অত্যাশ্চর্যক চিকিৎসক ড. ইয়েল্লোপ্রাগদা সুব্বা রাও যার আবিষ্কার আজও বাচিয়ে দেয় লাখো মানুষের প্রাণ
আজকাল অসুস্থ রােগীকে জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করবার জন্য বা শরীরে ওই জীবাণুকে প্রতিরােধ করবার জন্য ডাক্তাররা বেশ দ্রুততার সঙ্গেই অ্যান্টিবায়ােটিকটির নাম লিখে দেন। এইসব অ্যান্টিবায়ােটিক ওষুধের মধ্যে সুবা মাইসিনের নাম সকলেরই জানা।কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না, ওই আশ্চর্য শক্তিশালী ওষুধটির আবিষ্কারক একজন প্রতিভাবান ভারতীয় চিকিৎসক ।
নাম ডাক্তার ইয়েল্লোপ্ৰাগদা সুব্বা রাও (Yellapragada Subbaro)। 'সুব্বা’ শব্দটাকেই ধরে রাখা হয়েছে ‘সুবা' শব্দটির মধ্যে। কেবলমাত্র সুবা মাইসিন নয়, ডাক্তার সুব্বা রাও আরাে অনেক মূল্যবান ওষুধ আবিষ্কার করে গেছেন।কোষের শক্তির উৎস হিসাবে অ্যাডেনোসিন ট্রাইফসফেট আবিষ্কার করেছিলেন, ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য মেথোট্রেক্সেট তৈরি করে এবং টেট্রাসাইক্লাইন এবং ক্লোরটেট্রাইসাইক্লিন অ্যান্টিবায়োটিকের বিস্তৃত বর্ণালী আবিষ্কার করে। ইয়েলপ্রাগদা সাববারো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মেডিসিন রিসার্চ সেন্টারে কর্মরত ছিলেন।
আমাদের লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়, যখন আমরা জানতে পারি যে, এই প্রতিভাবান চিকিৎসক উপযুক্ত চাকুরি ও গবেষণার সুযােগ না পেয়ে বাধ্য হয়ে ভারতবর্ষের মাটি থেকে পা তুলে নেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিতে বাধ্য হন।ডাক্তার সুব্বা রাও’র জন্ম মাদ্রাজে। খুবই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাবা সরকারী অফিসের কেরাণী। সংসারে নিত্য অনটন। তার উপর বাড়ির কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে মাথায় যেন তাদের আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ডাক্তার ও ওষুধের বাড়তি খরচ চালানাে পরিবারের কর্তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। অথচ সুব্বার ছােট ভাই আক্রান্ত হল দুরারােগ্য স্প্রু অসুখে ।
সুব্বা তখন কলেজে আই.এস.সি পড়ছেন। ছােট ভাইকে খুবই স্নেহ করতেন। মরিয়া হয়ে তারা তাদের সমস্ত সঞ্চয়, গহনা, ইত্যাদি বিক্রি করে দিয়ে ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন। মাদ্রাজ শহরের তাবড় তাবড় ডাক্তাররা চেষ্টা করলেন সুব্বার ভাইকে সারিয়ে তুলতে। কিন্তু পারলেন না মাত্র ৮ দিনের ব্যবধানে তার বড় ভাই এবং ছোট ভাই দুজন মারা এই স্প্রু রোগে আক্রান্ত হয়ে।কারন যেহেতু স্প্রু রোগের কোন ওষুধই তখন আবিষ্কার করা যায় নি।
ওই একটি ঘটনা তরুণ সুব্বারাওয়ের বুকে যেন আগুন জ্বালিয়ে গেল। তিনি শপথ নিলেন আমি এই স্প্রু রােগের ওষুধ আবিষ্কার করবই।আর এই দৃঢ়তার জোরেই তিনি আবিস্কার করলেন 'স্প্রু' রোগ নিরাময়ের জন্য ফলিক অ্যাসিড। সুব্বা রাও আত্মীয়দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আর্থিক সাহায্য ভিক্ষে করতে থাকেন। অনেক ধনীর গৃহে গিয়েও হাত পাতলেন। এইভাবে সংগৃহীত হল কিছু টাকা । ওই টাকা নিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলেন ইয়েল্লাপ্রাগদা সুব্বারাও ।ডাক্তারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হলেন বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে। তারপর তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানালেনঃ আমাকে এমন একটি চাকুরি দিন যেখানে আমি স্বচ্ছন্দে ও উপযুক্ত পরিবেশে গবেষণাও করতে পারি।
সরকার তাঁকে দিলেন মেডিকেল কলেজে ডেমনস্ট্রেটারের পদ।কিন্তু স্প্রু রােগ নিয়ে উন্নত গবেষণা চালাবার মতোন পরিবেশ তাে সেখানে নেই।
সুব্বা রাও তেমন সময়ও পাচ্ছিলেন না।ফলে তিনি মরিয়া হয়ে উঠলেন !
