নিমগাছ - বনফুল

নিমগাছ
 - বনফুল

কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে।
পাতাগুলাে ছিড়ে শিলে পিষছে কেউ!
কেউবা ভাজছে গরম তেলে।।
খােস দাদ হাজা চুলকানিতে লাগাবে।
চর্মরােগের অব্যর্থ মহৌষধ।
কচি পাতাগুলাে খায়ও অনেকে।
এমনি কাচাই ...
কিম্বা ভেঙে বেগুন-সহযােগে।।
যকৃতের পক্ষে ভারি উপকার।
কচি ডালগুলাে ভেঙে চিবােয় কত লােক ... দাঁত ভালাে থাকে। কবিরাজরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ ।
বাড়ির পাশে গজালে বিজ্ঞরা খুশি হন।।
বলে- ‘নিমের হাওয়া ভালাে, থাক, কেটো না।
কাটে না, কিন্তু যত্নও করে না।
আবর্জনা জমে এসে চারিদিকে।
শান দিয়ে বাঁধিয়েও দেয় কেউ- সে আর-এক আবর্জনা।
হঠাৎ একদিন একটা নতুন ধরনের লােক এলাে।

মুগ্ধদৃষ্টিতে চেয়ে রইল নিমগাছের দিকে। ছাল তুললে না, পাতা ছিড়লে না, ডাল ভাঙলে না,
মুগ্ধদৃষ্টিতে চেয়ে রইল শুধু।

বলে উঠল, 'বাহ, কী সুন্দর পাতাগুলি ... কী রূপ ! থােকা-থােকা ফুলেরই বা কী বাহার.. একঝাঁক।
নক্ষত্র নেমে এসেছে যেন নীল আকাশ থেকে সবুজ সায়রে। বাহ-

খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে চলে গেল।

কবিরাজ নয়, কবি ।

নিমগাছটার ইচ্ছে করতে লাগল লােকটার সঙ্গে চলে যায়। কিন্তু পারলে না। মাটির ভিতরে শিকড়।
অনেক দূরে চলে গেছে। বাড়ির পিছনে আবর্জনার স্তুপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রইল সে।

ওদের বাড়ির গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্মীবউটার ঠিক এক দশা।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url