বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যা ও সমাধানে আমাদের করনীয়
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা খুবই দুঃখজনক। বিশ্বের অন্যান দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা এবং আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার রাত দিন তফাৎ। যেখানে অন্য দেশে শিক্ষা ব্যাবস্থা যোগ্যতা নির্ভর সেখানে আমাদের দেশেরটা সম্পূর্ণ মূখস্ত নির্ভর! বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি সমূহের মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় দূর্নীতি। যার ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার হারাচ্ছে। এ কারনে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যা ও তার সমাধান গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা যাক!
একটি দেশ ও সমাজের উন্নতির মূল চাবিকাঠি হল শিক্ষা। একটি দেশ ও জাতির উন্নতির ৯০ ভাগ নির্ভর করে সেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর।যদিও আমাদের শিক্ষাবিদদের দাবি করে থাকেন আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা এখন অনেক উন্নত কিন্তু আসলেই কি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত? বর্তমানের প্রেক্ষিতে এই প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত তিন ভাগে বিভক্ত। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তর। পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক, সাত বছর মেয়াদি মাধ্যমিক এবং পাঁচ বছর মেয়াদি স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায় ।এছাড়াও মাদ্রাসা শিক্ষা, এবং কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা নামক আলাদা শিক্ষা খাত রয়েছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা খুব স্বল্প সংখ্যক থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন আমাদের জনসংখ্যা বেড়েছে,শিক্ষার্থী বেড়েছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নামী বেনামী, সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে শিক্ষার হার ছিল ১৬.৮% এবং বর্তমানে শিক্ষার হার প্রায় ৭২.৯%। অতএব শিক্ষার হার বেড়েছে, আমরা শিক্ষিত হচ্ছি সন্দেহ নাই কিন্তু দুঃখ জনক ভাবে সত্যি এটাই যে, এই শিক্ষা বা শিক্ষিতের হারটা শুধু মাত্র পরীক্ষার খাতা , আর পরীক্ষার রেজাল্টেই সীমাবদ্ধ। যার প্রমান আমরা বর্তমান শিক্ষার্থীদের দিক তাকালেই বুঝতে পারি।
আমাদের শিক্ষাবিদরা আমাদের শিক্ষা নিয়ে যত ফাঁকা বুলি আওড়ান না কেন বাস্তবতা হল বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছে। গত ১০ বছরে অর্থনীতির অগ্রগতি যতখানি হয়েছে,শিক্ষাব্যবস্থার অধঃপতন ঠিক ততখানি হয়েছে।
শিক্ষা ব্যবস্থা ধব্বংশের কিছু কারন
শিক্ষাব্যবস্থা ধব্বংশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা পালন করেছে "সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা"। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই পদ্ধতির প্রচলন করা হয়। সৃজনশীলতার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষকদের ভালোমত ধারনা না দিয়েই সৃজনশীল নামক শিক্ষাব্যবস্থাটা রাতারাতি শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেয়ার ব্যাপারটা ছিল শিক্ষাব্যবস্থা ধব্বংশের প্রথম পদক্ষেপ। এই পদ্ধতিতে সৃজনশীলতা বৃদ্ধির নামে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব সৃজনশীলতাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে । যার ফল রেজাল্ট বের হলেই GPA5 এর ছড়াছড়ি কিন্তু মেধার বিকাশের ক্ষেত্রে বেশীর ভাগ GPA5 দের অবস্থা " ভাঁড়ে মা ভবানী " অবস্থা।