কোনােক্রমে কিছু টাকা সংগ্রহ করে পাড়ি জমালেন লন্ডনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ইংল্যান্ডেও গবেষণার তেমন সুযোগ পেলেন না। এক বন্ধু তাকে পরামর্শ দিলেন, 'এখানে সময় নষ্ট না করে অ্যামেরিকা যাও । একমাত্র ওই দেশেই বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণা চালাবার জন্য সেরা পরিবেশ পেয়ে থাকেন।উপায়ান্তর না দেখে ডাঃ সুব্বা রাও লন্ডন ত্যাগ করে রওনা দিলেন নিয়ইয়র্কের উদ্দেশ্যে।আজ ভাবলে অবাক হতে হয়, সেই দিন এই তরুণ ভারতীয় চিকিৎসক বিজ্ঞানীর পকেটে ছিল মাত্র পঁচিশটি ডলার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পা রেখে সুব্বা রাও চোখে যেন সর্ষের ফুল দেখছেন। একেবারে অপরিচিত দেশ। কেউ তাঁকে পাত্তা দিচ্ছেন না পেটের তাগিদে সুব্বা রাওকে চাকরি নিতে হল কারখানায়। কিন্তু হার মানবার লােক তাে তিনি নন। তিনি তার গবেষণাপত্র নিয়ে হাজির হলেন একজন সুশিক্ষিত সেনেটরের বাড়িতে। সেনেটর বুঝলেন, এই তরুণ ভারতীয়টি প্রতিভার এক স্ফুলিঙ্গ। তিনি সুব্বা রাওকে পরামর্শ দিলেন। অ্যামেরিকায় তুমি সবরকম সুবিধাই পাবে। তবে তােমাকে এ দেশের নাগরিকত্ব নিতে হবে। বলাে, রাজি আছ কি না?
সুব্বা রাও বাধ্য হয়ে সম্মতি দিলেন। মার্কিন দেশের নাগরিকত্ব নেবার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর সামনে যেন সুযােগ ও সুবিধার সব কয়টি দরজা খুলে গেল । গবেষণায় তন্ময় হয়ে গেলেন ডাঃ সুব্বা রাও। আবিষ্কৃত হল, রােগের ওষুধ। আবিষ্কার করলেন আরাে এমন সমস্ত ওষুধ, যা মানুষের পরমায়ুকে দীর্ঘতর করল। মার্কিন জনগণের নিকট তিনি এক বিস্ময়কর প্রতিভা। প্রায় সকলেরই নিকট তিনি ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্র। দেশের সমস্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা তাঁর অভিমতের গুরুত্ব দিতেন সর্বাধিক।
পৃথিবীতে আর কোনাে চিকিৎসক, বিজ্ঞানী তাঁর মতােন অত অধিক সংখ্যক ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেননি।
কিন্তু অত্যাধিক পরিশ্রমে ডাঃ সুব্বা রাওয়ের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে এবং মাত্র বাহান্ন বৎসর বয়সে এই আশ্চর্য প্রতিভাবান ভারতীয়টির তিরােধান ঘটে।তিনি ১২ই জানুয়ারি ১৮৯৫ সালে অন্ধপ্রদেশে জন্মগ্রহন করেন এবং ৮ই আগস্ট ১৯৪৮ এ নিউইয়র্কে মারা যান।
সুব্বা রাওয়ের মৃত্যুতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
সত্যি কথা বলতে কি, সুব্বা রাওয়ের মৃত্যুর পর পৃথিবীতে বড় ধরনের কোন ওষুধই আবিষ্কার হচ্ছে না।
Dr.Yellapragada Subbarow |
সুব্বা তখন কলেজে আই.এস.সি পড়ছেন। ছােট ভাইকে খুবই স্নেহ করতেন। মরিয়া হয়ে তারা তাদের সমস্ত সঞ্চয়, গহনা, ইত্যাদি বিক্রি করে দিয়ে ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন। মাদ্রাজ শহরের তাবড় তাবড় ডাক্তাররা চেষ্টা করলেন সুব্বার ভাইকে সারিয়ে তুলতে। কিন্তু পারলেন না মাত্র ৮ দিনের ব্যবধানে তার বড় ভাই এবং ছোট ভাই দুজন মারা এই স্প্রু রোগে আক্রান্ত হয়ে।কারন যেহেতু স্প্রু রোগের কোন ওষুধই তখন আবিষ্কার করা যায় নি।
