বায়ােইনফরম্যাটিক্স কি কাকে বলে ও সুবিধা অসুবিধা

একজন গরিব কৃষক সারের অভাবে গত বার তার ফলন ভালাে হয়নি। তাই এবার সরকার যখন সার বিতরণ করা শুরু করল তখন সে সার আনতে গেল। কিন্তু এবারও তার কপালে দুর্ভোগ নেমে এল। সে যে পরিমাণ সার আশা করেছিল তার তুলনায় বিঘাপ্রতি অনেক কম সার পেল। গনি মিয়া মন খারাপ করে বসে থেকে একটি উপায় বের করল। সে চিন্তা করল, যে পরিমাণ সার সে পেয়েছে, এতে তার সম্পূর্ণ জমিতে সার দেওয়া যাবে না। সে একটা উপায় বের করল যে, সে অন্য কৃষকদের মতাে সার ছিটিয়ে না দিয়ে পানিতে গুলে স্প্রে করে দেবে।
বায়োইনফরম্যাটিক্স
বায়োইনফরম্যাটিক্স
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, সে বছরই তার অন্যান্য কৃষকের তুলনায় বাম্পার ফসল তুলেছিল। এই ঘটনায় যখন চারদিকে তােলপাড় শুরু হলাে ঠিক তখনই বিজ্ঞানীরা গবেষণায় বসলেন। তারা ঘটনার সত্যতা যাচাই করলেন এবং গবেষণা করে বের করলেন যে, কী পরিমাণ জমিতে কতটুকু সার স্প্রে করলে ভালাে ফলন পাওয়া যাবে। মূলত এই কাজের জন্য তারা একটি ডেটাবেজ ভিত্তিক সফটওয়্যারের সাহায্যে জৈব রসায়নের নমুনা নিয়ে পরিসংখ্যানগতভাবে তথ্যটি বের করেছিলেন। এভাবে হিসাব করে বের করার পদ্ধতিকে বলা হয় বায়ােইনফরম্যাটিক্স ।

অর্থাৎ কম্পিউটারের সাহায্যে বায়ােলজিক্যাল ইনফরমেশন গ্রহণ করে পরিসংখ্যানের সাহায্যে ঘটনাটা ঘটার সম্ভাবনা বের করার পদ্ধতিই হলাে বায়াে-ইনফরম্যাটিক্স। যেকোনাে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে যে মৃতদেহগুলাে স্বজনদের কাছে ফেরত দেয়া হয়, তা কিন্তু বায়ােইনফরম্যাটিক্সের অংশ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।বায়ােইনফরম্যাটিক্স হলাে কম্পিউটার ও পরিসংখ্যান কৌশল ব্যবহার করে জৈব তথ্য বিশ্লেষণ করার প্রক্রিয়া, তথা কম্পিউটার ডেটাবেজ এবং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে জৈব গবেষণার ক্ষেত্রে বায়ােইনফরম্যাটিক্স একটি উন্নত আধুনিক পদ্ধতি যা জৈব গবেষণার কাজকে ত্বরান্বিত করে। এটি জৈব ডেটা বিশ্লেষণের টুলস বা উপাদান, কোনাে রীতিসিদ্ধ পদ্ধতি নয়।
বায়ােইনফরম্যাটিক্সের গঠন- চারটি ভিন্ন শাখার উপাদান ও কৌশলের সমন্বয়ে বায়ােইনফরম্যাটিক্স পদ্ধতি ও গঠিত। যেমন-
১. আণবিক জীববিদ্যা ও মেডিসিন : ডেটা উৎস বিশ্লেষণ করা।
২. ডেটাবেজ ; টেক্সট মাইনিং ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন।
৩. প্রােগ্রাম : উপাত্ত বিশ্লেষণ অ্যালগরিদম যার মাধ্যমে বায়ােইনফরম্যাটিক্স কঠোরভাবে সুনির্দিষ্ট করা হয়।
৪. পরিসংখ্যান : গণিত ও পরিসংখ্যানের সাহায্যে সম্ভাব্যতা যাচাই ।

বায়ােইনফরম্যাটিক্সের জন্য করণীয়-
১. জীববিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে হবে।
২. আগ্রহ রয়েছে এমন একটি বিষয় নির্বাচন করে তার ওপর গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়া।
৩. বায়ােইনফরম্যাটিক্স টুলসগুলাে অনুসন্ধান করে সে সম্পর্কে জানা।
৪. কম্পিউটার প্রােগ্রামিং ভাষা শেখা।
৫. কম্পিউটারে নির্বাচিত গবেষণা বিষয়টি পরীক্ষা চালানাে এবং অন্যান্য প্রােগ্রামিং কৌশল সম্পর্কে জানা।

☑ ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি বা VR প্রযুক্তি কি?