শিক্ষাব্যবস্থা ধব্বংশের আরো অন্যতম প্রধান কারণ হল কোচিং বাণিজ্য। বর্তমানে সব স্থানে আলোচনার মূল কেন্দ্র বিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বিষয়টি। কোচিং শিক্ষকদের শিট পড়িয়ে ভালো রেজাল্ট করাবার আশ্বাস একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি বিমুখ করছে অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে ভালো ফলাফল করার মানসিকতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। বাবা মায়েরা ও তাই সন্তানের ভালো ফলাফল করবে এই আশাই স্কুল কিংবা কলেজের থেকে কোচিং সেন্টারকেই বেশী প্রাধান্য দিচ্ছেন। যার ফলে রমরমিয়ে চলছে কোচিং ব্যবসা। এমনকি কিছু অসাধু শিক্ষক বাড়তি টাকা আয়ের জন্য কোচিং সেন্টার খুলে বসেছেন এবং শিক্ষার্থীদের এক প্রকার বাধ্য করছেন তাদের কোচিং সেন্টার এ পড়ার জন্য। কোচিং ব্যবসা বন্ধের জন্য সরকারকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ দেখতে পাওয়া গেলেও বাস্তবে কার্যকর হয়নি কোনো পদক্ষেপই। যার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা ক্রমাগত পিছনের দিকেই যাচ্ছে।
আজ থেকে আরো দুই বছর আগে, প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী "নুরুল ইসলাম নাহিদ" এর আমলে আপনি এমন কোনো পাবলিক পরীক্ষার কথা মনে করতে পারবেন যেখানে প্রশ্ন ফাঁস হয় নি। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর প্রশ্ন পর্যন্ত ফাঁস হয়েছিল। এখন প্রশ্ন আসতে পারে কী লাভ প্রশ্ন ফাঁস করে। এর উত্তর হল আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক আজব প্রতিযোগীতায় নেমেছে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাশের হার কতখানি বেশী, এই নোংরা প্রতিযোগিতা প্রশ্ন ফাঁসের মত ঘটনার জন্ম দিচ্ছে এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে আস্তে আস্তে শেষ করে দিচ্ছে।
বাংলাদেশেই বোধ হয় একমাত্র দেশ যেই দেশ এত ঘন ঘন সিলেবাস পরিবর্তন করা হয়। পাঠ্য বই এত বার পরিবর্তন করা হয় যে যারা পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করেন তারা আদৌ সুস্থ মস্তিষ্কের কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শিশুদের মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখে এমন গল্প, কবিতা বিদেশে দিয়ে অমূলক গল্প, নাটক, দিয়ে সাজানো হচ্ছে । যা শিক্ষার্থীদের মানসিক শিক্ষা বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব রাখছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধব্বংশের আরো একটি অন্যতম প্রধান কারণ হল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান নোংরা রাজনীতি। একসময় ছাত্ররাজনীতি ছাত্রদের দেশের প্রতি ভালোবাসা শেখাতো, দেশ কে এগিয়ে নিতে শেখাতো। আর এখানের রাজনীতি ছাত্রদেরও অর্থের আর ক্ষমতার লোভ ছাড়া আর কিছুই শিক্ষা দেয় না। এই রাজনীতির ফাঁদে আটকে গিয়ে ছাত্ররা পড়াশোনার পথ ছেড়ে দিচ্ছে, তাদের ক্যারিয়ার ধব্বংশ করছে। এমনকী শিক্ষা খাত ও এই নোংরা রাজনীতির কাছে জিম্মি। যার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্নীতি গুলো দিন দিন বেড়েই চলেছে।
শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি
📚 এর থেকে পরিত্রাণের এক মাত্র উপায় শিক্ষা খাত কে দুর্নীতি মুক্ত রাখা।
📚 শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
📚 ছাত্ররা আমাদের ভবিষ্যত। দেশ যদি কারো হাত ধরে এগিয়ে যায় তবে সেই হাত হল শিক্ষার্থীরা। *শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে বানিজ্য বন্ধ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কে জাতি গঠনের কারখানা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
📚 শিক্ষা খাতের বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে।
📚 সৃজনশীল পরিক্ষা পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে।
📚 গ্রামীন অঞ্চলের শিক্ষা খাতকে শক্তি শালী করে গড়ে তুলতে হবে।
সর্বোপরি শিক্ষা খাতকে সমৃদ্ধ করতে সরকার এবং জনগন উভয়ের আন্তরিকতা থাকতে হবে। তবেই আমরা একটি আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবো।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত তিন ভাগে বিভক্ত। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তর। পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক, সাত বছর মেয়াদি মাধ্যমিক এবং পাঁচ বছর মেয়াদি স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায় ।