর্যন্ত দর কষাকষি করে।
প্রত্যেক মাসেই সময় চেয়ে কিছু দলিল বদল করতে হয়, কাউকে কিছু শােধ দিতে হয়।
তার স্বামীও সন্ধ্যাবেলা কাজ করে। সে কয়েকজন ব্যবসায়ীর হিসাবের খাতা ঠিক করে। রাত্রে এক পাতা পাঁচ ‘সাও' হিসেবে সে প্রায়ই লেখা নকল করে।
এরকম জীবন দশ বছর ধরে চলল।
দশ বছরের শেষে তারা সব কিছু মহাজনের সুদসহ প্রাপ্য নিয়ে সব ক্ষতিপূরণ করে ফেলতে পারে। তাছাড়া কিছু তাদের সঞ্চয়ও হলাে।
মাদার ললাইসেলকে দেখলে এখন বয়স্কা বলে মনে হয়। সে এখন গরিব গৃহস্থঘরের শক্ত, কর্মঠ ও অমার্জিত মেয়ের মতাে হয়ে গেছে। তার চুল অবিন্যস্ত, ঘাঘরা একপাশে মােচড়ানাে, হাতগুলাে লাল। সে চড়াগলায় কথা বলে এবং বড় বড় কলসিতে জল এনে মেঝে ধােয়। কিন্তু কখনও, তার স্বামী যখন আপিসে থাকে, জানালার ধারে বসে বিগত দিনের সেই সান্ধ্য অনুষ্ঠান ও সেই ‘বল’ নাচে তাকে এত সুন্দর দেখাচ্ছিল ও এমন অতিরিক্ত প্রশংসা পেয়েছিল, তার কথা সে ভাবে।।
যদি সে গলার সেই হারখানা না হারাত তাহলে কেমন হতাে? কে জানে কে বলতে পারে? কী অনন্যসাধারণ এই জীবন আর তার মধ্যে কত বৈচিত্র্য! সামান্য একটি বস্তুতে কী করে একজন ধ্বংস হয়ে যেতে আবার বাচতেও পারে!
এক রবিবারে সারা সপ্তাহের নানা দুশ্চিন্তা মন থেকে দূর করার জন্য সে যখন চামপস্-এলিসিস-এ ঘুরে
বেড়াচ্ছিল, হঠাৎ একটি শিশু নিয়ে ভ্রমণরতা একজন মেয়ে তার চোখে পড়ল । সে হলাে মাদাম ফোরস্টিয়ার।
সে এখনও যুবতী, সুন্দরী ও আকর্ষণীয়া। দেখে মাদাম ললাইসেলের মন খারাপ হয়ে গেল। সে কি ঐ মেয়েটির
সঙ্গে কথা বলবে? হ্যা, অবশ্যই বলবে। তাকে যখন সব শােধ করা হয়েছে তখন সব কিছু খুলে সে বলবে। কেন।
বলবে না?
সে মেয়েটির কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল : 'সুপ্রভাত, জেনি।তার বন্ধু তাকে চিনতে পারল না। এক সাধারণ মানুষ তাকে এমন অন্তরঙ্গভাবে সম্বােধন করায় সে অবাক হলাে। সে ব্ৰিতভাবে বলল :
‘কিন্তু মাদাম-আপনাকে তাে চিনলাম না-বােধহয় আপনার ভুল হয়েছে-
‘না, আমি মাতিলদা লােইসেল।
তার বান্ধবী বিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠে বলল : 'হায়, আমার বেচারী মাতিলদা! এমনভাবে কী করে তুমি বদলে গেলে—'
‘হ্যা, তােমার সঙ্গে দেখা হবার পর থেকে আমার দুর্দিন যাচ্ছে—বেশ কিছু দুঃখের দিন গেছে—আর সেটা হয়েছে শুধু তােমার জন্য'
‘আমার জন্য? তা কী করে হলাে?'
'সেই যে কমিশনারের ‘বল’ নাচের দিন তুমি আমাকে তােমার হীরার হার পরতে দিয়েছিলে, মনে পড়ে?”
‘হ্যা, বেশ মনে আছে।'
‘কথা হচ্ছে, সেখানা আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম।
‘কী বলছ তুমি? কী করে তা আমায় তুমি ফেরত দিয়েছিলে?
