নারী শিক্ষার গুরুত্ব এবং নারী শিক্ষার বর্তমান ও পূর্বের অবস্থা

নারী শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো নারীদের অগ্রগতি এবং সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ভাবে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা। অনেকেই বলেন নারী শিক্ষা কেন প্রয়োজন? এ কথার সহজ উত্তর হলো সুস্থ সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকতে আপনার কয়টি হাত প্রয়োজন অবশ্যই দুইটি। তেমন সমাজকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। নারীকে ছাড়া শুধুমাত্র পুরুষদের দ্বারা সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তবে নারী শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা হলো আমাদের পুরুষ শাসিত  সমাজ ব্যাবস্থা। পুরুষেরা সকল সময় চায় নারীরা পিছিয়ে থাকুক। এবং তারা পুরুষের কাছে জিম্মি হয়ে থাকুক। আর এটিই হলো নারী শিক্ষার অগ্রগতির প্রধান সমস্যা। তবে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে নারীরাই মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে। তবে নারী শিক্ষার উদ্দেশ্য সফল করতে পুরুষের ভূমিকাও অস্বীকার করলে চলবে না।
নারী শিক্ষার গুরুত্ব
নারী শিক্ষার একাল সেকাল এবং সমাজ উন্নয়নে নারী শিক্ষার ভূমিকা
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন তার একটি রচনায় বলেছিলেন, এক পা যুক্ত মানুষ বেশী দূর আগাতে পারে না। সমাজকে যদি একটি মানুষ ,এবং নারী ও পুরুষ কে সেই সমাজের দুটি পা হিসেবে বিবেচনা করা হয়,  তবে এটা সহজেই অনুমেয় যে, নারীকে পঙ্গু করে ,শুধুমাত্র পুরুষ এর একার পক্ষে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।

নারী শিক্ষা বিষয়টি আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি অপরিহার্য অঙ্গ।  একটি সমাজ তখনই উন্নয়নের শিখরে পৌঁছায় যখন তারা তাদের নারী পুরুষ উভয়কে সমান শিক্ষা ও সমান সুযোগ সুবিধা দেয়, একটি সমাজ তখনই উন্নত হয় যখন একজন নারীকে কোনো "মেয়ে মানুষ" না, শুধু মাত্র একজন "মানুষ" হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  বর্তমানের এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যুগে, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হল, " শিক্ষা "। যে সমাজ যত শিক্ষিত, সেই সমাজ তত উন্নত।  যেখানে সমাজের উন্নয়ন শিক্ষা ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়, সেখানে সমাজের এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলো থেকে বন্ঞ্চিতরাখা আর "বাদরের তেল যুক্ত বাঁশ বেয়ে উপরে ওঠা" দুটোই সমান কথা।

নারী শিক্ষার একাল সেকাল
শিক্ষার ক্ষেত্রে একসময় নারীদের জয়জয়কার ছিল। পবিত্র বেদের মন্ত্র দ্রষ্টা হিসেবে লোপামুদ্রা, গার্গী প্রভৃতির নারী ঋষিদের পরিচয় পাওয়া যায় অর্থাৎ তৎকালীন সময়েও নারীরা শিক্ষা গ্রহণে পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে ছিল। এমনকি পবিত্র বেদে ও নারী শিক্ষার এবং নারী শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট বিধান রয়েছে। হিন্দু ও বৌদ্ধ সমাজের উদারতার কারনে প্রাচীন হিন্দু ও বৌদ্ধ সাহিত্যে প্রচুর নারী শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, এবং নারী  কবির নিদর্শন পাওয়া যায়। কিন্তু পরবর্তীতে সমাজে পুরুষের প্রাধান্য বেশী পাওয়ায় এবং পুরুষতান্ত্রিকতা প্রতিষ্ঠা হলে নারী হয়ে পড়ে অন্তঃপুরবাসী। ধর্মীয় কুসংস্কার এবং সমাজের তৈরীকৃত নানা শাসনের বেড়াজালে নারী শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা  থেকে একপ্রকার হারিয়ে যায়। ভারতে ইংরেজ শাসন শুরু হলে নারীদের শিক্ষা লাভের পালে কিছুটা হাওয়া লাগে।রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,  সুভাষচন্দ্র বসু  প্রভৃতি দেশ ভক্ত বাঙালির অক্লান্ত চেষ্টায় নারী শিক্ষার পথ কিছুটা হলেও সুগম হয়। ।অন্যধর্মাবলম্বী নারীরা কিছুটা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করলেও মুসলিম নারীরা এক্ষেত্রে একদম পিছিয়ে পড়ে। সমাজে মুসলিম নারীদের  শিক্ষার যখন এই দুরবস্থা তখন নারী শিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে আগমন ঘটে " বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসাইন" এর। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে  মুসলিম নারীরাও ক্রমে আধুনিক শিক্ষার পথে পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্যার সলিমুল্লাহ, প্রভৃতি মানুষের কঠোর চেষ্টায় নারীরা এগিয়ে যেতে থাকে শিক্ষা গ্রহণের পথে। যার ফলাফল আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি।

সমাজের উন্নতিতে নারী শিক্ষা কি আসলেই দরকার
সমাজে উন্নতিতে নারী শিক্ষা শুধু প্রয়োজনীয়ই নয় অপরিহার্য ও বটে। একজন নারীই পারে একটি সমাজকে বদলে দিতে। একটা শিশু তার জীবনের প্রথম শিক্ষা গ্রহণ করে তার মায়ের কাছ থেকে। কোনটা ভালো ,কোনটা মন্দ এই প্রাথমিক জ্ঞানটা একজন মা ই তার সন্তানকে দিয়ে থাকেন। তাই একজন মাকে বলা হয়, শিশুর প্রথম শিক্ষক। একটি শিশুর সঠিক ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য একজন শিক্ষিত মায়ের ভুমিকা অকল্পনীয়। কারন মা নিজেই যদি সুশিক্ষিত না হন, তাহলে তিনি তার সন্তানকে সুশিক্ষিত কিভাবে করবেন। আজকে আমরা যদি আমাদের বর্তমান সামাজিক অর্থনৈতিকদিকে তাকাই তবে সকল ক্ষেত্রে নারীদের সফলতারকাহিনী দেখতে পাবো। কোথায় নেই তারা, শিক্ষা,চিকিত্সা, প্রশাসন, প্রযুক্তি, আবিষ্কার, দেশ পরিচালনা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে নারীরা উল্খেযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে সমাজে পুরুষের চেয়ে ও নারী রঅগ্রগণ্য ভূমিকা। উন্নত বিশ্বের দিক দেখুন। জ্ঞান বিজ্ঞানের দিক থেকে তারা আমাদের থেকে ১০০ গুন অগ্রগামী।  তাদের এই  অগ্রগতির একটাই মূল মন্ত্র নারী শিক্ষা।


একবিংশ শতাব্দী হল বিজ্ঞান, যুক্তি,মননের যুগ।নারী এবং পুরুষ হল সমাজের দু প্রধান চালিকা শক্তি।নারীকে ঘরে বন্দি রেখে কোনো দেশ বা সমাজের উন্নয়ন কখনোই সম্ভব না। তাই আমাদের সকলের এবং সরকারের উচিত নারী শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া,গ্রামীন মেয়েদের শিক্ষার জন্য উপবৃত্তির প্রচলন করা, চাকুরি ক্ষেত্রে নারীরা যাও বৈষম্যের শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কঠোর থেকে কঠোর তর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তবেই সমাজ ও দেশের উন্নয়ন সম্ভব। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url