ন্যানাে টেকনােলজি বা ন্যানো প্রযুক্তি কি এবং সকল তথ্য
এই নিবন্ধে আমরা যা জানবো-
☑ন্যানো টেকনোলজি (Nano Technology) কি ও কাকে বলে বা ন্যানো টেকনোলজি বলতে কি বোঝায়।
☑ন্যানো টেকনোলজির জনক কে।
☑ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার বা ব্যবহৃত হয় কোনটিতে।
☑ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে আমাদের উপকারে আসে ও এর সুবিধা অসুবিধা।
ন্যানাে মূলত পরিমাপের একক। গ্রিক শব্দ ন্যানাস থেকে ন্যানাে শব্দের উৎপত্তি । ন্যানাে প্রযুক্তি (টেকনােলজি) (Nano Technology) সম্পর্কে সর্বপ্রথম বক্তব্য প্রদান করেন আমেরিকান পদার্থবিদ রিচার্ড ফেম্যান ১৯৫৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর । তিনি তাঁর বক্তব্যে এমন একটি প্রক্রিয়ার কথা বর্ণনা করেন যার সাহায্যে প্রত্যেক স্বতন্ত্র অণু ও পরমাণু নিপুণভাবে বিকশিত হতে পারে তথা ব্যবহার করা যেতে পারে। এর জন্য প্রয়ােজন সুনির্দিষ্ট এক সেট সরঞ্জাম, যা আনুপাতিক হারে অন্য আরেকটি ছােট সেট তৈরি ও পরিচালনা করতে পারে। পরবর্তীকালে ১৯৪৭ সালে টোকিও ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সের বিজ্ঞানী নরিও তানিগুচি এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য প্রদান করে। তার মতে, “একটি অণু বা পরমাণু দ্বারা কোনাে পদার্থ পৃথককরণ, একীভূতকরণ কিংবা আকৃতি প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পরিবর্তন করণ করাই হলাে ন্যানাে প্রযুক্তি।”
১৯৮০ সালে কে এরিক ডেক্সলার, রিচার্ড ফেম্যানের মতামতের সাথে ভিন্ন মত প্রদান করেন। তাঁর মতে, “ন্যানাে প্রযুক্তি হলাে সম্ভাব্যতার সূত্রে নয়, বরং অণু ও পরমাণু স্বতন্ত্রভাবে নিয়ন্ত্ৰণবাদী।” মূলত এ সময় হতে এ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি ঘটতে থাকে। ন্যানাে-প্রযুক্তি হলাে ব্যবহারিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যা আমাদের কোনাে একটি স্বতন্ত্র পরমাণুর স্কেল হতে নতুন কোনাে বস্তুকে তৈরি করতে সক্ষম করে। অর্থাৎ এ প্রযুক্তির ফলে কোনাে উপকরণকে এতটাই ক্ষুদ্র করে নির্মাণ করা যায় যে, এর থেকে আর অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র করা সম্ভব নয়।
☑ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্তারিত আলোচনা।
☑ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিস্তারিত আলোচনা।
২০ বছর আগেও কেউ এমনটি চিন্তা করতে পারেনি যে, একটি মেমােরি স্টিকের মধ্যে সম্পূর্ণ এনসাইক্লোপিডিয়া সংরক্ষণ করা যাবে। আর বর্তমানে এটি আরও অবিশ্বাস্য যে, সম্পূর্ণ এনসাইক্লোপিডিয়া একটি চিপের মধ্যে সংরক্ষণ করা যাবে যার আকৃতি একটি ধূলিকণার আকৃতির সমান। তুমি যদি ১ মিটারকে ১ বিলিয়ন ভাগে ভাগ কর তবে তুমি ১ ন্যানাে পাবে। অথবা তুমি যদি একটি ব্যাকটেরিয়াকে ২০০ সমান ভাগে ভাগ কর তবে একটি ভাগ এক ন্যানাের সমান হবে। আর এটিই হলাে অ্যাটম স্কেল ন্যানাে-প্রযুক্তি। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যা নির্ভর করে ক্ষুদ্র বস্তুর উপর অর্থাৎ এর গঠন প্রকৃতি ন্যানাে-গঠন এবং পরমাণুর গঠনের মতাে।
একই ধরনের উপাদান আণবিক মাত্রার কার্যকর পদ্ধতির প্রকৌশল হলাে ন্যানাে টেকনােলজি বা ন্যানাে প্রযুক্তি। বর্তমানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পণ্য ব্যবহার করা হচ্ছে যা তৈরি করা হচ্ছে। ন্যানাে প্রযুক্তি কৌশল এবং টুলস (উপাদান) ব্যবহারের মাধ্যমে। পরিবেশ রক্ষার জন্য অণু বা পরমাণু স্কেলে কোনাে পদার্থকে সাধিত করে প্রযুক্তিতে উল্লেখযােগ্য পরিবর্তন এনেছে যাকে ন্যানাে প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প ও বিজ্ঞান বলা হয়। ন্যানাে প্রযুক্তিকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় তবে Environmental Protection Agency (EPI) কর্তৃক National Nanotechnology Initiative (NNI) এর সংজ্ঞা নিম্নোক্ত শর্তে গ্রহণীয়।
যখন কোনাে একটি বস্তুর কার্যক্ষমতা বাড়ানাের জন্য কোনাে বিশেষ প্রযুক্তি বা যন্ত্র ব্যবহার করে অণু বা পরমাণুগুলােকে ন্যানাে মিটার স্কেলে বা ন্যানাে পার্টিকেল রূপে পরিবর্তন করা হয় তখন সেই প্রযুক্তিকে ন্যানাে টেকনােলজি বলে।
ন্যানাে প্রযুক্তি দুটি পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়-
i. নিচ থেকে উপরে (Bottom Up) – ডিভাইস তৈরি করা হয় মলিকুলার কম্পােনেন্ট থেকে।
ii. উপর থেকে নিচে (Top Down) ন্যানাে অবজেক্ট তৈরি করা হয় লার্জার এন্টিটি থেকে।