চাকরির ক্ষেত্রে বায়ােইনফরম্যাটিক্স:

Bioinformaticist : একজন বিশেষজ্ঞ যিনি কেবলমাত্র এটিই জানেন না যে, কীভাবে বায়ােইনফরম্যাটিক্স টুলসগুলাে ব্যবহার করতে হয়; বরং তিনি এটিও জানেন যে, কীভাবে টুলসগুলাের মধ্যে সমন্বয় (প্রােগ্রামিং কোড) সাধন করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ গাড়ি কারখানার মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার বিবেচনা করা যেতে পারে।

Bioinformatician : প্রশিক্ষিত কর্মী যে কিনা সাধারণ জ্ঞানের ভিত্তিতে বায়ােইনফরম্যাটিক্স টুলস গুলাে ব্যবহার করে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ গাড়ি কারখানার টেকনিশিয়ান বিবেচনা করা যেতে পারে।

বায়ােইনফরম্যাটিক্সের ব্যবহার : জীববিজ্ঞানের তথ্য সমস্যার সমাধানে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, তবে বিশেষ করে জিনােম সিকুয়েন্স, প্রােটিন সিকুয়েন্স ইত্যাদি গঠন উপাদানের ইলেকট্রনিক ডেটাবেজ গঠনে কম্পিউটার প্রযুক্তি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বায়ােমলিকুল ও জৈব পদ্ধতির ত্রিমাত্রিক পদ্ধতি প্রয়ােগের ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারিক বিশেষ বিশেষ কিছু ক্ষেত্র এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে-
১. মলিকিউলার মেডিসিন
২. জিনথেরাপি
৩. ওষুধ তৈরিতে
৪. বর্জ্য পরিষ্কারকরণে
৫. জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণায়
৬. বিকল্প শক্তির উৎস সন্ধানে এবং
৭. জীবাণু অস্ত্র তৈরিতে।

☑ রোবট ও রোবটিক্সের বিস্তারিত আলোচনা

বায়ােইনফরম্যাটিক্সের সুবিধা:

১. আণবিক বংশগতিবিদ্যার দৃশ্যমান অব-লােকনের সুযােগ দেয়।
২. পুনরাবৃত্তিমূলক এবং অপুনরাবৃত্তিমূলক বিপুল পরিমাণে তথ্য মজুদে সহায়তা করে।
৩. অ্যালগরিদমভিত্তিক ডেটা উত্তোলন (মাইনিং)।


বায়ােইনফরম্যাটিক্সের অসুবিধা:

১. চিকিৎসা এবং জেনেটিক তথ্যের দ্বারা গােপনীয়তা হারানাে।
২. জেনেটিক অথবা চিকিত্সসংক্রান্ত অনিয়মের কারণে মানুষের মধ্যে প্রভেদ সৃষ্টি।
৩. জৈব বৈচিত্র্যের ক্ষতি তথা জেনেটিকালি পরিবর্তিত ফসল বা গৃহপালিত পশুর উন্নয়ন উভয়ের মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্য কমিয়ে দিতে পারে।
৪. পরিচালনা ব্যয়বহুল।
bioinformatics
বায়ােমেট্রিক্স ও বায়োইনফরম্যাটিক্সের মধ্যে পার্থক্য:
বায়োমেট্রিক্স:
১. এটি এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে কোনাে ব্যক্তির দেহের গঠন ও আচরণগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে তাকে অদ্বিতীয়ভাবে চিহ্নিত করা হয়।
২. এটি জীবভিত্তিক তথ্যের পরিমাপ করে।
৩. গােপন বা গুরুত্বপূর্ণ কোনাে জায়গা বা তথ্যে অনধিকার প্রবেশ রক্ষার্থে এটি ব্যবহৃত হয়।
৪. এটি মানুষের আচার আচরণ, গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সঠিক মানুষকে শনাক্তকরণে ভূমিকা রাখে।

বায়ােইনফরম্যাটিক্স:
১. এটি একটি ইন্টারডিসিপ্লিনারি বিজ্ঞান যেখানে কম্পিউটার বিজ্ঞান, গণিত ও জীববিজ্ঞানের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বায়ােলজিকাল ডেটার কার্যকরী প্রয়ােগ ঘটানাে হয়।
২. উন্নত জীববিদ্যায় তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার নিশ্চিত।
৩. জীবের ডিএনএ, আরএনএ, প্রােটিন স্ট্রাকচার, মলিকুলার ইন্টারঅ্যাকশনের থ্রিডি মডেলিং ব্যবহৃত হয়।
৪. বায়োলজিকাল ডেটার গবেষণাতে ডেটার ব্যবহার, সংরক্ষণ ও পুনঃ ব্যবহারে ভূমিকা রাখে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url