২০২০ সালে ঘটা কিছু ভয়াবহ সমস্যা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ

মানব সভ্যতা যাত্রা কালের শুরু থেকেই  বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভয়াবহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ নেমে এসেছে।  প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে অনেক সভ্যতার পরিসমাপ্তি ও ঘটেছে। কালের অমোঘ নিয়মে সেই কালো অন্ধকার কে কেটে গিয়ে আবার নতুন ভোরের সূর্য  উঠেছে এবং মানব সভ্যতা ও নতুন করে যাত্রা শুরু করেছে। ২০২০ সালটা ও যেন তেমনি এক অভিশপ্ত বছর। ২০২০ যেন আসলেই শুধু বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। একের পর এক প্রাকৃতিক এবং সামাজিক বিপর্যয় আমাদের মানব জীবনকে অস্থির করে তুলছে। 
প্রাকৃতিক দূর্যোগ কেন হয়

করোনা ভাইরাস মহামারি
২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ বা  করোনা ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। চীনের তথ্য গোপন এবং বিপদের যথেষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া সত্বেও আমাদের খামখেয়ালির কারণে  এই ভাইরাস বিশ্ব ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং মহামারী আকার ধারণ  করে। ভাইরাস সংক্রমণের চার মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ করোনা ভাইরাস মুক্ত থাকলেও সরকার এবং আমাদের জনগনের সচেতনতার অভাবে ৮ মার্চ, ২০২০ বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। ১২মার্চ, ২০২০ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই ভাইরাসে বাংলাদেশে মৃত্যু সংখ্যা ২হাজার ৩৫২ জন এবং সমগ্র বিশ্বে এই সংখ্যা ৫ লক্ষ ৬৪ হাজার ৯২৪ জন। 


বিশ্ব জুরে অর্থনৈতিক মন্দা 
এই করোনা কারণে বিশ্বে সবচেয়ে ভয়াবহ যে বিপর্যয় হতে চলেছে তা হল অর্থনৈতিকমন্দ। করোনার আক্রমনে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী, দিনমজুর, বেসরকারি কর্মজীবী, এবং শ্রমিক শ্রেণী পেশার মানুষরা। আয় কমে যাওয়ার কারণে  বিভিন্ন বেসরকারি নামী দামী কম্পানি গুলো তাদের কর্মীদের বিনা নোটিশে ছাঁটাই করছে। যার ফলে বেকারত্ব এবং দারিদ্র্য ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের সীমা ছিল দশমিক ২৪ শতাংশ যা ২০১৯ এ কমে গিয়ে দাঁড়ায় দশমিক ২০ শতাংশে । বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এই সংখ্যা বেড়েছে দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য  বিপর্যয় সংকেত। 

ঘূর্নিঝড় আম্পান
২০২০ সালে ঘটিত আরো একটি হল ঘূর্ণিঝড় "আম্পান"। ঘন্টায় ২৭০কিমি বেগে বয়ে চলা এই ঘূর্ণিঝড়টি  ১৬মে থেকে ২০মে পর্যন্ত অবস্থান করে।  বঙ্গোপসাগরে তৈরী হওয়া এই সুপার সাইক্লোনটি সিডর এবং নার্গিস এর থেকেও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তবে রক্ষা কবচ হিসেবে সুন্দর বন দাড়িয়ে থাকার কারনে ঝড়ের প্রকোপ থেকে কিছুটা রক্ষা পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে ক্ষতি যে একেবারে হয়নি তা নয়। উপকূলীয় অঞ্চলে জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত গলাচিপা, কলাপাড়া, এবং রাঙাবলী সহ ১০টি গ্রামে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে যায় এবং গ্রামগুলো ডুবে যায়। এছাড়াও নোয়াখালী জেলার একটি দ্বীপে প্রবল বর্ষণে ৫০০টি ঘড় নষ্ট হয়।

