ভালো ঘুম আসার ৫টি উপায় এবং ঘুমের গুরুত্ব ও সহজ চিকিৎসা

রাতে একটা ফ্রেশ ঘুম দিয়ে সকালে Energise হয়ে ঘুম থেকে উঠার অনুভূতিটাই অন্যরকম।এতে সারাদিন মনটা এমনিতেই ভাল থাকে। কিন্তু সমস্যা হলো এই আধুনিক যুগে অধিকাংশ মানুষই এখন এতোটা ভাগ্যবান নয়।
আর এই সমস্যার জন্য আমাদের মাশুলও গুনতে হচ্ছে। আর চিন্তার বিষয় হচ্ছে এই মাশুলের পরিমান কিন্তু সাধারণ নয় বরং খুবই ভয়াবহ।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, প্রেশার, হতাশা, ক্যান্সার, ডায়াবেটিকস, স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি। এগুলো সমস্যার উদাহরণ মাত্র।
ঘুমের চিকিৎসা

দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ এটা জানেই না যে তা বেশীরভাগ রোগ এমনকি তাকে কেমন দেখতে তাও নির্ভর করছে তার ঘুমের উপর। একটা রিসার্চ থেকে জানা গেছে যদি একজন মানুষ একরাত না ঘুমিয়ে কাটায় তাহলে তার শরীরে যে পরিমাণ ইনসুলিন ক্ষরণ হয় যা Type 2 ডায়াবেটিকসের সমান। এখন হয়তো অনেকেই আফসোস করছেন। কিন্তু যা সত্যি তা তো সত্যিই। এভাবে যদি আপনি ১ মাস বা ১ বছর এভাবে কাটান তাহলে ভাবুন আপনার কি অবস্থা হবে। Canadian Medical Association জার্নাল এ প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা যায় ঘুমের ঘাটতি ওজন কমানোর অক্ষমতার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। 

দুটো গ্রুপের লোকদের নিয়ে গবেষণা করা হয়। এখানে এক গ্রুপ রাতে ৬ ঘন্টার বেশী ঘুমাতেন এবং অন্য গ্রুপ রাতে ৬ ঘণ্টার কম ঘুমাতেন। এরপর দেখা যায় যারা ৬ ঘণ্টার কম ঘুমাতেন তারা অন্য গ্রুপের তুলনায় অর্থাৎ যারা ৬ ঘন্টার বেশী ঘুমাতেন তাদের থেকে কম পরিমাণে ওজন কমাতে সক্ষম। তাই যারা নিজেদের বাড়তি ওজন নিয়ে চিন্তিত তারা রাতের ঘুমের ব্যাপারটা একটূ ভেবে দেখবেন। 

আশা করা যায় আপনি বুঝতে পেরেছেন যে ঘুমের ঘাটতি কেন একটা বড় সমস্যা যাকে একদমই অবহেলা করা ঠিক নয়। তাহলে এই সমস্যার সমাধান কী? সেটাই আপনি জানতে পারবেন এই পোষ্টটি পড়ার মাধ্যমে।

১ম উপায় : ঘুমের মূল্য বা গুরুত্ব জানা

আমরা অনেকেই হয়তো ভাবি দিনে ৮ ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটানো শুধুই সময় নষ্ট করা। দিনে ৮ ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটালে তো জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময়ই নষ্ট হয়ে যায়। আসলে ঘুমের সংজ্ঞা অসম্পূর্ণ। কেউই একে পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি। সাধারণ বৈশিষ্ট্য থেকে বলা যায়, ঘুম হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক ও পর্যায়ক্রমিক বিশ্রাম অবস্থা যেখানে চোখ বন্ধ থাকে আর চেতনা পুরোপুরি অথবা আংশিক ভাবে হারিয়ে যায় যাতে বাইরের কোনো উদ্দীপনার উপর শরীরের সাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া কম হতে পারে আর আপনি পুরোপুরি বিশ্রাম নিতে পারেন। 

