ব্রোকলি চাষের নিয়ম পদ্ধতি ও বীজ এবং টবে বা ছাঁদে ব্রোকলি চাষের উপায়
ব্রোকলি কি? ব্রোকলি একটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু সবজি। যা দেখতে ফুলকপির মতো কিন্তু বর্ণে সবুজ। যদিও আমাদের দেশে বানিজ্যিক ভাবে ব্রোকলি এখন পর্যন্ত তেমন পরিচিত হয়ে উঠতে পারেনি। তবে এমনও কিছু শৌখিন মানুষ আছে যারা এর চাষ স্বল্প পরিমানে শুরু করতেছে। ব্রোকলি তে অনেক পরিমানে ভিটামিন সি, ক্যারোটিন, প্রোটিন ও ভিটামিন থাকে। স্বাস্থের জন্য এসব পুষ্টি উপাদান খুবই উপকারি। এ কারনে ব্রোকলি চাষে সফলতা পেতে হলে আমাদের ব্রকোলি বীজ,চাষের পদ্ধতি ও নিয়ম, সঠিকভাবে জমি তৈরি সম্পর্কে জানতে হবে।
এটির চাহিদা যেমন বেশি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ও দামের দিক থেকেও ভালো তাই আমাদের সবাইকে এই সবজিটি চাষ করা উচিৎ। এই সবজিটিকে মাঠ থেকে তোলার পর খুব তারাতারি নষ্ট হতে পারে বলে টবে চাষ করা অনেকটা লাভ জনক বলা যায় । আপনি চাইলেই বাড়ির আঙ্গিনায় বা উঠানে, বারান্দায় বা ছাদের অল্প জায়গায় টবে এ সবজি টি চাষ করতে পারেন। নিম্নে ব্রোকলির উৎপাদন এর কলাকৌশল এবং প্রোয়োজনীয় বিষয় গুলো বোঝানো হলো ।
ব্রোকলি বীজ ও জাত:
ভাল ফসল পেতে ভালো জাত নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং খেয়াল রাখার মতো একটি বিষয়। ব্রোকলির উৎপাদনের জন্য উল্লেখযোগ্য যাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- টপার-৪৩, ডান্ডি, সপ্রডিটিং টেক্সাস ১০৭, গ্রিন, গ্রীন মাউন্টেইলগ্রীন, ইতালিয়ান গ্রীন, ডিউক, ক্রুসেডার, ওয়ালতাম ২৯, গ্রীন বাডের মতো উল্লেখ যোগ্য কিছু নাম ।
তবে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় এল সেন্ট্রম প্রিমিয়াম ক্রুপ, গ্রিন কমেট এবং ডি সিক্কো নামের জাতগুলো অনেকটাই বিশেষ উপযোগি । বিভিন্ন ধরনের বীজ কোম্পানি ব্রোকলির সাধারন এবং এর শংকর জাতের বীজ বাজারজাত করে থাকে । আপনি এদের কাছ থেকে এসব বীজ সংগ্রহ খুব সহজেই করতে পারেন।
ব্রকলি চাষের পদ্ধতি ও নিয়ম:
ব্রকলি চাষের সময়: সেপ্টেম্বরের থেকে শুরু করে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্রোকলি চাষের জন্য খুবই উপকারি । এজন্য তাই আগস্ট মাস থেকেই বর্ষার পর পরই জমি প্রস্তুত করতে হয় এবং তার পরে বীজতলায় সুন্দর ভাবে বীজ বুনতে হয়।
ব্রোকলি চাষের জন্য সার ও মাটি তৈরি:
মাটি একটু ও ঝুরঝুরে করে নিতে হবে । পরিমান মত গোবর, টিএসপি ও খৈল দিতে হবে এবং এসব কিছু ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। অন্যভাবে পাতা পচা সার বা গোবরের সারের ১ ভাগের সাথে ১ ভাগ বালু এবং তার সাথে আরো ২ ভাগ মাটি ভালো ভাবে মিশিয়ে ব্রোকলির জন্য বীজতলা তৈরি করতে হবে। শুধু খেয়াল রাখবেন মাটি সব সময় নরম তুলতুলে থাকলেই সব ধরনের সবজির ভালো ফলন হবে এবং খুব তারাতারি বৃদ্ধি পাবে। আর অবশ্যই সারাদিন রোদ পায় এমন যায়গায় আপনি ব্রকলির চাষ করার জন্য নির্বাচন করতে পারেন।
ব্রোকলি চাষের জন্য চারা তৈরি ও রোপন:
আপনাকে ভালো ফলন পেতে হলে অবশ্যই বীজতলায় চারা তৈরির পর মূল টবে লাগাতে হবে। বীজ রোপনের পর থেকে বীজ এর চারা গজাতে সময় লাগতে পারে প্রায় ৩ থেকে ৪ দিন। এবং ৮ থেকে ৯ দিন বয়সে চারা মূল টবে লাগানোর উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে । চারা উপযুক্ত হলো কিনা তা চেনার জন্য আপনাকে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে- চারার উচ্চতা ৮-১০ সেমি, ৫-৬ দিন সবল পাতা ও গারো সবুজ বর্ণ। টব নির্বাচন এর ক্ষেত্রেও আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে চারা গাছ বড় বা টব যেন বেশি ছোট না হয়। কারন এ ক্ষেত্রে এটি দ্রুত বেরে উঠার সুযোগ পাবে। এজন্য ৫ লিটার পাত্রের সমান টব আপনি ব্যাবহার করতে পারেন।
চারা রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা:
চারা গাছ রোপনের পর থেকে প্রথম ৪ থেকে ৫ দিন যত্ন করে নিয়মিত একদিন পরপর ভালোভাবে পানি দিন। পরবর্তিতে আপনাকে ৮ থেকে ১০ দিন অন্তর বা সাভাবিক প্রোয়োজন অনুযায়ী শুধ ছেচ দিলেই চলবে। তবে আপনাকে এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে যে টবে যেন কোনোধরনের আগাছা না জন্মায়। আর নিয়মিত না দিয়ে শুধু পরিমান মতো যৈব সার ব্যবহার করতেই পারেন। তবে কিন্তু সার প্রয়োগের পর পানি দিতে কক্ষনো ভুলে যাবেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুয়া পোকা এবং জাব পোকা এই ব্রোকলি চাশের ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতি করে। সেদিকেউ খেয়াল রাখতে হবে। আর যদি এরকম পোকার উপদ্রব বেশি হয়ে থাকে তাহলে আপনি রিডেন, মাশাল বা নাইট্রজেন ঔষধ ব্যবহার করতে পারবেন। স্প্রে করে দিতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই কৃষিকর্মর্তার পরামর্শ নিবেন।
ব্রোকলি সবজি সংগ্রহ:
সুস্বাদু ব্রোকলি চাষে অনেক তারাতারিই লাভবান হওয়া যায়। কারন এরা খুব তারাতারিই বেড়ে ওঠে। সাধারন ভাবেই চারা রোপনের ৩ থেকে সারে তিন মাসের মধ্যে সবজিটি প্রায় খাওয়ার উপযোগি হয়ে উঠতে পারে। এটি গাছ থেকে সংগ্রহের সময় আপনি প্রথমে ফুলের উপরের অংশটা খুব সাবধানে কেটে নিবেন যাতে করে পাতার গোড়া থেকে আবার ফুল বেরোতে পারে। এই পদ্ধতি গুলো প্রয়োগ করলে আপনি অবশ্যই লাভবান হতে পারবেন ।