কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ এর সুবিধা ও উদ্দেশ্য
আধুনিক তথ্য যােগাযােগ ব্যবস্থায় তথ্যকে শেয়ার করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তথ্য শেয়ারের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছােট-বড় নানা ধরনের অজস্র কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রচলিত রয়েছে। এ সকল নেটওয়ার্কে বিপুল সংখ্যক কম্পিউটারসহ আরও অনেক আধুনিন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি সংযুক্ত রয়েছে। কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইসের নেটওয়ার্কসমূহকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রেণিবিভাগ করা যায়। যেমন : নেটওয়ার্কের ভৌগােলিক বিস্তৃতি, নেটওয়ার্কের মালিকানা, নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত প্রটোকল ইত্যাদি অনুসারে।কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি, কাকে বলে কত প্রকার ও নেটওয়ার্ক প্রধানত কয়টি।এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ বা নেটওয়ার্ক ডিভাইস কি এবং নেটওয়ার্ক এর সুবিধা অসুবিধা আজকের পোস্টের প্রধান আলোচ্য বিষয় আসুন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক,
নেটওয়ার্কের ভৌগােলিক বিস্তৃতি : নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারগুলাের ভৌগােলিক অবস্থান অর্থাৎ একটি কম্পিউটার থেকে অন্য আরেকটি কম্পিউটার কতটা দূরত্বে অবস্থিত তার ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে প্রধানত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়।
১. পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Personal Area Network - PAN)
লােকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Local Area Network - LAN)
৩. ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্ক (Campus Area Network - CAN)
৪. মেট্রোপিলটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (Metropolitan Area Network - MAN)
৫. ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (Wide Area Network - WAN)
এছাড়াও আরও বেশ কিছু কম্পিউটার নেটওয়ার্ক রয়েছে।
পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Personal Area Network-PAN) : কোনাে ব্যক্তির দৈনন্দিন ব্যবহৃত ব্যক্তিগত বিভিন্ন ।ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলাের মধ্যে সংযােগ স্থাপন করে যে নেটওয়ার্ক গড়ে তােলা হয় তাই পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা - PAN নামে পরিচিত। সাধারণত Wi-Fi দ্বারা একই কক্ষের মধ্যে একজনের ব্যবহারের জন্য এ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা গড়েতােলা যেতে পারে। সাধারণত এ নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ১০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। USB, Fireware Bus বা Wireless Medium দিয়ে প্যানের ডিভাইসগুলাে সংযুক্ত থাকতে পারে। প্যানের ডিভাইসগুলাের মধ্যে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ,ওয়েব ক্যামেরা, ডিজিটাল ক্যামেরা, সাউন্ড সিস্টেম, পিডিএ, মােবাইল, স্ক্যানার, প্রিন্টার ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য।
লােকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Local Area Network - LAN): লােকাল এরিয়া শব্দটি বললেই যা মনে হয় তা হলাে ছােট একটি এলাকা। আসলেই লােকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN এর ভৌগােলিক বিস্তৃতি খুবই সীমিত, সাধারণত একটি বিল্ডিং বা স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত কয়েকটি বিল্ডিং-এ স্থাপিত অনেক গুলাে কম্পিউটারের মধ্যে এই নেটওয়ার্ক গড়ে তােলা হয় রিপিটার ব্যবহার করে ।এর বিস্তৃতি সর্বোচ্চ 1 কিলােমিটার দূরত্ব পর্যন্ত করা যায়। যেহেতু
কম্পিউটারগুলাে খুবই কাছাকাছি অবস্থানে থাকে তাই নেটওয়ার্কে তাদের সংযুক্ত করাটাও সহজ হয় এবং এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের টপােলজি ব্যবহৃত হলেও স্টার, বাস এবং রিং টপােলজি বেশি ব্যবহৃত হয়।ট্রান্সমিশন মিডিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয় টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল, কো-এক্সিয়াল ক্যাবল, অপটিকাল ফাইবার ক্যাবল বা রেডিও ওয়েভ। কো-এক্সিয়াল ক্যাবলের মধ্যে 10 base 2 বহুল প্রচলিত, এর সাহায্যে LAN তৈরি করলে 185 মিটার পর্যন্ত দূরত্বে নির্বিঘ্নে ডেটা স্থানান্তর করা যায় এবং একটি LAN-এ সর্বোচ্চ 4টি রিপিটার স্টেশন ব্যবহার করা যায়।LAN-এ ব্যবহৃত আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিও খুব জটিল প্রকৃতির হয় না। এ ধরনের নেটওয়ার্কের ডেটা প্রবাহের গতি 10 Mbps থেকে 100 Mbps পর্যন্ত হতে পারে।