এছাড়াও মাদ্রাসা শিক্ষা, এবং কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা নামক আলাদা শিক্ষা খাত রয়েছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা খুব স্বল্প সংখ্যক থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন আমাদের জনসংখ্যা বেড়েছে,শিক্ষার্থী বেড়েছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নামী বেনামী, সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে শিক্ষার হার ছিল ১৬.৮% এবং বর্তমানে শিক্ষার হার প্রায় ৭২.৯%। অতএব শিক্ষার হার বেড়েছে, আমরা শিক্ষিত হচ্ছি সন্দেহ নাই কিন্তু দুঃখ জনক ভাবে সত্যি এটাই যে, এই শিক্ষা বা শিক্ষিতের হারটা শুধু মাত্র পরীক্ষার খাতা , আর পরীক্ষার রেজাল্টেই সীমাবদ্ধ। যার প্রমান আমরা বর্তমান শিক্ষার্থীদের দিক তাকালেই বুঝতে পারি।
শিক্ষা ব্যবস্থা ধব্বংশের কিছু কারন
শিক্ষাব্যবস্থা ধব্বংশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা পালন করেছে "সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা"। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই পদ্ধতির প্রচলন করা হয়। সৃজনশীলতার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষকদের ভালোমত ধারনা না দিয়েই সৃজনশীল নামক শিক্ষাব্যবস্থাটা রাতারাতি শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেয়ার ব্যাপারটা ছিল শিক্ষাব্যবস্থা ধব্বংশের প্রথম পদক্ষেপ। এই পদ্ধতিতে সৃজনশীলতা বৃদ্ধির নামে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব সৃজনশীলতাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে । যার ফল রেজাল্ট বের হলেই GPA5 এর ছড়াছড়ি কিন্তু মেধার বিকাশের ক্ষেত্রে বেশীর ভাগ GPA5 দের অবস্থা " ভাঁড়ে মা ভবানী " অবস্থা।
শিক্ষাব্যবস্থা ধব্বংশের আরো অন্যতম প্রধান কারণ হল কোচিং বাণিজ্য। বর্তমানে সব স্থানে আলোচনার মূল কেন্দ্র বিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বিষয়টি। কোচিং শিক্ষকদের শিট পড়িয়ে ভালো রেজাল্ট করাবার আশ্বাস একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি বিমুখ করছে অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের নিজের মেধা কাজে লাগিয়ে ভালো ফলাফল করার মানসিকতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। বাবা মায়েরা ও তাই সন্তানের ভালো ফলাফল করবে এই আশাই স্কুল কিংবা কলেজের থেকে কোচিং সেন্টারকেই বেশী প্রাধান্য দিচ্ছেন। যার ফলে রমরমিয়ে চলছে কোচিং ব্যবসা। এমনকি কিছু অসাধু শিক্ষক বাড়তি টাকা আয়ের জন্য কোচিং সেন্টার খুলে বসেছেন এবং শিক্ষার্থীদের এক প্রকার বাধ্য করছেন তাদের কোচিং সেন্টার এ পড়ার জন্য। কোচিং ব্যবসা বন্ধের জন্য সরকারকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ দেখতে পাওয়া গেলেও বাস্তবে কার্যকর হয়নি কোনো পদক্ষেপই। যার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা ক্রমাগত পিছনের দিকেই যাচ্ছে।
বাংলাদেশেই বোধ হয় একমাত্র দেশ যেই দেশ এত ঘন ঘন সিলেবাস পরিবর্তন করা হয়। পাঠ্য বই এত বার পরিবর্তন করা হয় যে যারা পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করেন তারা আদৌ সুস্থ মস্তিষ্কের কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শিশুদের মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখে এমন গল্প, কবিতা বিদেশে দিয়ে অমূলক গল্প, নাটক, দিয়ে সাজানো হচ্ছে । যা শিক্ষার্থীদের মানসিক শিক্ষা বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব রাখছে।
শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি
📚 এর থেকে পরিত্রাণের এক মাত্র উপায় শিক্ষা খাত কে দুর্নীতি মুক্ত রাখা।
📚 শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
📚 ছাত্ররা আমাদের ভবিষ্যত। দেশ যদি কারো হাত ধরে এগিয়ে যায় তবে সেই হাত হল শিক্ষার্থীরা। *শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে বানিজ্য বন্ধ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কে জাতি গঠনের কারখানা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
📚 শিক্ষা খাতের বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে।
📚 সৃজনশীল পরিক্ষা পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে।
📚 গ্রামীন অঞ্চলের শিক্ষা খাতকে শক্তি শালী করে গড়ে তুলতে হবে।