আমেরিকা আবিষ্কারের ইতিকথা
আমেরিকা আবিষ্কারের ইতিকথা আমেরিকানরা সারা বছর যত ছুটি পালন করে তার মধ্যে অক্টোবরের দ্বিতীয় সোমবার তাদের জন্য খুবই বিশেষ একটি দিন। আমেরিকার আবিষ্কারক ক্রিস্টোফার কলম্বাসের অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতেই জাঁকজমক ভাবে দিনটি অতিবাহিত করে। ১২ অক্টোবর ১৪৯২ কলম্বাস আমেরিকার ভূমিতে প্রথম পা রাখেন। তবে “কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন” এটি বলার চেয়ে “কলম্বাস আমেরিকাকে পশ্চিম ইউরোপের সাথে পরিচিত করিয়ে দিয়েছিলেন” এই কথাটি বলাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। ১৪৯২ থেকে ১৫০২ সাল, এই সময়টাতে তিনি তার বিখ্যাত চার অভিযান পরিচালনা করেন যার পথ ধরেই কানাডার উত্তর প্রান্ত থেকে চিলির দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত সব জায়গাতেই নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন করেছে স্প্যানিশ-পর্তুগিজ-ডাচ-ব্রিটিশ-ফ্রেঞ্চরা। কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন কথাটা সর্বগ্রাহ্য হলেও মূল প্রশ্নটি থেকেই যায়, “আমেরিকার প্রথম আবিষ্কারক কে বা কারা”? চলুন আজ সেই প্রশ্নটির উত্তরই খোঁজা যাক।
পলিনেশিয়া
প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ভাসমান বিশাল পলিনেশিয়ান ত্রিভূজের এক পাশে রয়েছে কিউইদের নিউজিল্যান্ড, বাকি দুই কোণায় ইস্টার আইল্যান্ড এবং হাওয়াই দ্বীপ। বলা হয়ে থাকে , প্রশান্ত মহাসাগরে ডুবে থাকা এই দুইটি দ্বীপই আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে কাছের । তবে পলিনেশিয়ানরা আমেরিকায় সত্যিই পা দিয়েছিল কিনা তার একেবারে নিখুঁত প্রমাণ না মিললেও তারা যে কখনো না কখনো আমেরিকায় পা ফেলেছিল তার বহু প্রমান পাওয়া গিয়েছিল।
ইতিহাসবিদদের মতে, পলিনেশিয়ানরা পিটকেয়ার্ন এবং ইস্টার আইল্যান্ডে বসবাস শুরু করা শুরু করেছিল। এর কিছুদিন পরেই সেখানে উপস্থিত হয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসীরা। তবে বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই মনে করেন যে, সাগরের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা পলিনেশিয়ানদের প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেওয়া অসম্ভব কিছু নয় ।তারা চিলির উপকূলের আদিবাসীদের সাথে নিজেদের সহায়-সম্বল, সংস্কৃতির আদান-প্রদান করেছিল এবং আমেরিকান নারীদের নিয়ে তাদের নিজ অন্ঞ্চলে ফিরে গিয়েছিল।
ভাইকিং
পলিনেশিয়ানরা প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকায় পৌঁছানোর আরও অনেক আগে আরো এক জাতি উত্তর আমেরিকায় নিজেদের পা রেখেছিল। এর্রা হল ভাইকিং। বিখ্যাত ভাইকিং এরিক দ্য রেড (৯৫০-১০০৩) আনুমানিক ৯৮২ সালের দিকে পশ্চিম দিকে অভিযান পরিচালনা করেন এবং খুঁজে পান বর্তমান গ্রিনল্যান্ড। তার ছেলে লেইফ এরিকসন (৯৭০-১০২০) আরও ভাল কোনো জায়গা খুঁজে পাওয়ার আশায় গ্রিনল্যান্ডের উপকূল ধরে খোঁজা শুরু করেন এবং এগিয়ে যান আরও দক্ষিণে। বলা হয় যে , গ্রিনল্যান্ড থেকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় ফিরে আসার সময় তার জাহাজ ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে আরও দক্ষিণে চলে আসে এবং তিনি উত্তর আমেরিকার নোভা স্কটিয়া নামক জায়গাটি খুঁজে পান। ঝড় থেকে অলৌকিক ভাবে বেঁচে যাওয়ায় তাকে ‘লেইফ দ্য লাকি’ উপাধি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে লেইফ এরিকসন সেখানে বসতি স্থাপন করেন এবং ঐখানেই লা’নসে অক্স মিডৌ নামের স্থাপনাটিতেই ভাইকিংদের তৈরি ঘরবাড়ির নিদর্শন পাওয়া যায়, যা এখনো বর্তমান।
তবে কিছু ইতিহাস বিদের মতে, লেইফ এরিকসনের আগেও ৯৮৫-৮৬ সালের দিকে বিয়ার্নি হেরলুফসন ভিনল্যান্ডে পা রাখেন। তবে এই ব্যাপারে কোনো নিখুঁত প্রমাণ না পাওয়ায় তা নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করা হয়নি। ভাইকিংরা আমেরিকায় বসতি স্থাপন করলেও তারা বেশিদিন সেখানে টিকতে পারে নি। আমেরিকান আদিবাসীদের তাড়া খেয়ে ভিনল্যান্ড থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে স্ক্যান্ডিনেভিয়াতেই ফিরে
সাইবেরিয়ান
আমেরিকা আবিষ্কার কোনো ৫০০ বা ১০০০ বছরের ঘটনা নয়। আমেরিকা আবিষ্কার হয়েছিল আজ থেকে অন্তত ২৩ হাজার বছর আগে! বলা যায়, ভাইকিংরা যাদের তাড়া খেয়ে পালিয়েছিল; ইউরোপিয়ানদের আনা প্লেগে যাদের সবংশে উজাড় হয়েছিল ; সেই মায়া-অ্যাজটেক-ইনকা সভ্যতাসহ সব প্রাচীন আদিবাসীরা আমেরিকা এসেছিল বেরিং প্রণালী পাড়ি দিয়ে শীতল সাইবেরিয়া থেকে!
দক্ষিণ সাইবেরিয়ার আলতাই পর্বতমালার লোকজনদের সাথে নেটিভ আমেরিকানদের ডিএনএ পরীক্ষা করার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন যে সাইবেরিয়ানরাই সর্বপ্রথম আমেরিকা আবিষ্কার করেছিল। গবেষণার জন্য আমেরিকা মহাদেশের প্রতিটি দেশ এবং প্রশান্ত মহাসাগরে অন্যান্য দেশসহ প্রায় ৯০টি দেশের লোকজনের প্রায় ২৫ হাজার স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয় যাতে দেখা যায়, আলতাই পর্বতমালার মানুষদের সাথে নেটিভ আমেরিকানদের অনেক মিল রয়েছে।