নারীর প্রতি সহিংসতার একাল সেকাল এবং সহিংসতার কারণ ও তার প্রতিকার
নারী নির্যাতন আইন রয়েছে আমাদের বাংলাদেশে কিন্তু সে আইন বাস্তবে কতটুকু কার্যকর তা আমরা প্রতিদিন সংবাদপত্র,টিভি চ্যানেল বা ফেসবুক খুললেই নারী নির্যাতন বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখতে পাই। নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতা কি বা কাকে বললে জানতে চাইলে সকলেই গড়গড় করে রক্ত গরম বুলি আওড়াতে শুরু করে। মনে হয় মানুষ নারী নির্যাতনের সংজ্ঞা খুব ভাল ভাবে শিখে গিয়েছে। কিন্তু কাওকেই দেখা যায় না তার সামনে কোন নারী নির্যাতনের শিকার হলে তার প্রতিবাদ করতে। নারী নির্যাতনের ফলাফল শেষমেশ হত্যা পর্যন্ত গড়ায়! এ কারনে নারী নির্যাতন ও নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয় পদক্ষেপ গুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।
নারী কি আসলেই সুরক্ষিত ? "ঢাকা শহরের এক ব্যাস্ত রাস্তা। এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার ওপারে কিছু রিক্সাওয়ালা অলস ভাবে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর তাদের মধ্যে একজন ঐ মেয়েটিকে ইশারা করে একটি শিস বাজালো এবং মেয়েটি তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে তাকে একটি নোংরা ইসারা করল। তাদের নোংরা দৃষ্টি, এবং নোংরা ইশারায় টিকতে না পেরে মেয়েটি ঐ স্থান ত্যাগ করে"।
কথাগুলো গল্প শোনালেও এটিই বর্তমানে প্রায় প্রত্যেকটি দৈনন্দিন ঘটে চলা বাস্তব ঘটনা।
কথাগুলো গল্প শোনালেও এটিই বর্তমানে প্রায় প্রত্যেকটি দৈনন্দিন ঘটে চলা বাস্তব ঘটনা।
বর্তমানে আমরা যেন এসবে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। আমরা যেন মেনেই নিয়েছি পুরুষ শারীরিক, মানসিক নিপীড়ন করবেই আর একজন নারী বা কন্যা শিশু তা সহ্য করবে। আজকাল পত্রিকার কাগজটা খুললে চার পাঁচটা ধর্ষন, যৌন নিপীড়নের খবর থাকবেই। এমনকি দুই ,আড়াই বছরের শিশু যার কিনা যৌনাঙ্গ এখনো ঠিক মত গঠিত হয় নি তাকেও ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নারী নির্যাতনের খবর আসা টা পান্তা ভাত আর লবনের মত সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারীদের প্রতি এই আচরন মানবিক মর্যাদার চরম লঙ্ঘন।
নারীর প্রতি চলমান সহিংসতার ঘটনার যে হঠাত্ বৃদ্ধি পেয়েছে তা নয়। এর প্রচলন শুরু হয়েছে আরো আগে , আমাদেরই চোখের সামনে। কথায় আছে,"সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড় " ।তাই আজ নারী নির্যাতন আমাদের সংস্কৃতির অংশ, পৌরষত্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখনই কোনো নতুন ঘটনা ঘটে,সরকারের তরফ থেকে আশ্বস্ত করা হয় সুষ্ঠু বিচার হবে কিন্তু আসলেই কি সুষ্ঠু বিচার হয়? হয় কি হয় না তার উত্তর আমরা তনু, মিতু এদের মৃত্যু থেকেই জেনেছি।
অনেকে দাবি করেন নারী সহিংসতা রোধের একমাত্র উপায় কঠোর শাস্তি। আসলেই কি কঠোর শাস্তির মাধ্যমে সহিংসতা কমবে?নারী ঘরে বাইরে নিরাপদ করবে ? কখনই না। কঠোর শাস্তি কখনো কখনো এর প্রতিকার হতে পারে না। মস্তিষ্কে যার ধর্ষণ বাস করে, যার চক্ষু এক নারীকে পন্যের মত বিচার করে কঠোর শাস্তি তাদের কখনো বদলাতে পারবে না। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে এই সব বিকারগ্রস্ত ভাইরাস যেন জাতিতে পরিণত না হয়। প্রত্যেক পাড়া মহল্লায় মেয়েদের সুরক্ষা প্রদানের কমিটি তৈরী করতে হবে। পরিবারকে তার কন্যা সন্তানকে একজন মেয়ে মানুষ হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে নিজের প্রতিরোধ নিজেই করা শেখাতে হবে। তবেই সুদিন আসবে।