তবে ঘুমের সংজ্ঞা থেকে আমাদের এটি বেশী জানা দরকার যে ঘুমের কারণে আমাদের কী কী উপকার হয় বা কেনই বা ঘুম আমাদের জন্য এতো গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন জেগে থাকেন তখন আপনার শরীরে এনার্জি খরচ হতে থাকে আর আপনি যখন ঘুমিয়ে থাকেন তখন আপনার শরীরে এনার্জি জমা হতে থাকে। 
এছাড়াও ঘুম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, হরমোণের কার্য ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, শারীরিক ক্ষমতা বাড়ায়, মেটাবলিজম বুস্ট করে এবং আমাদের ব্রেইনের কাজগুলিকেও আরও সূক্ষভাবে করতে সাহায্য করে। আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, আপনি সঠিক ভাবে ঘুমানোর ফলে যে জীবনটা পাবেন তা কোনো মতেই হাত ছাড়া করতে চাইবেন না। 

২য় উপায় : আলোর সংস্পর্শ 

একটি ভালো ঘুমের জন্য সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দেহে মেলাটোনিন নামক একটা হরমোণের স্বাভাবিক ক্ষরণ হওয়া। আমাদের মস্তিষ্ক থেকে এই হরমোন নিঃসৃত হয়। যেটা আমাদের শরীরে ঘুমের সময়টা মেইন্টেইন করতে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়। মেলাটোনিনের ক্ষরণ Light Exposure এর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। 

দিনে যত বেশী সম্ভব আলোর সংস্পর্শে থাকার চেষ্টা করুন আর রাতে যত বেশী সম্ভব আলো থেকে দূরে থাকুন। আর দেখুন কেমন জাদুর মতো আপনার ঘুমের মান ভালো হয়।

৩য় উপায় : স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন 

ভালো ঘুমের জন্য আপনি তাৎক্ষণিক যে কাজটি করতে পারেন তা হলো আর্টিফিসিয়াল ব্লু স্ক্রিন যেমন মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থেকে থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকা। যদি আপনি একটি গভীর ঘুম পেতে চান তাহলে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার দেহে Day Light Hormone নিঃসরণ কমিয়ে দেয়।যা আপনার সাধারণ ঘুমে প্রভাব ফেলে। যদি আপনি একটি গভীর ঘুম পেতে চান যা কিনা খুবই দরকার তাহলে শুতে যাওয়ার অন্তত ১ ঘণ্টা আগে এসব ব্লু স্কিন থেকে দূরে থাকবেন। আর আপনি যদি তা না করে যদি আপনি শুয়ে শুয়ে পাবজি খেলতে থাকেন তাহলে একটি ভাল ঘুমের আশা আপনি কিভাবে করতে পারেন?

আবার এমনও অনেক সময় হতে পারে যে আপনাকে বাধ্য হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত মোবাইল বা কম্পিউটারে কাজ করতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আপনি ব্লু লাইট ফিল্টার অ্যাপ ব্যাবহার করতে পারেন। প্লে স্টোরে আপনি এই রকম অনেক অ্যাপ খুজে পেতে পারেন। তবুও যদি আপনি কোয়ালিটি স্লিপ বা ভালো ঘুমের ব্যাপারে সতর্ক হন তাহলে ঘুমানোর অন্তত ১ঘণ্টা আগে এগুলো পরিহার করুন।

৪র্থ উপায়ঃ ক্যাফেইন পরিহার করুন

ক্যাফেইন একটি শক্তিশালী নার্ভাস সিস্টেম চাঙ্গা করে তোলা উপাদান। যদি আপনার নার্ভাস সিস্টেম সবসময় সজাগ থাকে তাহলে আপনি কখনোই ভালো ঘুমাতে পারবেন না। তাই বিকাল চারটার পর চা,কফি ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন। 

৫ম উপায়ঃ পরিবেশ বা ঘর ঠান্ডা রাখুন

ঘুমানোর সময় আমাদের শরীরে অটোমেটাক্যালি তাপমাত্রা কমতে থাকে। কিন্ত পরিবেশ বা আমাদের ঘরের তাপমাত্রা বেশী থাকলে তা আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই সবসময় চেষ্টা করুন যাতে ঠান্ডা ঘরে ঘুমানো যায়। এক রিসার্চে জানা গেছে ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা আমাদের ঘুমের জন্য আদর্শ। তবে ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কম এবং ২৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশী তাপমাত্রা ঘুমের জন্য একদমই উপযুক্ত নয়। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url