☑ ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
☑ ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
ন্যানাে প্রযুক্তির প্রভাব- ন্যানাে প্রযুক্তির প্রভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যমান যেমন- কম্পিউটিং ও ডেটা সংরক্ষণে, পণ্য ও উৎপাদনে, স্বাস্থ্য ও ওষুধে, জ্বালানি ও যােগাযােগে।
১. কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে প্রসেসরের উন্নয়নে তথা প্রসেসর উচ্চ গতি, দীর্ঘস্থায়িত্ব, কম শক্তি খরচ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। একই সাথে ডিসপ্লে ও কোয়ান্টাম প্রযুক্তির মধ্যে উন্নতিতে সহায়তা করে থাকে।
২. খাদ্যশিল্পে- খাদ্যজাত দ্রব্য প্যাকেজিং-এর কাজে, খাদ্যে স্বাদ তৈরিতে, খাদ্যের গুণাগুণ রক্ষার্থে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ন্যানাে ম্যাটেরিয়াল তৈরির কাজে।
৩, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ন্যানাে-রােবট ব্যবহার করে অপারেশন করা যেমন- এনজিওপ্লাস্টি, সরাসরি রােগাক্রান্ত সেলে ওষুধ প্রয়ােগ করা, ডায়াগনােসিস করা যেমন- এন্ডােসকপি, এনজিওগ্রাম, কলােনােসকপি ইত্যাদি কাজে।
৪. জ্বালানি ক্ষেত্রে জ্বালানি উৎসের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ফুয়েল তৈরির কাজে যেমন হাইড্রোজেন আয়ন থেকে ফুয়েল তৈরি।
৫. যােগাযােগ ক্ষেত্রে হালকা ওজনের ও কম জ্বালানি খরচের গাড়ি তৈরিতে সহায়তা করে।
৬. খেলাধুলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার সামগ্রী যেমন ক্রিকেট/টেনিস বলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য, ফুটবল/গলফ বলের বাতাসের ভারসাম্য রক্ষার জন্য।
৭. রাসায়নিক শিল্পে সানস্ক্রিন ও ময়েশ্চারাইজার তৈরিতে ব্যবহৃত টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড (TiO,) এবং জিঙ্ক ডাই অক্সাইড (ZnO,) তৈরির কাজে, অ্যান্টি এজিং ক্রিম তৈরিতে।
☑ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি
☑ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি
ন্যানাে-প্রযুক্তি ও আয়- তােমরা কি বলতে পারবে, আমাদের দেশে আদৌ এ ধরনের কোনাে শিল্প আছে কিনা? আসলে আমরা এর থেকে অনেক অনেক দূরে রয়েছি। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, তারা ২৫৪ মিলিয়ন ডলার ন্যানাে প্রযুক্তিতে বিনিয়ােগের পরিকল্পনা করছে যাতে করে তারা বিশ্ব ন্যানাে হাবের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে। তােমরা আরও জেনে খুশি হবে যে, ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ন্যানাে-প্রযুক্তি হতে আয় হবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্প্রতি চীন, ভারত, রাশিয়া এবং ব্রাজিল নতুন শক্তি হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করেছে। সম্প্রতি ভারত এ প্রযুক্তি দিয়ে ন্যানাে নামে একটি গাড়ি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে ।
☑ রোবটিক্স ও রোবট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
☑ রোবটিক্স ও রোবট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
সুবিধা:
১. এটি একটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি যার প্রভাব রয়েছে ইলেকট্রনিক্স এবং কম্পিউটিং-এর পণ্য উৎপাদনে।
২. তাৎপর্যপূর্ণ সংশ্লেষণ কৌশল
৩. বৃহৎ স্কেলে পণ্যের উৎপাদন
৪. চাকরির অবারিত সুযােগ
৫. কার্যকরী এবং সস্তায় শক্তি উৎপাদন
৬. পানি সংরক্ষণে
৭. দূষণ কমাতে
অসুবিধা:
১. প্রাণঘাতী ও অপ্রাণঘাতী উভয় ধরনের শক্তিশালী অস্ত্র তৈরিতে।
২. ন্যানাে ডিভাইড জাতি হিসেবে পরিচিতি (ধনী ও গরিবের মধ্যে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক পার্থক্য)
৩. প্রথাগত পদ্ধতির বিলুপ্তি
৪. গণতন্ত্রের পরিবর্তে আভিজাত্যের প্রাদুর্ভাব
৫. মেধা পাচার ও বাণিজ্যে বাধা।
৬. ন্যানাে প্রযুক্তির কালােবাজারি ।
ন্যানাে উপাদানের বিপদ- ফিনল্যান্ড এবং আমেরিকার বিজ্ঞানীগণ গবেষণা করে দেখেছেন যে, কীভাবে কিছু ন্যানাে উপাদান (পার্টিক্যাল) মানব কোষের (সেল) সাথে আচরণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ন্যানাে পার্টিক্যাল কোষের গঠনশৈলী পরিবর্তন করে দিতে পারে এবং কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে তা মেরে ফেলতে সক্ষম। বর্তমানে যে সকল ক্ষেত্রে ন্যানাে পার্টিক্যাল ব্যবহৃত হচ্ছে তা হলাে প্রসাধনসামগ্রী, ইলেকট্রনিক দ্রব্যাদি, আলাে সংবেদনশীল যন্ত্রাংশ, ওষুধ এবং খাদ্য প্যাকেটজাতকরণ উপাদানে ।