ভাব সম্প্রসারণ কর্তব্যের কাছে ভাই বন্ধু কেহই নাই
ভাব সম্প্রসারণ: কর্তব্যের কাছে ভাই বন্ধ কেহই নাই।
মূলভাব : মানবজীবনের সাফল্যের পেছনে প্রধান রহস্য হচ্ছে কর্তব্যকর্মটি সঠিকভাবে করে যাওয়া। দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিক সময়ে,সঠিকভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে অনেক প্রতিকূল অবস্থা মােকাবেলা করতে হয়। সেখানে দৃঢ়চিত্তে সব বন্ধন ছিন্ন করে এগিয়ে যেতে হয়।কর্তব্যের স্থান সব মানবিক সম্পর্ক ও স্বার্থের ওপরে।
ভাব-সম্প্রসারণ : একজন বিচক্ষণ ও দায়িত্ববান ব্যক্তির কাছে অন্যান্য যে কোনাে বিষয়ের চেয়ে ওপরে স্থান হচ্ছে তার দায়িত্ব ও কর্তব্যবােধের। একজন দায়িত্ববান ব্যক্তি তার কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে ক্ষুদ্রতর স্বার্থ তথা ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করেন।
নিরপেক্ষভাবে তার দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ তিনি। তিনি মনে করেন নিরপেক্ষভাবে না হলে সঠিকভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন সম্ভব নয় । কর্তব্যপরায়ণ মানুষ কোনাে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে স্বার্থান্ধ হয়ে থাকেন না। সবার উপকারই তার লক্ষ্য। এ পথে আসে নানা বাধা বিপত্তি।
কখনাে এতে থাকে ব্যক্তিস্বার্থ। কখনাে অপরের স্বার্থের বিরুদ্ধে কর্তব্য পালন করতে হয়। কর্তব্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে মানবিক সম্পর্কের স্বার্থ। বন্ধু-বান্ধবের স্বার্থ যেমন তাকে দেখতে হয়, তেমনি আত্মীয়-স্বজনের স্বার্থও দেখতে হয় । কিন্তু ভাই বা বন্ধুর স্বার্থকে বড় করে দেখতে গিয়ে যদি কর্তব্য পালন বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে কর্তব্যপরায়ণ মানুষ সে স্বার্থকে উপেক্ষা করে কর্তব্য পালনের ওপরই গুরুত্ব দেয় ।ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই সৎ ও যােগ্য নেতৃত্ব তাদের প্রিয়জনের স্নেহ-ভালােবাসার চেয়েও কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অধিক কঠোর হয়েছেন। ফলে তাদের সেই দায়িত্ব ও কর্তব্যবােধের পরিচয় কালের যাত্রায় চির অম্লান হয়ে আছে। সত্যিকার দায়িত্ববান লােকের কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে স্থান পায় ন্যায়নিষ্ঠা, সততা ও বৃহত্তর কল্যাণ কামনা।কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি ইদানীং অনেকেই তাদের দায়িত্বপালনে সচেষ্ট নয়; বরং স্বার্থান্ধ হয়ে নিজের আত্মীয়-স্বজনের সেবা করছে। পক্ষপাতহীনভাবে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে না, স্বজনপ্রীতি করতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে দুনীতির। এ ধরনের মানসিকতা মানবসমাজ ও দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
মন্তব্য: সুন্দর ও সুষ্ঠ সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে একজন মানুষকে অবশ্যই হতে হবে দায়িত্ব ও কর্তব্য সচেতন। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্য কারাে দ্বারা প্রভাবিত হলে সুষ্ঠভাবে সে তার দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। তাই কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে সব সংকীর্ণতাকে পরিহার করতে হবে। পক্ষপাতহীনভাবে কাজ করে যেতে হবে। তবেই সঠিক কর্তব্যটি সম্পাদন সম্ভব হবে।