ক্যাম্পাস এরিয়া নেটওয়ার্ক (Campus Area Network - CAN) : দুই বা ততােধিক LAN কে সংযুক্ত করতে CAN ব্যবহৃত হয়। CAN -এর বিস্তৃতি LAN-এর চেয়ে বড় কিন্তু MAN-এর চেয়ে ছােট হয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে স্থাপিত LAN গুলাে নিয়ে CAN গঠিত হয়। যেমন- একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিল্ডিং, একাডেমিক বিল্ডিং, লাইব্রেরি বিল্ডিং, স্টুডেন্ট সেন্টার, আবাসিক হলসমূহ, জিমনেসিয়াম এবং অন্যান্য বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত বিল্ডিংয়ে স্থাপিত LAN গুলােকে সংযুক্ত করতে CAN ব্যবহৃত হয়। এর বিস্তৃতি 1 থেকে 5 কিলােমিটার দূরত্ব পর্যন্ত হতে পারে। ট্রান্সমিশন মিডিয়া হিসেবে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল, কো-এক্সিয়াল ক্যাবল, অপটিকাল ফাইবার ক্যাবল বা রেডিও ওয়েভ ব্যবহৃত হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের মতাে বড় অফিস কমপ্লেক্সের একাধিক বিল্ডিংয়ের LAN ব্যবহারকারীদের কাজের সমন্বয়ের জন্য কিংবা ব্যয়বহুল এক বা একাধিক পেরিফেরাল ডিভাইস অনেক ব্যবহারকারীর ব্যবহারের জন্য CAN (Corporate Area Network)।ব্যবহার করা হয়। যেমন - Googleplex এবং Microsoft's campus এর নেটওয়ার্ক।
মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক (Metropolitan Area Network - MAN): মেট্রোপলিটন এরিয়া বলতে একটি শহর বা একটি ছােট অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত এলাকাকে বােঝায়, এরকম একটি বড় এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কতকগুলাে কম্পিউটার নিয়েই MAN গঠিত হয়। MAN-এর বিস্তৃতি LAN-এর চেয়ে বড় কিন্তু WAN-এর চেয়ে ছােট হয়। প্রায়।100 কিলােমিটার দূরত্ব পর্যন্ত MAN-এর নেটওয়ার্ক কার্যকর থাকতে পারে। ট্রান্সমিশন মিডিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়।টেলিফোন লাইন, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, রেডিও ওয়েভ বা টেরিস্ট্রিয়াল মাইক্রোওয়েভ।এ ধরনের নেটওয়ার্কের ডেটা প্রবাহের গতি 10 Mbps থেকে 10 Gbps পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত বড় ধরনের সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যাংক নিজেদের কাজের সুবিধার্থে MAN গড়ে তােলে। LAN-এর তুলনায় MAN ডিজাইন করা জটিল এবং বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। ইন্টারনেট এবং এর সাথে সম্পর্কিত প্রটোকলসমূহের ব্যাপক উন্নতির ফলে বর্তমানে নতুনভাবে MAN তৈরি করা হয় না বললেই চলে।
ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (Wide Area Network - WAN) : ওয়াইড এরিয়া বলতে যা বােঝানাে হয় তা হলাে বড় একটি এলাকাজুড়ে তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থা। একটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল অথবা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কম্পিউটারের মধ্যে গড়ে তােলা নেটওয়ার্কই ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বা WAN নামে পরিচিত। বিভিন্ন শহরে।গড়ে তােলা LAN বা MAN-এর মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি করে WAN গঠন করা হয়। WAN-এর কার্যপ্রণালি এবং এতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি স্বভাবতই LAN-এর তুলনায় জটিল হয়। এই নেটওয়ার্ক সিস্টেমের ট্রান্সমিশন মিডিয়া হিসেবে।টেলিফোন লাইন, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, রেডিও ওয়েভ, টেরিস্ট্রিয়াল বা স্যাটেলাইট মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের নেটওয়ার্কের ডেটা প্রবাহের গতি 100 Mbps থেকে 100 Gbps পর্যন্ত হতে পারে।
LAN,MAN,WAN এর পার্থক্য এবং বৈশিষ্ট্য গুলো এক নজরেঃ
LAN;
১ঃ অত্যন্ত সীমিত এলাকা নিয়ে গঠিত।নেটওয়ার্ক, তাই এর নামকরণ করা হয়েছে Local Area Network বা LAN.
