পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ৫ টি যায়গা ও জায়গার ছবি
পৃথিবীর আশ্চর্যজনক স্থানের পরিমান অগুনিত!পৃথিবীর সুন্দর দৃশ্যের টানে মানুষের যেন ছুটে চলার অন্ত নেই। আর এই ছুটে চলার পিছনে শুধুই একটি কারন কাজ করে তা হলো আত্মতুষ্টি! তবে যদি এমন ভ্রমণ পিপাসুদের কাওকে প্রশ্ন করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান কোনটি বা পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর জিনিস কি তাহলে আমার মনে হয় সে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে! কারন তার সৌন্দর্য দর্শনের তৃষ্ণা আজও মেটে নাই। আর এই তৃষ্ণা কখনো মেটারও নয়! আর এ কারনেই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ৫টি যায়গা ও জায়গার ছবি নিয়েই এই নিবন্ধ!
হলস্ট্যাট গ্রাম - অস্ট্রিয়া (hallstatt village austria)
রূপকথার গ্রাম, নিসর্গ নয়নাভিরাম। কেউ বলেন, বিশ্বের সুন্দরতম গ্রাম। কেউ বলেন 'হিমবাহের বাগান শহর'। কেউ বলেন 'অস্ট্রিয়ার মুক্তো' , কেউ বলেন ছবি তোলার শ্রেষ্ঠ গ্রাম। গ্রামটির নাম হলস্ট্যাট। শীতকালে বরফে সাদা হয়ে যায় চারদিক। হ্রদ, পাহাড়, গ্রামের রাস্তা ঘাট, বাড়ির ছাদ, পুরু বরফের চাদরে মোড়া থাকে। দেখলে মনে হবে পৃথিবীর বাইরের কোন জায়গায় এসেছেন।
গ্রীষ্মে বরফ গলে গেলে, শ্বাসরোধকারী সৌন্দর্য নিয়ে জেগে ওঠে ইউরোপের সবচেয়ে পুরনো গ্রাম। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর জনপদ। যেখানে সময় থেমে গেছে অতিপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে। সারা বছরই পর্যটকে পূর্ণ থাকে জায়গাটি। উত্তর অস্ট্রিয়ার সালসকামার্গাট লেক জেলার পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে আছে এই ছোট্ট গ্রামটি। ৩৫০০ বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বুকে নিয়ে বাঁচছে হলস্ট্যাট ভিলেজ। হ্রদের পাড় থেকে আঁকাবাঁকা পথ উঠে গেছে পাহড়ের উপরে। পথের দুপাশ দিয়ে শতশত বছরের পুরনো বাড়ি। দেখলে মনে যেন সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে। এলাকাটিতে আছে এক প্রাগৈতিহাসিক প্রাকৃতিক লবণ খনি। যা বিশ্বের প্রথম লবণ খনি হিসেবে পরিচিত। শুনলে অবাক হবেন, এই গ্রামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে চীনও নকল হলস্ট্যাট বানিয়েছে।
আপনি যদি প্রশ্ন করেন পৃথিবীর বৃহত্তম স্বাদু জলের হ্রদ কোনটি? তাহলে যে কেউ বলে দিবে বৈকাল হ্রদ (Lake Baikal)। সাইবেরিয়ায় অবস্থিত বৈকাল হ্রদকে যদি আপনি পৃথিবীর একটি জাদুকরী জায়গা বলে থাকেন তাহলে ভুল হবে না। প্রতিটি ঋতুতেই বৈকাল হ্রদ ভিন্ন রূপ ধারণ করে। হলস্ট্যাট গ্রামকে যেমন কেউ কেউ বলেন 'অস্ট্রিয়ার মুক্তো', তেমনি এই হ্রদটি 'সাইবেরিয়ার মুক্তো' নামে পরিচিত। এটি সাইবেরিয়ার নীল নয়ন নামেও পরিচিত।
প্রকৃতির এক আশ্চর্য বিস্ময় এই হ্রদটি মৎস্যসম্পদে সমৃদ্ধ এবং এর আশেপাশের অরণ্য অঞ্চল জীববৈচিত্র্যের এক বিপুল প্রাকৃতিক সম্ভার। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম হ্রদ যা ২কোটি ৫০লক্ষ বছর পুরনো। ১৯৯৬ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা করে। এর দৈর্ঘ্য ২৩৬ কিলোমিটার এবং সর্বাধিক গভীরতা ১,৬৩৭ মিটার। এই হ্রদের পানি এত স্বচ্ছ যে, আপনি পানির ১৩০ ফুট নিচের পাথরগুলো স্পষ্ট দেখতে পাবেন৷ তবে এই জায়গাটির আসল মজা শীতকালে।
