নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কি এবং এমএলএম বিজনেস সম্পর্কে বিস্তারিত খুটিনাটি

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং শব্দটির সাথে আমরা অনেকেই নতুন পরিচিত হয়েছি আবার অনেকেই আগে থেকে জানেন! নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কে এম এল এম বিজনেস (MLM- Multi Level Marketing) ও বলা হয়। আমরা বিভিন্ন ধরনের মার্কেটিং সম্পর্কে শুনেছি। যেমন ফেইসবুক বা সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, সিপিএ মার্কেটিং ইত্যাদি। আর এখন এরই সাথে আমরা এই নতুন নামটির সাথে পরিচিত হলাম। প্রকৃত পক্ষে এফিলিয়েট মার্কেটিং বা অন্যান্য মার্কেটিং হতে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং একটু ভিন্ন ধরনের। এর নাম নেটওয়ার্ক মার্কেটিং হলেও আপনি কাজটি চাইলে অফলাইনেও করতে পারবেন। এফিলিয়েট মার্কেটিং এর থেকেও বহুমাত্রিক সুবিধা সম্বলিত! তবে এসকল সুবিধার মধ্যেও কিছু ফাক রয়েছে যা না জানলে কি হতে পারে তা পোস্টটি পড়লেই বুঝতে পারবেন!
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এমএলএম বিজনেস
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কি বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কাকে বলে- নেটওয়ার্ক মার্কেটিং হলো একটি গাছের মত বলা যেতে পারে। যেমন একটি গাছের শুরু হয় একটি কান্ড হতে যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বহু শাখা প্রশাখা সৃষ্টি করে। এখানেও প্রথমে একজন ব্যক্তি দ্বারা শুরু হবে এবং তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বৃহৎ আকার ধারন করবে। যেমন, ১ জন থেকে ৫ জন, ৫ জন থেকে ২৫ জন, ২৫ জন থেকে ১২৫ জন এভাবেই দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। এবং এ কারনেই এর নাম দেওয়া হয়েছে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং)।

এছাড়াও নেটওয়ার্ক মার্কেটিং (Network Marketing) কে পিরামিড সেলিং (pyramid selling), মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এমএলএম (Multi-level marketing (MLM), রেফারেল মার্কেটিং (referral marketing) বলেও বলা যেতে পারে।

এটির মাধ্যমে ব্যবসায়কে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকলের নিকট পৌঁছে দিতে পারে। এবং কোন প্রকার মধ্যস্ততাকারী ছাড়াই পন্য সরাসরি ভোক্তার নিকট পৌছানোই হলো নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ পন্য উৎপাদনকারী থেকেই সরাসরি ভোক্তার নিকট পৌছাবে৷ কোন পাইকারি বা খুচরা ব্যবসায়ির কোন ভূমিকা এখানে থাকবে না।

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা এম এল এম এর ইতিহাস- আমরা এই শব্দটির সাথে নতুন পরিচিত হলেও এর উৎপত্তি বহু পুরাতন। সনাতন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা এমএলএম বিজনেস আইডিয়া তৈরি হয়েছিল "হেনরি হেইনজ" নামে আমেরিকার এক ফেরিওয়ালার মাধ্যমে। তখন সময়টা ছিল ১৯২০ সাল। কিন্তু ১৯৩০ সালে আধুনিক এমএলএম-এর জন্ম হয়।

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর কাজ কি- নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর কাজ হলো কোন পন্য বা সেবা একাধিক ব্যাবহারকারীর নিকট পৌছানো। এবং এখানে দুইটি বিষয় কাজ করে তা হলে এফিলিয়েট মার্কেটিং এবং রেফারেল সিস্টেম। এফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing) সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো কোন কোম্পানির পন্য কমিশনের ভিত্তিতে বিক্রির জন্য ক্রেতা সংগ্রহ করে দেওয়া। পক্ষান্তরে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এ ক্রেতার সাথে সাথে মার্কেটার খোঁজার মাধ্যমেও আয় করা যায় নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা  এমএলএম বিজনেসের মাধ্যমে। অর্থাৎ যখন আপনার মাধ্যমে কোন ব্যাক্তি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা MLM নেটওয়ার্কে জয়েন করবে তখন তার আয়েরও একাংশ আপনি পাবেন। এবং এই আয় কয়েক স্তর পর্যন্ত আয়ের উপর নির্দিষ্ট পরিমান শতাংশ হারে বিস্তৃত হতে পারে। যা ঠিক করে সম্পুর্ন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানি। তাহলে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং করে আপনি খুব সহজেই একটা মোটা অঙ্কের টাকা আয় করতে পারবেন। এবং যদি আপনি পন্য বিক্রি বাদেই শুধু মার্কেটার খোজার কাজ করেন তাহলে একসময় বিনা পরিশ্রমে একটা মোটা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।

ইনভেস্ট করে আয়ের আগে আরেকবার ভাবুন!