‘ঠিক সেখানার মতাে একটি তােমাকে আমি ফেরত দিয়েছিলাম। তার দাম দিতে দশ বছর লেগেছে। তুমি
বুঝতেই পার, আমাদের মতাে লােক যাদের কিছুই ছিল না, তাদের পক্ষে তা সহজ ছিল না। কিন্তু তা শেষ
হয়েছে এবং সেজন্য আমি এখন ভালােভাবেই নিশ্চিন্ত হয়েছি।'
মাদাম ফোরস্টিয়ার তাকে কথার মাঝপথে থামিয়ে বলল :‘তুমি বলছ যে, আমারটা ফিরিয়ে দেবার জন্য তুমি একখানা হীরার হার কিনেছিলে?”
‘হঁ্যা। তা তুমি খেয়াল করনি? ঐ দুটি এক রকম ছিল।
বলে সে গর্বের ভাবে ও সরল আনন্দে একটু হাসল। দেখে মাদার ফোরস্টিয়ার-এর মনে খুব লাগল। সে তার
দুটি হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল :
‘হায়, আমার বেচারী মাতিলদা! আমারটি ছিল নকল। তার দাম পাঁচশত ফ্রার বেশি হবে না।
তার স্বামীও সন্ধ্যাবেলা কাজ করে। সে কয়েকজন ব্যবসায়ীর হিসাবের খাতা ঠিক করে। রাত্রে এক পাতা পাঁচ
‘সাও' হিসেবে সে প্রায়ই লেখা নকল করে।
এরকম জীবন দশ বছর ধরে চলল।
দশ বছরের শেষে তারা সব কিছু মহাজনের সুদসহ প্রাপ্য নিয়ে সব ক্ষতিপূরণ করে ফেলতে পারে। তাছাড়া কিছু
তাদের সঞ্চয়ও হলাে।
মাদার ললাইসেলকে দেখলে এখন বয়স্কা বলে মনে হয়। সে এখন গরিব গৃহস্থঘরের শক্ত, কর্মঠ ও অমার্জিত
মেয়ের মতাে হয়ে গেছে। তার চুল অবিন্যস্ত, ঘাঘরা একপাশে মােচড়ানাে, হাতগুলাে লাল। সে চড়াগলায় কথা
বলে এবং বড় বড় কলসিতে জল এনে মেঝে ধােয়। কিন্তু কখনও, তার স্বামী যখন আপিসে থাকে, জানালার
ধারে বসে বিগত দিনের সেই সান্ধ্য অনুষ্ঠান ও সেই ‘বল’ নাচে তাকে এত সুন্দর দেখাচ্ছিল ও এমন অতিরিক্ত
প্রশংসা পেয়েছিল, তার কথা সে ভাবে।
যদি সে গলার সেই হারখানা না হারাত তাহলে কেমন হতাে? কে জানে কে বলতে পারে? কী অনন্যসাধারণ এই
জীবন আর তার মধ্যে কত বৈচিত্র্য! সামান্য একটি বস্তুতে কী করে একজন ধ্বংস হয়ে যেতে আবার বাচতেও পারে!
এক রবিবারে সারা সপ্তাহের নানা দুশ্চিন্তা মন থেকে দূর করার জন্য সে যখন চামপস্-এলিসিস-এ ঘুরে
বেড়াচ্ছিল, হঠাৎ একটি শিশু নিয়ে ভ্রমণরতা একজন মেয়ে তার চোখে পড়ল। সে হলাে মাদাম ফোরস্টিয়ার ।
সে এখনও যুবতী, সুন্দরী ও আকর্ষণীয়। দেখে মাদাম লাইসেলের মন খারাপ হয়ে গেল । সে কি ঐ মেয়েটির
সঙ্গে কথা বলবে? হ্যা, অবশ্যই বলবে। তাকে যখন সব শোধ করা হয়েছে তখন সব কিছু খুলে সে বলবে। কেন।
বলবে না?
সে মেয়েটির কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল : ‘সুপ্রভাত, জেনি।
তার বন্ধু তাকে চিনতে পারল না। এক সাধারণ মানুষ তাকে এমন অন্তরঙ্গভাবে সম্বােধন করায় সে অবাক
হলাে। সে ব্ৰিতভাবে বলল :
‘কিন্তু মাদাম-আপনাকে তাে চিনলাম না-বােধহয় আপনার ভুল হয়েছে-
‘না, আমি মাতিলদা ললাইসেল।'
দুটি হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল :
‘হায়, আমার বেচারী মাতিলদা! আমারটি ছিল নকল । তার দাম পাঁচশত ফ্রার বেশি হবে না।'
(y)