ভয়াবহ বন্যা
জানুয়ারি ১,২০২০ ইন্দোনেশিয়ায় ঘটিত প্রবল বন্যায় ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী "জাকার্তা" এবং এর আশেপাশের কিছু এলাকা প্রবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানির উচ্চতা এত বেড়ে গিয়েছিল যে ,চার লাখের ও বেশী মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। অতিরিক্ত বর্ষনে ভূমিধস এবং বৈদ্যুতিক শকে প্রায় ৬৬জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল।

ভূমিকম্প
কোনো এক অজানা কারনে ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশী ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে । এখন পর্যন্ত ৪.৫ মাত্রার উপরে বৈশিষ্ট্যযুক্ত মোট ৪৪টি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। 

দাবানল
জানুয়ারিতে অন্যান্য দেশ যখন নতুন বর্ষ উদ্যাপনে ব্যস্ত অস্ট্রেলিয়া তখন তাদের দাবানল মোকাবিলায় ব্যস্ত।  ২০১৯সালের ডিসেম্বর থেকে এই অগ্নিকাণ্ড শুরু হয়।  ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে ১৮.৫ মিলিয়ন হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ৫৯০০ টির বেশী বসতবাড়ি পুড়ে যায় এবং প্রায় ৪০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। 

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন
২০২০ সালের আরো একটি উল্লেখযোগ্য বিপর্যয় হল  বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী নাশকতা। ২০২০ সালে সূর্য তার সক্রিয়তার সর্বনিম্ন পর্যায়ে যাবে। যার ফলে প্রাকৃতিক  বিপর্যয় বৃদ্ধি পাবে যা ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ডেকে আনতে পারে। করোনা কারনে দীর্ঘদিন ঘরে  আবদ্ধ থাকায় মানুষের মধ্যে  হতাশা, এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে নানা মানুষের মাঝে সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।  

আগ্নেয়গিরি
 ফিলিপাইন এ যতগুলো আগ্নেয়গিরি আছে তার মধ্যে "তাল" আগ্নেয়গিরি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সক্রিয়  আগ্নেয়গিরি । এই আগ্নেয়গিরিটি স্বাধীনতার অ্যগ্নুতপাত করছিল ৪৩বছর আগে ১৯৭৭ সালে। ৭৭ সালের পর থেকে ২০১৯পর্যন্ত সক্রিয় থাকার পর এটি ১২ জানুয়ারি, ২০২০ আবার জেগে ওঠে। প্রায় ১০০কিমি পর্যন্ত এর জলন্ত লাভা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৩ লাখ লোককে  তাদের বাসস্থান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ফিলিপাইনে মোট ২৪৮৪ টি আগ্নেয়গিরি রয়েছে যার মধ্যে ১৭৬ টি সক্রিয়। 

তবে সব কিছুরই যেমন খারাপ দিক আছে তেমনি  ভালো দিক ও আছে। করোনা কারনে দীর্ঘদিন বিভিন্ন কলকারখানা বন্ধ থাকায় পৃথিবীর ওজন স্তরের ভারসাম্য ফিরে এসেছ, পরিবেশ দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। সব চেয়ে বড় ব্যপার সাধারণ মানুষ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব উপলব্দি করছে।

মানব সভ্যতা তার যাত্রা পথের শুরু থেকেই বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে আসছে। বিপর্যয় এসেছে আবার চলেও যাবে ৷ এই বিপর্যয় যাতে আমরা কাটিয়ে উঠতে তার জন্য কিছু পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করতে পারি যেমন: আগামী পাঁচ বছরের জন্য বিলাসিতা ত্যাগ করা, মোবাইলের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমানো, জীবিকার  জন্য কৃষির উপর গুরুত্ব দেয়া, আঞ্চলিক শান্তি রক্ষা ,নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে হবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে যত রোগ, বিপর্যয় তৈরি হয়েছে তার প্রধান কারন ই ছিল মানুষের অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন  এবং পরিবেশের উপর অনাচার। আমরা সবাই যদি একসাথে এই বিপর্যয় মোকাবিলা করি তাহলে সামনে যেকোনো বিপদ আসুক না কেন আমরা তা মোকাবিলা করতে পারব।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url