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর সুবিধা- নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো চাইলে আপনি ঘরে বসেই পছন্দসই সময় কাজ পরিচালনা করতে পারবেন। এবং ধরাবাঁধা সময় নিয়ে কাজ করতে হবে না। এবং আপনি যদি অধিক সংখ্যক মানুষকে আপনার ডাউন লাইনে লোককে জয়েন করাতে পারেন তাহলে আপনার আর কাজ করতে হবে না। বরং আপনার কাজ করে দিবে আপনার ডাউনলাইনের লোকেরা।

আপনি যদি আপনার আয়ের আপনার আয়ের ২০% লভ্যাংশ পান এবং আপনার ফার্স্ট লেভেল রেফারেল হতে তাদের আয়ের ১০% এবং আপনার ফার্স্ট লেভেলে ২০ জন রেফারেল থাকে তাহলে আপনি তাদের একজনের আয়ে ডাবল পাচ্ছেন শুধুমাত্র তাদের জয়েন করানোর জন্য। এরপরে আসছে সেকেন্ড লেভেল রেফারেল তাদের থেকে যদি ৫% রেফারেল কমিশন পান। এবং ফার্স্ট লেভেলের সকলের ১০ জন করে থাকে তাহলে তাদের আয়ের ২০*১০*৫=১০০০% তাহলে বুঝতেই পারছেন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা এমএলএম বিজনেস-কে কেন এতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়!

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা এমএলএম বিজনেস - বিশ্বের অনেক দেশে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বৈধ হলেও বাংলাদেশে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা এমএলএম বিজনেস সরকার কতৃক সম্পুর্ন অবৈধ। ঘোষণা করা হয়েছে। এখন আমাদের সকলের মনেই একটা প্রশ্ন তৈরি হতে পারে যে, " নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা এমএলএম বিজনেস এতোটা সহজ উপায় আয়ের জন্য কিন্তু সরকার এটিকে অবৈধ ঘোষণা করলো কেন?" এই প্রশ্নের উত্তর আমরা সহজেই পেয়ে যাবো যখন আমরা বাংলাদেশের কিছু নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা এমএলএম বিজনেস কোম্পানি সম্পর্কে সামান্য পরিমান রিসার্চ করবো। কারন বাংলাদেশে এমন কোন এমএলএম বিজনেস কোম্পানি তৈরি হয় নাই যারা সততার সঙ্গে ব্যাবসা পরিচালনা করেছে। তাদের সকলের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতারনা। এরকম-ই একটি প্রতারক কোম্পানির নাম ডেসটিনি। এছাড়াও ব্যাঙের ছাতার মতো ছড়িয়ে আছে হাজারো MLM কোম্পানি। 

তারা মানুষের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে এক সময় টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এবং এদের মূল টার্গেট থাকে বেকার হতাশাগ্রস্ত যুবক যুবতী যারা তাদের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে চাইলেও বিভিন্ন পদক্ষেপে তারা ব্যর্থ। এ কারনে তারা সহজ আয়ের প্রলোভনে পড়ে তাদের শেষ সম্বল খুয়িয়ে এই ব্যাবসার সঙ্গে যুক্ত হয়। এবং টাকা বিনিয়োগ করার পরেই তারা এর ফাক ফোকর জানতে শুরু করে এবং নতুন নতুন প্রলোভনে তখন তারা লাভ ক্ষতি না হিসাব করেই নতুন যুবক যুবতীদের টার্গেট করে। এটা ঠিক "লেজ কাটা শিয়ালের গল্পের মত" এভাবে MLM নেটওয়ার্ক বড় হতে থাকে। এর ভিতর থেকে কয়েক জন লাভবান হতে পারলেও সিংহভাগই সর্বশান্ত হয়ে যায়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url