রচনা ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা
ভূমিকা :শৃঙ্খলাবোধ ও নিয়মানুবর্তিতাকে মনের এক ধরনের শিক্ষা বলা যেতে পারে। এ ধরনের শিক্ষিত মন ব্যক্তিজীবনে হােক, পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে হােক-সুনির্দিষ্ট যে কোনাে নিয়ম নীতি মেনে চলতে এতটুকু দ্বিধান্বিত হয় না। শৃঙ্খলা-নিয়মানুবর্তিতার মর্মকথা হলাে আনুগত্য। আর এর প্রেরণার মূলে সক্রিয় আছে মূল্যবােধ । বিধি কে যে সর্বদা অমান্য করে চলে, জীবনে তার সফলতার সম্ভাবনা ক্ষীণ।মানবসমাজের উন্নতি বলি, অগ্রগতি বলি, সভ্যতার বিকাশ বলি, সবকিছুর মূলে আছে ব্যক্তি-মানুষ আর সমষ্টি মানুষের সুশৃঙ্খল কর্মোদ্যোগ।যেখানে শৃঙ্খলা-নিয়মানুবর্তিতা নেই, সেখানে শ্রী নেই, কল্যাণ নেই, নেই কোনাে আনন্দ।
শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা : সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে নিয়মের রাজত্ব বিদ্যমান। চন্দ্র-সূর্য থেকে শুরু করে প্রাণিজগতের ক্ষুদ্র– কীট পর্যন্ত নিয়মের
অধীন। সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত সবকিছুই নিয়ম-শৃঙ্খলায় চলছে। শঙ্খলা না থাকলে পৃথিবীর কোনাে কিছুই স্থায়ী হতে পারত না।ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখা যাবে, পৃথিবীতে যে জাতি উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে উঠেছে, তাদের জীবনধারা কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা, বিধি- নিষেধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অতীতকালের স্পার্টা দেশবাসীর শঙ্খলাবােধ ও নিয়মনিষ্ঠার কাহিনী প্রবাদে পরিণত হয়েছে। পাশ্চাত্যদেশের জাতিগুলাের জনবল যে খুব বেশি এমন নয়, অথচ সারা পৃথিবীর ওপর তারা আজ অনেকখানি আধিপত্য বিস্তার করেছে। ব্রিটেনের কথাই ধরা যাক, এর ভৌগােলিক আয়তন কতটুকু? কিন্তু অত্যন্ত বিস্ময়ের ব্যাপার, বিশাল ভারতবর্ষ প্রায় দুশ বছর ব্রিটিশ জাতির পদানত ছিল । এরপ
একটি আশ্চর্য ঘটনা কী করে ঘটল? এর একমাত্র উত্তর ব্রিটিশের Organisation of man-power। সুসামঞ্জস্য নিয়ম-শৃঙ্খলা গােটা ব্রিটিশ
জাতিকে প্রচণ্ড শক্তিমান একটি জাতিরুপে গড়ে তুলেছে, প্রণালিবন্দ্ব কার্যধারা তার সব শক্তির উৎস ।।
নিয়ম-শৃঙ্খলার অভাবের ফলাফল : নিয়মানুগত্যের অভাব ঘটলে, শৃঙ্খলা রক্ষা করে না চললে সব কাজ যে কী রকম পণ্ড হয়ে যায়, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ দিচ্ছে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের ক্ষুদ্র-বৃহৎ বহু ঘটনা। রেলে, স্টীমারে, লঞে, বাসে, খেলার মাঠে, সিনেমা হলের সামনে একসাথে অসংখ্য লােক ভিড় জমালে তখন টিকিট কিনতে গিয়ে জামা ছেড়ে, জুতা হারায়, মানিব্যাগটা কোথায় উধাও হয়ে যায়। যাত্রীবাহী যানগুলােতে ওঠা-নামার ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলার জন্যে মানুষকে কী হয়রানিই না সহ্য করতে হয়। এসব জায়গায় একান্ত স্বার্থপরতা না দেখিয়ে একটুখানি ধৈর্য ধরে যদি নিয়ম রক্ষা করে চলা যায়, তাহলে নানান ক্ষয়ক্ষতি থেকে সবাই বাঁচতে পারে। শিক্ষার অভাবে শৃঙ্খলাবােধ ও নিয়মানুবর্তিতা আমাদের নেই বললেই চলে।আরাে দৃষ্টান্ত রয়েছে শৃঙ্খলা সম্পর্কে। দল বেঁধে খেলতে নেমে খেলােয়াড়রা ব্যক্তিগত কেরামতি দেখাতে গেলে সে দলের পরাজয় বরণ অনিবার্য। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদল সেনাধ্যক্ষের আদেশ-নির্দেশকে উপেক্ষা করলে যুদ্ধজয় কখনাে সম্ভব হতে পারে না। শৃঙ্খলাহীন সেনাদল উদভ্রান্ত জনতা ছাড়া আর কী?
ছাত্র জীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা : ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব অপরিসীম। ছাত্র-ছাত্রীরা একদিন জাতির নেতৃত্বে দেবে। কিন্তু তারা যদি সেজন্যে নিজেদের সঠিকভাবে প্রস্তত না করে তাহলে তারা ব্যর্থ হবে। একমাত্র শৃঙ্খলা-নিয়মানুবর্তিতা দ্বারাই জীবনকে সুন্দর ও সঠিকভাবে তৈরি করা সম্ভব। ছাত্রজীবনকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় কিংবা ছাত্রজীবন যদি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে তবে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন এর জ্বলন্ত প্রমাণ। সেখানে শিক্ষার মানতাে নেই-ই; বরং ছাত্ররা ব্যস্ত বিভিন্ন অনৈতিক কাজে। শিক্ষা অর্জন এখন তাদের অধিকাংশের কাছেই রটিন ওয়ার্ক। ছাত্রসমাজের এ অবস্থা জাতির ভবিষ্যতের জন্য মােটেও শুভ সংবাদ নয়। তাই এখনই ছাত্রসমাজকে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে নিয়ে আসা দরকার।
স্বাধীনতা বনাম স্বেচ্ছাচারিতা : শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার অভাবে আমাদের সমাজে স্বাধীনতা এখন স্বেচ্ছাচারিতার রূপ ধারণ করেছে। এখন
স্বাধীনতা এমন পর্যায়ে এসে পৌছেছে যে, অধিকাংশ মানুষই কাউকে তােয়াক্কা করার প্রয়ােজনবোেধ করে না। সমাজে এখন স্বেচ্ছাচারিতা এমন পর্যায়ে এসেছে যে, যার যা মন চাচ্ছে তাই করছে, অথচ বাধা দেবার যেন কেউ নেই। সভ্যতার নামে পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতির কবলে পড়ে বাংলাদেশের তরুণ ও যুবসমাজ স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে। গুরুজনকে সালাম দেওয়া তাে দূরের কথা উল্টো তার সামনে নিশ্চিন্তে সিগারেট পান এখন স্বাভাবিক ঘটনা। স্বাধীনতার অর্থ এখানে যথেচ্ছা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে সমাজ থেকে মানবতাবােধ যা আছে তাও থাকবে না।
উপসংহারঃশৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা শেখার প্রশস্ত সময় কৈশাের । এ সময়েই সবাই নিজেকে শাসন করতে শিখবে, সংযমী হবে।প্রয়ােজনে ত্যাগ স্বীকার করবে। জীবনে সফলতা অর্জনের বড় উপায় হলাে নিজের আচরণকে স্বেচ্ছাচারিতা থেকে মুক্ত রেখে শুঙ্খলা ও
নিয়মানুবর্তিতার বশে রাখা। আপাতদৃষ্টিতে যে কোনাে বন্ধনই বিরক্তিকর, কিন্তু এর পরিণাম হয় খুবই কল্যাণকর। বন্যার জল চারপাশের জনপদের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে ক্ষতিকর। কিন্তু এ জলপ্রবাহকে বাধের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত করে যখন ফসল ফলানাের কাজে লাগানাে হয়,তখন দেশ শস্য-শ্যামল হয়ে ওঠে। অনেকে মনে করেন শৃঙ্খলা-নিয়মানুবর্তিতা বড় হয়ে শেখা যাবে। কিন্তু বাল্য, কৈশাের, যৌবনকালে মন বুদ্ধি থাকে নমনীয়। এ সময়ে তাকে যা শেখানাে হয় সে তাই শিখে। এজন্যেই পিতামাতা ও শিক্ষকদের কর্তব্য বাল্যকাল থেকে।শিক্ষার্থীদের শঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে নিয়ে আসা। তাতে দেশ ও জাতি সুস্থ নাগরিক পাবে, জাতি হবে উন্নত। পরিশেষে প্রাজ্ঞজনের এ উক্তিটি প্রণিধানযােগ্য- Discipline means success anarchy means ruin.
শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা : সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে নিয়মের রাজত্ব বিদ্যমান। চন্দ্র-সূর্য থেকে শুরু করে প্রাণিজগতের ক্ষুদ্র– কীট পর্যন্ত নিয়মের
অধীন। সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত সবকিছুই নিয়ম-শৃঙ্খলায় চলছে। শঙ্খলা না থাকলে পৃথিবীর কোনাে কিছুই স্থায়ী হতে পারত না।ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখা যাবে, পৃথিবীতে যে জাতি উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে উঠেছে, তাদের জীবনধারা কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা, বিধি- নিষেধ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অতীতকালের স্পার্টা দেশবাসীর শঙ্খলাবােধ ও নিয়মনিষ্ঠার কাহিনী প্রবাদে পরিণত হয়েছে। পাশ্চাত্যদেশের জাতিগুলাের জনবল যে খুব বেশি এমন নয়, অথচ সারা পৃথিবীর ওপর তারা আজ অনেকখানি আধিপত্য বিস্তার করেছে। ব্রিটেনের কথাই ধরা যাক, এর ভৌগােলিক আয়তন কতটুকু? কিন্তু অত্যন্ত বিস্ময়ের ব্যাপার, বিশাল ভারতবর্ষ প্রায় দুশ বছর ব্রিটিশ জাতির পদানত ছিল । এরপ
একটি আশ্চর্য ঘটনা কী করে ঘটল? এর একমাত্র উত্তর ব্রিটিশের Organisation of man-power। সুসামঞ্জস্য নিয়ম-শৃঙ্খলা গােটা ব্রিটিশ
জাতিকে প্রচণ্ড শক্তিমান একটি জাতিরুপে গড়ে তুলেছে, প্রণালিবন্দ্ব কার্যধারা তার সব শক্তির উৎস ।।
ছাত্র জীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা : ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার গুরুত্ব অপরিসীম। ছাত্র-ছাত্রীরা একদিন জাতির নেতৃত্বে দেবে। কিন্তু তারা যদি সেজন্যে নিজেদের সঠিকভাবে প্রস্তত না করে তাহলে তারা ব্যর্থ হবে। একমাত্র শৃঙ্খলা-নিয়মানুবর্তিতা দ্বারাই জীবনকে সুন্দর ও সঠিকভাবে তৈরি করা সম্ভব। ছাত্রজীবনকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় কিংবা ছাত্রজীবন যদি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে তবে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন এর জ্বলন্ত প্রমাণ। সেখানে শিক্ষার মানতাে নেই-ই; বরং ছাত্ররা ব্যস্ত বিভিন্ন অনৈতিক কাজে। শিক্ষা অর্জন এখন তাদের অধিকাংশের কাছেই রটিন ওয়ার্ক। ছাত্রসমাজের এ অবস্থা জাতির ভবিষ্যতের জন্য মােটেও শুভ সংবাদ নয়। তাই এখনই ছাত্রসমাজকে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে নিয়ে আসা দরকার।
স্বাধীনতা বনাম স্বেচ্ছাচারিতা : শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার অভাবে আমাদের সমাজে স্বাধীনতা এখন স্বেচ্ছাচারিতার রূপ ধারণ করেছে। এখন
স্বাধীনতা এমন পর্যায়ে এসে পৌছেছে যে, অধিকাংশ মানুষই কাউকে তােয়াক্কা করার প্রয়ােজনবোেধ করে না। সমাজে এখন স্বেচ্ছাচারিতা এমন পর্যায়ে এসেছে যে, যার যা মন চাচ্ছে তাই করছে, অথচ বাধা দেবার যেন কেউ নেই। সভ্যতার নামে পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতির কবলে পড়ে বাংলাদেশের তরুণ ও যুবসমাজ স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে। গুরুজনকে সালাম দেওয়া তাে দূরের কথা উল্টো তার সামনে নিশ্চিন্তে সিগারেট পান এখন স্বাভাবিক ঘটনা। স্বাধীনতার অর্থ এখানে যথেচ্ছা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে সমাজ থেকে মানবতাবােধ যা আছে তাও থাকবে না।
উপসংহারঃশৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা শেখার প্রশস্ত সময় কৈশাের । এ সময়েই সবাই নিজেকে শাসন করতে শিখবে, সংযমী হবে।প্রয়ােজনে ত্যাগ স্বীকার করবে। জীবনে সফলতা অর্জনের বড় উপায় হলাে নিজের আচরণকে স্বেচ্ছাচারিতা থেকে মুক্ত রেখে শুঙ্খলা ও