২ঃবিস্তৃতি সর্বোচ্চ 1 কি.মি. এর মধ্যে হয়ে থাকে।
৩ঃতারযুক্ত মাধ্যম ব্যবহৃত হয়।যেমন- টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল,অপটিক্যাল ফাইবার, কো-এক্সিয়াল ক্যাবল ব্যবহৃত হয়।
৪ঃএকক নেটওয়ার্ক।
৫ঃ ব্যয় তুলনামূলক অনেক কম।
৬ঃডেটা প্রবাহের গতি 10 Mbps থেকে 100 Mbps পর্যন্ত হতে পারে।
MAN;
১ঃএকটি শহরের মতাে বিস্তৃত এলাকা নিয়ে গঠিত নেটওয়ার্ক, তাই এর নামকরণ করা হয়েছে Metropolion Area Network বা MAN ।
২ঃ বিস্তৃতি প্রায় 100 কি.মি. দূরত্ব পর্যন্ত হয়ে থাকে।
৩ঃতারযুক্ত ও তারবিহীন উভয় মাধ্যমই ব্যবহৃত হয়।
৪ঃএকাধিক LAN সংযুক্ত করে গঠিত নেটওয়ার্ক।
৫ঃব্যয় LAN অপেক্ষা বেশি।
৬ঃএ ধরনের নেটওয়ার্কের ডেটা প্রবাহের গতি 10 Mbps থেকে 10 Gbps পর্যন্ত হতে পারে।
WAN
১ঃএর বিস্তৃতি নির্দিষ্ট সীমারেখা দিয়ে আবদ্ধ নয়, তাই এর নামকরণ করা হয়েছে Wide Area Network বা WAN ।
২ঃ বিস্তৃতি 100 কি.মি. এর বেশি বা সারা পৃথিবীব্যাপী হয়ে থাকে।
৩ঃতারযুক্ত ও তারবিহীন উভয় মাধ্যমই ব্যবহৃত হয়।
৪ঃ বিপুল সংখ্যক LAN ও MAN সংযুক্ত করে গঠিত নেটওয়ার্ক।
৫ঃ ব্যয় LAN ও MAN অপেক্ষা অনেক বেশি।
৬ঃডেটা প্রবাহের গতি 100 Mbps থেকে 100 Gbps পর্যন্ত হতে পারে।
নেটওয়ার্কের মালিকানার ভিত্তিতে : নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারগুলাের মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১. পাবলিক নেটওয়ার্ক (Public Network)
২. প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (Private Network)
পাবলিক নেটওয়ার্ক (Public Network) : যে নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত নয় এবং যেকোনাে সময় যেকোনাে কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারে, তাকে পাবলিক নেটওয়ার্ক বলে। এ ধরনের নেটওয়ার্ক পরিচালিত হয়।অনেক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে। WAN বা ইন্টারনেট এ ধরনের নেটওয়ার্কের উদাহরণ।
প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (Private Network): যে নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত এবং যেকোনাে কম্পিউটারকে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়ােজন হয়, তাকে প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বলে। এ ধরনের নেটওয়ার্ক পরিচালিত হয় একটি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে। PAN, LAN বা CAN এ ধরনের নেটওয়ার্ক।
অসাধারণ লিখেছেন দাদা, অনেক অনেক ধন্যবাদ
https://larnbd.com/
মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।লেখাপড়া সহ বিভিন্ন আর্টিকেল নিয়মিত পড়ার জন্য আমাদের সাথে থাকুন।
https://sikkaloybd.blogspot.com
Pls my site visit... আপনার পোষ্ট পড়ে ভাল লাগলো,