শীতকালে পুরো হ্রদটি বরফে ঢেকে যায়। এই পুরুত্ব হয় প্রায় ২মি. পর্যন্ত। এই ২ মিটার পুরো বরফে একটি গাড়ি সহজেই চলতে পারবে। কী ভাবছেন? গাড়ি চললে বরফ ভেঙ্গে যাবে কিনা? শুনলে অবাক হবেন এই দুই মিটার পুরু বরফ দিয়ে শুধুমাত্র গাড়ি না একটি ট্রেনও চলতে পারবে! শুধু তাই না, বরফের টুকরোগুলো বিভিন্ন আকার-আকৃতিতে নিজেদের সাজিয়ে নেয়। যা দেখলে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। জায়গাটিতে পৃথিবীর অনুসন্ধানী গবেষক ও পর্যটকদের ভীড় লেগেই থাকে সারাবছর৷
এই জায়গাটি কোনো ফ্যান্টাসি কিংডম বা কল্পনার জগত নয়। তবে জায়গাটি আপনার কল্পনাকেও হার মানাতে পারে।ব্রিটিশ কলম্বিয়া যাওয়ার পথে প্লেন থেকে আপনি এই নিদারুণ সৌন্দর্যের দেখা পাবেন৷ এই লেকের সবচেয়ে বিশেষ ও আকর্ষণীয় যে বৈশিষ্ট্য তা হচ্ছে, পুরো লেক জুড়ে পানি বিভিন্ন স্পট আকার ধারণ করেছে।
তবে এই পানি পান করার যোগ্য নয় কেননা বিশেষ ধরনের কিছু খণিজ লবণের প্রভাব। এই হ্রদে যেসব প্রজাতির মাছ থাকে সেগুলোও পানিতে বেশি লাফালাফি করে না। এখানে গেলে আপনাকে শুধু দুচোখ ভরে সৌন্দর্যেই উপভোগ করতে হবে কিন্তু পানি ধরা যাবে না। আর যদি ধরতে চান তাহলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি নিয়ে ধরতে হবে।
উপরের ছবিটিতে জায়গাটিকে দেখে কি আপনার চেনা চেনা মনে হয়? হ্যাঁ, 'গেম অফ থ্রোনস' এর টিভি সিরিজে জায়গাটিকে (Dark_Hedges) দেখানো হয়েছে। এটিকে বিশ্বের সুন্দরতম একটি জায়গা ভাবাই যেতে পারে। রাস্তার পাশের বড় সারি সারি গাছগুলো দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। আপনার মন নিমিষেই ভালো হয়ে যাবে।
দিনের বেলায় আপনার জায়গাটিকে ভালো লাগলেও রাতের বেলা আপনার অনুভূতি পুরোপুরি উল্টো হবে। তখন আপনি দৌড়ে পালানোর পথ খুজবেন৷ রাস্তাটি আপনার জন্য অত্যন্ত ভয়ংকর হয়ে উঠবে। আপনার মনে, গাছগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে এবং আপনার কাছে আসতে চাইছে।
প্রায় ১৮০ মিলিয়ন বছর পূর্বে পাথর দিয়ে তৈরি এই জায়গাটি ১২০০ বছর ধরে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের অনেক জনপ্রিয় একটি জায়গা। এই গুহাটির দৈর্ঘ্য ২৪০মিটার। এই গুহাটির ভেতরে পাথরের মধ্যে কালি দিয়ে লেখা ৭০টিরও বেশি শিলালিপি রয়েছে৷ একদল জাপানি সৈন্যবাহিনী দ্বারা এটি ১৯৪০ সালে নতুন করে আবিষ্কৃত হয়৷ এটি চীনের গিলিনে অবস্থিত। এটি একটি প্রাকৃতিক চুনাপাথর গুহা যা বহু রঙের আলো দিয়ে গঠিত এবং গিলিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গাগুলির একটি।
এই অসম্ভব সুন্দর জায়গাটিতে আপনি আপনার প্রিয়জন বা জীবনসঙ্গীর সাথেই ঘুরতে পছন্দ করবেন। গুহার পথে ৭৮৭ ফুট হাঁটার সময় আপনার মনে হবে আপনি পৃথিবীর মধ্যে কোনো স্বপ্ন রাজ্যে চলে এসেছেন। সত্যি কথা বলতে এত সুন্দর একটি রাজ্য তৈরি হতে কত বছর সময় লেগেছে তা বলা না গেলেও, এই জায়গাটি যে আপনার কল্পনাকে হার মানিয়েছে তা বলাই যায়।