ভাবসম্প্রসারন উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে
ভাবসম্প্রসারন:
উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে।
মূলভাব ; মৌলিক চরিত্র বিশ্লেষণে মানবসমাজে তিনটি শ্রেণি সুস্পষ্ট লক্ষণীয়— উত্তম, মধ্যম ও অধম । উত্তম হলাে শ্রেষ্ঠ, অধম নিকৃষ্ট।মধ্যম চরিত্রের লােকই সমাজে বেশি, যারা এ উভয় শ্রেণি থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করেন।
ভাব-সম্প্রসারণ : মহৎ হদয় ও চরিত্রশক্তির অধিকারী যারা, তারাই নিজের সাথে নিজেকে একাত্ম করে নিতে পারে। তাদের হৃদয় বিস্তীর্ণ,বিচারবােধ সংকীর্ণতামুক্ত। তাই ইতর-ভদ্র, উত্তম-অধম সবার সাথেই তারা নির্বিচারে সংযােগ রক্ষা করে থাকে। হীনজনের সংস্পর্শে থাকলেও তাদের মনে কোনাে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না। তাদের শুদ্ধতা, অমলিনতা সতত রক্ষা কবচের মতাে তাদের সাথেই থাকে।
হীনজনের সান্নিধ্যে তাদের কোনাে রকম ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কা থাকে না। তাই সমাজের সর্বস্তরের, সব ধরনের মানুষের সাথে তারা অকপটে আন্তরিক সম্পর্ক রচনা করে চলেন। আত্মবিশ্বাস আর চারিত্রিক শুদ্ধতার বর্মে আবৃত হৃদয়ে মানব সংসারে সর্বক্ষেত্রে তাদের অবাধ বিচরণ। অন্যদিকে আত্মপ্রত্যয় শুদ্ধতা ও পবিত্রতার পরে যারা সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনে অক্ষম তাদের কথা ভিন্নতর। এদের উত্তম শ্রেণির সমধর্মী মানসিক শক্তি নেই। উত্তম আর অধম শ্রেণির মানুষের মধ্যকার যে সংযােগ সরণি অনায়াসে গড়ে ওঠে, মধ্যবর্তী শ্রেণির
মানুষের ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। তারা প্রতি ক্ষণে নিজেদের স্বাতন্ত্র বাঁচিয়ে চলে; অধম হীনজনের সংস্রব থেকে দূরে থাকে, যদি তাদের সংস্রবে যেটুকু তাদের আছে তাও হারাতে হয় সেই আশঙ্কা জাগে মনে। ফলে তাদের মন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। জীবনের সর্বস্তরে
তারা স্বতন্ত্রভাবে চলতে প্রয়াসী হয়। উত্তমের সাথে বন্ধন রচনার মানসিক শক্তি তাদের নেই, অন্যদিকে অধমের সাহচর্যে থাকতেও তাদের ভয়-ভীতি অপরিমেয়। তাই অতি সতর্কতার কারণে তাদের শেষপর্যন্ত মাঝারি হয়েই থাকতে হয়। তারা এ কারণে জীবনের কোনাে ক্ষেত্রেই পরিপূর্ণ সার্থকতা অর্জন করতে পারে না।
মন্তব্য ; মূলত সংকীর্ণতা মধ্যম শ্রেণিকেই বেশি ঘিরে থাকে। উত্তম শ্রেণি ও অধম শ্রেণির এ সংকীর্ণতা প্রবলভাবে কম। আমাদের এ মানসিকতাকে দ্রুত পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হবে।