সাপে কামড়ালে কি করা উচিত ও সাপ তাড়ানোর উপায়
সাপ আমাদের সকলের অতি পরিচিত একটি সরিসৃপ প্রানী। এক দিকে যেমন এটি আমাদের সকলের পরিচিত ঠিক তেমনি ভীতির ও কারণ। মানুষের মনের সাপ নিয়ে এত ভীতির প্রধান কারণ হলো প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে ৮০ হাজারের ও মানুষ সাপের কামড়ে মৃত্যু বরণ করে। তবে এর থেকেও অধিক পরিমাণ বিষধর সাপ মানুষকে কামড়ায়। সাপের কামড়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ হয় অজ্ঞতা এবং ভীতির কারণে। সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা আমাদের সকলের জানা উচিত। এবং সাপে কাটার চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে যাবে।
আমাদের দেশে সাপের কামড় হতে বাচার বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা রয়েছে। এবং প্রতিটি হাসপাতলে এন্টিভেনম পাওয়া গেলেও গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন থাকার কারণে হাসপাতালে না গিয়ে বিভিন্ন ওঝা বা সাপুড়ের কাছে যায়। এরা সাপের বিষ নামাতে পারে না বরংচ রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
তবে লোক মুখে শোনা যায় সাপে কাটা রোগী অধিকাংশই সুস্থ করে দেন সাপুড়েরা। তবে তারা যে সকল চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করে তার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায়নি। তবে তারা কিভাবে সাপে কাটা রোগীর সুস্থ করে দেয়? এর একটি প্রশ্ন থেকেই যায়! এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হল আমাদের দেশে যে সকল সাপ দেখা যায় তার অধিকাংশই বিষধর নয়। যার ফলে এ সকল সাপে কামড়ালে মৃত্যু ঝুঁকি থাকে না এবং মানুষ এমনিতেই সুস্থ হয়ে যায়। এসকল বিষহীন সাপে কামড়ানো ব্যক্তিকে নিয়ে গেলে ওই ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যায় এবং সকলেই মনে করে যে সাপুড়ের কেরামতিতে তিনি সুস্থ হয়েছেন। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই তাই নয়।
তিনি মূলত কোন বিষধর সাপে না কামড়ানোর ফলে সুস্থ হয়েছেন। যদি তাকে কোন বিষধর সাপে কামড়াতো এবং তিনি সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করে তাহলে তার মৃত্যু অনিবার্য! একারনে এসকল অজ্ঞতা থেকে বেড়িয়ে এসে আমাদের সকলকে সাপে কামড়ানোর সঠি চিকিৎসা পদ্ধতি জানতে হবে। তাহলে আসুন জেনে নেই কোন ব্যক্তিকে সাপে কামড়ালে তার করণীয় কি।
কোন ব্যক্তিকে যদি কোন সাপে কামড়ায় তাহলে প্রথমেই ওই আক্রান্ত ব্যক্তিকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। কখনোই উত্তেজিত হওয়া যাবে না এবং মনে ভীতির সঞ্চার করা যাবে না। কারণ মানুষের মনে ভীতি দেখা দিলে বা উত্তেজিত হয়ে গেলে রক্তচাপ প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। যার ফলে সাপের বিষ হৃদপিন্ডে এবং মস্তিষ্কে দ্রুত পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে সাপে কামড়ানো ব্যাক্তিকে মাথা ঠান্ডা রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
যদি কোন ব্যক্তিকে সাপে কামড়ায় তাহলে সাপ যদি বিষধর হয় বা বিষ মুক্ত হয় তাহলে ভয়ের কোন কারণ নেই। তাকে মাথা ঠান্ডা রেখে কোন কাপড়, তোয়ালে, গামছা, ওড়না বা মাফলার দিয়ে সাপে কাটা স্থানে কিছুটা উপরে বেঁধে নিতে হবে। তবে এই বেধে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।
আমরা অনেকেই মনে করে সাপে কাটার ফলে সাপে কাটা জায়গার উপরে যত শক্ত করে বেধে নেওয়া যায় ততই ভালো। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ সাপে কাটা স্থানের উপরে যদি আপনি কোন দড়ি বা স্যালাইনের নল দ্বারা শক্ত করে বেঁধে দেন তাহলে আপনার যেখানে সাপে কেটেছে সে জায়গাটা পচন ধরতে পারে। ধরুন কোন ব্যাক্তির পায়ে সাপে কামড়েছে সে যদি কামড়ানো স্থানের উপরে শক্ত করে বেধে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয় তাহলে তার পা টি পচন ধরতে পারে। এবং এরকম বাধা অবস্থায় যদি ৬ ঘন্টার বেশি থাকে তাহলে অবশ্যই অবশ্যই পায়ে পচন ধরবে। এমত অবস্থায় পা কেটে বাদ দেওয়া লাগতে পারে।
