ভাব সম্প্রসারণ: চন্দ্র কহে বিশ্বে আলাে দিয়েছি ছড়ায়ে কলঙ্ক যা আছে তাহা আছে মাের গায়ে
ভাবসম্প্রসারণঃচন্দ্র কহে, বিশ্বে আলাে দিয়েছি ছড়ায়ে কলঙ্ক যা আছে তাহা আছে মাের গায়ে।
মূলভাব;যারা মহৎ পরার্থপর, পরের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ, তারা অন্যের সুখ-সমৃদ্ধির ব্যবস্থা করে যত দুঃখ-কষ্ট গ্লানির বােঝা নিজের কাঁধে তুলে নেন।
ভাব-সম্প্রসারণ:পৃথিবী স্বার্থান্ধ মানুষে পরিপূর্ণ।এখানে অধিকাংশ মানুষই সবসময় নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য উর্ধ্বশ্বাসে ছুটাছুটি করে।কিন্তু তারা জানে না যে, মানবজীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সেটি নয়। মানুষ যদি পরের জন্য কিছু করতে না পারে তবে তার জীবনের কোনাে মূল্য থাকে না। পৃথিবীতে যারা নিজের স্বার্থের জন্য সম্পদের পাহাড় বানায় একসময় তারা কোথায় হারিয়ে যায়-তার কোনাে হদিস থাকে না। পৃথিবীতে একসময় তাদের নাম টিকে থাকে না। কিন্তু যারা মহৎ, উদার, পরহিতব্রতী তারা নিজেদের বিলিয়ে দেন জগৎ জীবনের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য। ব্যক্তিগত জীবনের এবং সামষ্টিক জীবনের যত দুঃখ-কষ্ট- যন্ত্রণা- নিন্দা-কলঙ্ক-গ্লানি তারা একাকী বহন করেন।তারা সবসময় চেষ্টা করেন যে, মানুষ যেন কোনাে কষ্ট না পায়। সব বিষজ্বালা নিজে ধারণ করে বিশ্ব মানবকে তারা দান করেন পরম প্রশান্তি। সেই প্রশান্তিতে মানুষের জীবন হয় সুখী ও সমৃদ্ধ। তাদের জীবনের দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা- গ্লানি দূর হয়ে যায়। জীবন হয়ে যায় উজ্জ্বল সম্ভাবনার আলােয় আলােকিত। আকাশের চাঁদ যেমন তার কলঙ্ককে নিজের কাছে রেখে স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নার নির্মল প্রভা দিয়ে সমস্ত জগতের মলিনতা ও অন্ধকার দূর করে দেয়, মহামনীষীরাও তেমনি যত দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা নিজে সয়ে অন্যদের জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরিয়ে দেন। তারা অন্যের মুক্তির জন্য নিজে অপরিমেয় দুঃখ-কষ্ট ভােগ করেন, অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করেন। তারা অপরিসীম ধৈর্য দিয়ে সবকিছু সয়ে যান। হৃদয়ের বিশালতা এবং মহত্ত্বের বিরাট শক্তি দিয়ে তারা জয় করেন সব সংকীর্ণতা, ক্ষুদ্রতা ও মলিনতাকে। দৃষ্টান্ত আমাদের প্রিয়নবী বিশ্বমানবের যুক্তির পথদ্রষ্টা হয়রত মুহাম্মদ (স)। তিনি নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে, অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করে বিশ্বের মানুষকে ইহকাল এবং পরকালের সব দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্ত করতে আমৃত্যু সংগ্রাম-সাধনা করেছেন। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি কত মার খেয়েছেন, তবু হাল ছাড়েননি। তাঁর মতাে আরাে অনেক মহামানব পৃথিবীর মানুষের কল্যাণের জন্য আজীবন সাধনা করে গেছেন।যেমন : গৌতম বুদ্ধ, যীশু খ্রিষ্ট, শ্রীচৈতন্য দেব প্রমুখ মহাপুরুষ। শুধু তারা নন, অনেক শিল্পী-সাহিত্যিক, জ্ঞানী-গুণী, বিজ্ঞানী, দার্শনিক,রাষ্ট্রনায়ক, স্বাধীনতার সংগ্রামে জীবনদাতা বীর যােদ্ধা পৃথিবীতে অনেককিছু করে গেছেন কেবল মানুষের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য। অথচ তাদের নিজেদের স্বার্থে তারা তেমন কিছুই করেন নি। কিন্তু তারপরও তারা তাদের পথ থেকে সরে আসেন নি।
মূলভাব: যারা প্রকৃতপক্ষে মানবতাবােধসম্পন্ন মানুষ, যারা উদার, মহৎ ও পরােপকারী তারা কখনাে নিজের স্বার্থ খোঁজেন না। তারা চাঁদের মতােই সব কলঙ্ক-গ্লানি নিজের গায়ে মেখে মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য সংগ্রাম করে যান। আর এখানেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা।