ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যে ৭ টি খাবার অবশ্যই খাবেন

ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সার যেন এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান সময়ে। বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা  এবং ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ক্যান্সারের প্রবণতা থেকে বেশি ডায়াবেটিসের ভয়াবহতা় বেড়েই চলছে।
বর্তমান বিশ্বে প্রতি ১০ সেকেন্ডে একজন করে ডায়াবেটিস রোগী মারা যান। যার প্রধান কারণ থাকে ডায়াবেটিস।এছাড়াও প্রতি ১০ সেকেন্ডে পৃথিবীতে নতুন দুইজন ডায়াবেটিস রোগী সনাক্ত করা হয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন বর্তমান সময় ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকতে হলে  আমাদের নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত এবং কিছু নিয়মকানুন মেনে চলা উচিত।
ডায়াবেটিসের রোগির দরকারি খাবার
একবার ডায়াবেটিস হলে তার থেকে নিস্তার পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।কারণ এটি একটি অনিরাময়যোগ্য রোগ।একবার কারও ডায়াবেটিস হয়ে গেলে তা মৃত্যু পর্যন্ত তাকে বয়ে বেড়াতে হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসা ঠিক নয়। সঠিক জীবনযাপন ডায়াবেটিস রোগীকে সুস্থ রাখতে সক্ষম। তাই একজন ডায়াবেটিস রোগীকে অবশ্যই জানা উচিত তার কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত।এবং কোনগুলি খাওয়া উচিত নয়।কারণ খাবারের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

ডায়বেটিস কি?কেন হয়,ডায়বেটিস কত প্রকার ও কি কি এবং এর ভয়াবহতা!
তাহলে আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জানবো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোন খাবারগুলো ভালো। আমরা অনেকেই জানি ডায়াবেটিস রোগীদের চিনি খাওয়া উচিত নয়।কারণ এর মাধ্যমে ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পায়। তাই মিষ্টি জাতীয় খাবার সম্পূর্ণ ত্যাগ করে দেয় ডায়াবেটিস রোগীরা। কিন্তু কিছু কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার রয়েছে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর নয়। এছাড়াও অনেক খাবার রয়েছে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। আজ আমরা সকল খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

খেজুর- খেজুর একটি অতি মিষ্টিজাতীয় খাবার। তাই এটিকে ডায়াবেটিস রোগীরা সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলে। কিন্তু তারা হয়তো এটি  জানেনা যে, খেজুর ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোনোভাবেই ক্ষতিকর নয় বরঞ্চ অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। এর প্রধান কারণ খেজুড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট (Anti-oxidant). যা একজন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয় বরঞ্চ অত্যন্ত উপকারী।

মটরশুটি- মটরসুটি হচ্ছে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য আরেকটি উপকারী খাবার।সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গিয়েছে মটরশুটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। একটি মানুষ নিয়মিত ২০০ গ্রাম মটরশুঁটির খেলে  তার টাইপ টু ডায়াবেটিস (Type 2 diabetes), হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ(hypertension/high blood pressure)  ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে থাকে। আমাদের দেশে বর্তমান সময়ে সারা বছরই মটরশুটি পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত মটরশুঁটি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। যদি সচরাচর না পাওয়া যায় তাহলে বেশি করে কিনে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে খেতে পারেন।

তুলসী- আমরা সকলেই জানি তুলসীর রয়েছে  প্রচুর পরিমাণে ভেষজ গুণ। জ্বর সর্দি-কাশি ইত্যাদিতে তুলসীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তুলসী পাতা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভেষজ ঔষধ তৈরি করা হয়। আপনি ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে তুলসী পাতার  রস সকাল বেলা খালি পেটে খেতে পারেন। এটি আপনার জন্য ইনসুলিনের কাজ করবে। আপনি যদি শুধু তুলসীপাতা না খেতে পারেন তাহলে চায়ের সাথে মিশিয়েও তুলসীপাতার রস খেতে পারেন। এতে ভালো ফল পাবেন। এবং ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

দুধ- ডায়াবেটিস রোগীদের যেহেতু খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে তার কারণে পুষ্টির অভাব দেখা দেওয়া সম্ভব। আর একারণেই ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় দুধ রাখা অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং সুস্থ রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে অনেকেরই দুধ খেলে প্রচুর সমস্যা হয়। তাই অনেকেই দুধ খায়না।তাদের আমি পরামর্শ দিব যারা দুধ খেতে পারেন না তারা টক দই এবং দুধের তৈরি অন্যান্য খাবার খেতে পারেন।

করলা- কড়লা তেতো জাতীয় একটি সবজি। তবে তেতো হলেও সবজি হিসেবে করলার কদর কম নয়। এর প্রধান কারণ হলো করলা একটি স্বাস্থ্যকর এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী সবজি। সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা যায় করলার রয়েছে প্রচুর পরিমাণে anti- ডায়াবেটিস উপাদান। যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কাঁচা করলা এবং  করলার রস পান করলে তাকে আর আলাদা করে ইনসুলিন গ্রহণ করতে হয় না।

সবুজ শাকসবজি-কথায় আছে,
শাকসবজি ফল-মূলে বেশি বেশি পুষ্টি মেলে!
 তাই দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে শাকসবজি এবং ফলমূল এর ভূমিকা অপরিসীম এবং এর কোনো বিকল্প নেই।ডায়াবেটিস রোগীদের প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি এবং ফলমূল গ্রহণ করতে হবে। এতে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং যেকোন রোগ আক্রান্ত করতে পারবে না। কারণ ডায়াবেটিস রোগীদের খুব সহজে অন্যান্য রোগ আক্রান্ত করে থাকে। তবে নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি এবং ফলমূল খেলে রোগ মুক্ত থাকা সম্ভব।

রুটি- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অন্যতম খাদ্য গমের রুটি কারন রুটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত সকালে ঘুম রাতে রুটি খেলে ডায়াবেটিস রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তিন বেলা ভাত খেলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে প্রায় দুই বেলা রুটি এবং একবেলা ভাত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।


 উপরোক্ত খাদ্যগুলো হচ্ছে ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। তবে আমরা কখনই  চাইবো না আমাদের কারও ডায়াবেটিস হোক। তাই ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের এখানে সবার পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। ডায়াবেটিসকে  দূরে রাখতে হলে আমাদের প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত। এর ফলে আমাদের শরীরে থাকা গ্লুকোজ প্রতিদিনের টা প্রতিদিন শেষ হবে। এবং শরীর  অতিরিক্ত গ্লুকোজ জমিয়ে রেখে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে না।

 ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকতে হাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যায়াম। প্রতিদিন অন্তত পক্ষে 30 মিনিট করে আমাদের হাঁটা উচিত। এটি সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। হাটলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। হাঁটার ফলে ডায়াবেটিসের সাথে সাথে উচ্চরক্তচাপ এবং এছাড়াও অন্যান্য রোগের হাত থেকে আমরা মুক্তি থাকতে পারবো।

 সব শেষে বলতে চাই সবাই স্বাস্থ্য সচেতন হোন। নিজের স্বাস্থ্যর প্রতি যত্নবান হন এবং রোগমুক্ত থাকুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url