আমাদের দেহে রক্ত চলাচলের জন্য দুই ধরনের রক্তনালি থাকে একটি রক্তনালি কাজ রক্ত সমস্ত শরিরের পৌঁছে দেওয়া এবং অপরটির কাজ হলো রক্ত কে আবার হৃদপিণ্ডে ফেরত পাঠানো। যে রক্তনালি রক্ত বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গে সরবারহ করে সেটি মাংস পেশির ভিতরের দিকে অবস্থান করে। এবং যেটি রক্তকে হৃদপিণ্ডে পাঠায় সেটি মাংসপেশির উপরিভাগে থাকে। সাপে কামড়ানো ব্যাক্তির হৃদপিণ্ডে রক্ত পরিবহনকারী নালি বন্ধ করতে হবে। এবং যেহেতু এটি উপরিভাগে থাকে তাই খুব টাইট করে ডোর বাধার কোন প্রয়োজন নেই! ডোর বাধার পড়ে টাইট মনে হলে তা ঠিক করে দিতে হবে। সাপে কামড়ানো ব্যাক্তির এটাই হলো প্রাথমিক চিকিৎসা।
ডোর বাধা হয়ে গেলে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে। কখনোই ওঝা, ফকির বা সাপুরের কাছে নেওয়া চলবে না। যদি সাপুড়ে বা ওঝার কাছে নেওয়ার পরামর্শ আপনি দিয়ে থাকেন এবং সাপটি বিষধর হয়ে থাকে তবে সাপে কাটা ব্যাক্তির মৃত্যু হবে নিশ্চিত। এবং তার মৃত্যুর জন্য আপনি দায়ি থাকবেন।
তাই বিলম্ব না করে তাকে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান। এবং চিকিৎসার ব্যাবস্থা করুন। সঠিক সময়ে তাকে হাসপাতালে নিলে যত বিষধর সাপের কামড়ই হোক রোগির সুস্থ হওয়ার সম্ভবনা থাকে ৯৯%। এবং রোগির লক্ষন দেখেই ডাক্তার বুঝতে পারেন কোন সাপ তাকে কামড়েছে। সেমত অবস্থায় তিনি ব্যাবস্থা নেন।
মনে রাখবেন, আপনার সচেতনতা-ই বাঁচাতে পারে একটি প্রান!
সাপ তাড়ানোর উপায়
গ্রামাঞ্চলে সাপের উপদ্রপ সবচেয়ে বেশি থাকে কারন বন জঙ্গলে সাপের বাস আর তাই এখানে সাপের পরিমাণ ও বেশি থাকে। এ কারনেই সাপ তাড়ানোর উপায় আমাদের জানা উচিত। সাপের থেকে রক্ষা পেতে হলে বাড়ির আশপাশের সকল কিছু পরিস্কার রাখতে হবে ঝোপঝাড় কেটে ফেলতে হবে। এছাড়াও ব্যাঙ হচ্ছে সাপের খাবার এবং অধিকাংশ বাড়িতেই কুনো ব্যাঙ দেখা যায়। তাই এগুলো বাড়িতে থাকলে সাপ আসার সম্ভাবনা অনেক গুন বৃদ্ধি পায়। এ কারনে এগুলো তাড়াতে হবে। এছাড়াও গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে হাস মুরগির পালন হয়। হাস মুরগির বাচ্চা খেতে খামারে সাপ প্রবেশ করতে পারে। যখন এগুলোর দেখাশোনা করবেন তখন সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অনেকই মনে করেন কার্বোলিক এসিড রাখলে সাপ বাড়ির ত্রিসীমানায় আসবে না। এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। কারন কারবোলিক এসিডের গন্ধ সাপ পায় না। সাপের ঘ্রাণশক্তি খুবই কম। তাই এই ভ্রান্ত ধারণা পরিহার করতে হবে।
সাপ তাড়ানোর উপায়
গ্রামাঞ্চলে সাপের উপদ্রপ সবচেয়ে বেশি থাকে কারন বন জঙ্গলে সাপের বাস আর তাই এখানে সাপের পরিমাণ ও বেশি থাকে। এ কারনেই সাপ তাড়ানোর উপায় আমাদের জানা উচিত। সাপের থেকে রক্ষা পেতে হলে বাড়ির আশপাশের সকল কিছু পরিস্কার রাখতে হবে ঝোপঝাড় কেটে ফেলতে হবে। এছাড়াও ব্যাঙ হচ্ছে সাপের খাবার এবং অধিকাংশ বাড়িতেই কুনো ব্যাঙ দেখা যায়। তাই এগুলো বাড়িতে থাকলে সাপ আসার সম্ভাবনা অনেক গুন বৃদ্ধি পায়। এ কারনে এগুলো তাড়াতে হবে। এছাড়াও গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে হাস মুরগির পালন হয়। হাস মুরগির বাচ্চা খেতে খামারে সাপ প্রবেশ করতে পারে। যখন এগুলোর দেখাশোনা করবেন তখন সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অনেকই মনে করেন কার্বোলিক এসিড রাখলে সাপ বাড়ির ত্রিসীমানায় আসবে না। এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। কারন কারবোলিক এসিডের গন্ধ সাপ পায় না। সাপের ঘ্রাণশক্তি খুবই কম। তাই এই ভ্রান্ত ধারণা পরিহার করতে হবে।