ভাব সম্প্রসারণ: ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানাে রুটি
ভাব সম্প্রসারণ:ক্ষুধার ধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়।
মূলভাব :ক্ষুধা মানুষের প্রধান জৈবিক চাহিদা। এ চাহিদা মেটাতে না পারলে জগতের কোনাে সৌন্দর্যই ভালাে লাগে না।
ভাব-সম্প্রসারণ : মানুষ স্বভাবতই সৌন্দর্যপিপাসু। বিশেষত, যারা কবি-সাহিত্যিক তারা সুন্দরের পাগল, কল্পনাবিলাসী। তাদের কাব্য সৃষ্টির মূল প্রেরণা আসে সৌন্দর্য ও কল্পনার জগতকে কেন্দ্র করে। প্রকৃতিতে বিরাজমান শ্যামল শ্ৰী, বন-বনানী, নদনদী, পাহাড়-পর্বত,ঝরনা, সমুদ্র, চন্দ্র-সূর্য প্রভৃতি তাদের মনে কাব্য সৃষ্টির প্রেরণা যােগায়। তারা ঋতুরাজ বসন্তকে পেয়ে গেয়ে ওঠেন-“আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে এত বাঁশি বাজে।' অথবা বলেন, আজ জ্যোৎস্না রাতে, সবাই গেছে বনে।” কিন্ত এ হচ্ছে ভাবের জগৎ, কল্পনার
জগৎ। বাস্তবতার সাথে এ জগতের মিল খুব একটা নেই। বাস্তব জীবন বড় কঠিন, বড় রূঢ় ও নিষ্ঠুর। জগতের সর্বত্র স্বার্থপর মানুষের বিচরণ। সেখানে দুঃখীজনের দুঃখ দেখার কেউ নেই। সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা আশ্রয়হীন, বস্ত্রহীন, শিক্ষা-চিকিৎসা পাচ্ছে না।এমনকি জীবনধারণের সবচেয়ে প্রয়ােজনীয় মৌলিকতম উপাদান- দুমুঠো অন্নও তারা পেট পুরে খেতে পাচ্ছে না। তাদের কাছে কল্পনার জগৎ মধুর হয় না। তারা পূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় কল্পনার সমুদ্রে সাঁতার কাটতে পারে না। তাদের মাথায় থাকে শুধু ক্ষুধার চিন্তা। তাদের কাছে তখন পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে যায় ঝলসানাে রুটির মতাে। কারণ ক্ষুধিতের ক্ষুধার কাছে ঝলসানাে রুটিই পরম কাক্ষিত বস্ত। কবির মতাে সৌন্দর্যচিন্তা তার কাছে তখন একেবারেই অনর্থক। ক্ষুধা পেটে থাকলে সুন্দর সুন্দর কাব্যও হয়ে ওঠে এলােমেলাে গদ্যময়। জীবনের সব ছন্দ, সব সৌন্দর্য, সব ভালাে লাগা ভালােবাসা তখন হারিয়ে যায়। জীবন হয়ে পড়ে বিবর্ণ, সৌন্দর্যহীন; আর সব সৌন্দর্যই হয়ে যায় ধূসর। কেবল টিকে থাকে একটি কথা- “বুভুক্ষিতং ন প্রতিভাতি কিঞিৎ।” অর্থাৎ ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে কোনাে সৌন্দর্যই প্রতিভাত হয় না।
মন্তব্য : ক্ষুধা হলাে সর্বগ্রাসী অগ্নি । তার কাছে কোনাে সৌন্দর্যই সুন্দর থাকে না; পৃথিবীর সব পদ্যই সেখানেই গদ্য হয়ে যায়, সব ছন্দেরই সেখানে পতন ঘটে। পূর্ণিমার চাদও হয়ে যায় ঝলসানাে রুটির মতাে।