ওই একটি ঘটনা তরুণ সুব্বারাওয়ের বুকে যেন আগুন জ্বালিয়ে গেল। তিনি শপথ নিলেন আমি এই স্প্রু রােগের ওষুধ আবিষ্কার করবই।আর এই দৃঢ়তার জোরেই তিনি আবিস্কার করলেন 'স্প্রু' রোগ নিরাময়ের জন্য ফলিক অ্যাসিড। সুব্বা রাও আত্মীয়দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আর্থিক সাহায্য ভিক্ষে করতে থাকেন। অনেক ধনীর গৃহে গিয়েও হাত পাতলেন। এইভাবে সংগৃহীত হল কিছু টাকা । ওই টাকা নিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলেন ইয়েল্লাপ্রাগদা সুব্বারাও ।ডাক্তারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হলেন বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে। তারপর তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানালেনঃ আমাকে এমন একটি চাকুরি দিন যেখানে আমি স্বচ্ছন্দে ও উপযুক্ত পরিবেশে গবেষণাও করতে পারি।
সরকার তাঁকে দিলেন মেডিকেল কলেজে ডেমনস্ট্রেটারের পদ।কিন্তু স্প্রু রােগ নিয়ে উন্নত গবেষণা চালাবার মতোন পরিবেশ তাে সেখানে নেই।
কোনােক্রমে কিছু টাকা সংগ্রহ করে পাড়ি জমালেন লন্ডনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ইংল্যান্ডেও গবেষণার তেমন সুযোগ পেলেন না। এক বন্ধু তাকে পরামর্শ দিলেন, 'এখানে সময় নষ্ট না করে অ্যামেরিকা যাও । একমাত্র ওই দেশেই বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণা চালাবার জন্য সেরা পরিবেশ পেয়ে থাকেন।উপায়ান্তর না দেখে ডাঃ সুব্বা রাও লন্ডন ত্যাগ করে রওনা দিলেন নিয়ইয়র্কের উদ্দেশ্যে।আজ ভাবলে অবাক হতে হয়, সেই দিন এই তরুণ ভারতীয় চিকিৎসক বিজ্ঞানীর পকেটে ছিল মাত্র পঁচিশটি ডলার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পা রেখে সুব্বা রাও চোখে যেন সর্ষের ফুল দেখছেন। একেবারে অপরিচিত দেশ। কেউ তাঁকে পাত্তা দিচ্ছেন না পেটের তাগিদে সুব্বা রাওকে চাকরি নিতে হল কারখানায়। কিন্তু হার মানবার লােক তাে তিনি নন। তিনি তার গবেষণাপত্র নিয়ে হাজির হলেন একজন সুশিক্ষিত সেনেটরের বাড়িতে। সেনেটর বুঝলেন, এই তরুণ ভারতীয়টি প্রতিভার এক স্ফুলিঙ্গ। তিনি সুব্বা রাওকে পরামর্শ দিলেন। অ্যামেরিকায় তুমি সবরকম সুবিধাই পাবে। তবে তােমাকে এ দেশের নাগরিকত্ব নিতে হবে। বলাে, রাজি আছ কি না?
সুব্বা রাও বাধ্য হয়ে সম্মতি দিলেন। মার্কিন দেশের নাগরিকত্ব নেবার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর সামনে যেন সুযােগ ও সুবিধার সব কয়টি দরজা খুলে গেল । গবেষণায় তন্ময় হয়ে গেলেন ডাঃ সুব্বা রাও। আবিষ্কৃত হল, রােগের ওষুধ। আবিষ্কার করলেন আরাে এমন সমস্ত ওষুধ, যা মানুষের পরমায়ুকে দীর্ঘতর করল। মার্কিন জনগণের নিকট তিনি এক বিস্ময়কর প্রতিভা। প্রায় সকলেরই নিকট তিনি ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্র। দেশের সমস্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা তাঁর অভিমতের গুরুত্ব দিতেন সর্বাধিক।
পৃথিবীতে আর কোনাে চিকিৎসক, বিজ্ঞানী তাঁর মতােন অত অধিক সংখ্যক ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেননি।
কিন্তু অত্যাধিক পরিশ্রমে ডাঃ সুব্বা রাওয়ের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে এবং মাত্র বাহান্ন বৎসর বয়সে এই আশ্চর্য প্রতিভাবান ভারতীয়টির তিরােধান ঘটে।তিনি ১২ই জানুয়ারি ১৮৯৫ সালে অন্ধপ্রদেশে জন্মগ্রহন করেন এবং ৮ই আগস্ট ১৯৪৮ এ নিউইয়র্কে মারা যান।
সুব্বা রাওয়ের মৃত্যুতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।