রচনা: পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ
রচনা:পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ
অথবা, পলিথিনমুক্ত পরিবেশ
অথবা, পলিথিনমুক্ত বাংলাদেশ
অথবা, পলিথিন বর্জন রচনা
অথবা, প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে প্রতিবেদন রচনা
অথবা, পলিথিন ব্যবহারের কুফল
অথবা, প্লাস্টিক বর্জন রচনা
অথবা, প্লাস্টিক দূষণ রচনা
অথবা, প্লাস্টিক ব্যবহারের কুফল
অথবা, পলিথিন বর্জন রচনা
অথবা, প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে প্রতিবেদন রচনা
অথবা, পলিথিন ব্যবহারের কুফল
অথবা, প্লাস্টিক বর্জন রচনা
অথবা, প্লাস্টিক দূষণ রচনা
অথবা, প্লাস্টিক ব্যবহারের কুফল
(সংকেত: ভূমিকা–পলিথিন কী—পলিথিনের ব্যবহার পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার–পরিবেশের অবস্থা পলিথিন নিষিদ্ধকরণে সরকারি উদ্যোগ–পলিথিনমুক্ত পরিবেশ ও জনগণের প্রতিক্রিয়া পলিথিনের বিকল্প উদ্ভাবন—উপসংহার)
ভূমিকা: আপাতদৃষ্টিতে পলিথিন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক বেশি উপযােগী মনে হলেও এর ক্ষতিকর প্রভাব সুদূর প্রসারী। পলিথিন আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মানুষের প্রয়ােজনেই পলিথিন ব্যবহার শুরু; কিন্তু অচিরেই দেখা গেল তা যতটা না আমাদের আরামের জন্যে তার চেয়ে অনেক বেশি আমাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। আর তাই পরিবেশ সচেতন মহলের অভিমত, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে পলিথিন বন্ধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পলিথিন কী: পলিথিন হলাে পলিইথিলিনের এক ধরনের পলিমার যৌগ। এ রাসায়নিক পদার্থ ভেঙে অন্য কোনাে পদার্থে রূপান্তরিত হয় না। যেহেতু ভাঙে না, মিথেন কিংবা কার্বন ডাইঅক্সাইডে পরিণত হলে পলিথিন কোনাে সমস্যাই নয়। কিন্তু যেহেতু রূপান্তর নেই, সুতরাং এটি পচে না। আর পচে না বলেই পলিথিন পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এটি অত্যন্ত বিষাক্ত প্রােপাইলিনের সঙ্গে পেট্রোলিয়াম হাইড্রোকার্বনের ৩/৪টি মলিকুলের সমন্বয়ে তৈরি হয়।
পলিথিনের ব্যবহার: পলিথিন অনায়াসলভ্য এবং বাঙালি এটি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। শুধু ঢাকা শহরেই প্রতিদিন প্রায় এক কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হতাে। ব্যবহৃত এ পলিথিনের প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যবহারের পরই পরিত্যক্ত হতাে। পলিথিন নানা ধরনের মারাত্মক রােগের সূত্রপাত ঘটায়। পলিথিন ব্যাগে রাখা খাবারও বিষাক্ত হয়ে যায়। এটি পােড়ালে যে গ্যাস উৎপন্ন হয় সেই গ্যাস বায়ুকে বিষাক্ত করে তােলে। পলিথিনের বদলে পাটজাত পণ্য ব্যবহার করলে পরিবেশ দূষিত হয় না। অন্যদিকে আমরা অর্থনৈতিকভাবেও সাশ্রয়ী হতে পারব।
পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার: সারা দেশে ছড়িয়ে আছে পলিথিন তৈরির কারখানা। ঢাকার লালবাগ, পােস্তগােলা এবং নবাবগঞ্জে পলিথিনের কারখানায় প্রচুর পলিথিন উৎপাদিত হতাে। মাত্র ২৫ পয়সায় একটি পলিথিন ব্যাগ কিনতে পাওয়া যেত। সহজলভ্যতা ও সস্তার কারণে পলিথিনের ব্যবহার যত্রতত্র দেখা যেত। এমনকি শেষের দিকে পণ্য কিনতে গেলে সাথে ফ্রি পলিথিন পাওয়া যেত। এক টাকার। একটি দ্রব্য কিনলেও সাথে একটি ছােট্ট পলিথিন ব্যাগ দেওয়া হতাে। আর এসব পলিথিন ব্যবহারের পরই পরিত্যক্ত হতাে। ফলে পরিত্যক্ত পলিথিনে পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতাে।
পরিবেশের অবস্থা: পলিথিন পচনশীল নয়, তাই এটি মাটির সঙ্গে মিশে না গিয়ে সূপ তৈরি করে। ড্রেনের মধ্যে জড়াে হয়ে পলিথিন জল নিষ্কাশনে সমস্যা তৈরি করে। জমির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। ফলে ফলন ব্যাহত হয়। মাটির নিচে দীর্ঘদিন থাকলেও পলিথিন যেহেতু পচে না, কাজেই গাছপালা ঠিকমতাে বাড়তে পারে না। ঢাকার পাশের বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদী ভরে উঠছে পলিথিন ব্যাগে। পরিত্যক্ত পলিথিন কোনাে কাজেই আসে না। যেহেতু পচে না, পুনরায় ব্যবহারও করা যায় না, তাই দিন দিন এর পরিমাণ বাড়তে বাড়তে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করছিল।
পলিথিন নিষিদ্ধকরণে সরকারি উদ্যোগ: বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় পলিথিন নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১ জানুয়ারি ২০০২ থেকে ঢাকা শহরে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘােষণা করা হয়। এর বিকল্প হিসেবে কাপড়ের বা চটের ব্যাগ ব্যবহারের কথা বলা হয়। এর ঠিক এক মাস পরে চট্টগ্রাম নগরীকে পলিথিনমুক্ত করা হয়। আর সারাদেশে ২ মার্চ ২০০২ তারিখ থেকে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়। সরকারি প্রচার মাধ্যমে পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা হয়। সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে, জনগণ সরকারের এ উদ্যোগকে ব্যাপক ভাবে স্বাগত জানিয়েছে।
পলিথিনমুক্ত পরিবেশ ও জনগণের প্রতিক্রিয়া: শুধু পরিবেশ রক্ষা করাই নয়, জাতীয় পর্যায়ে যে কোনাে কাজে সফলতা অর্জন করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পলিথিন ব্যাগ যে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, সরকার সেটি জনসাধারণকে বােঝাতে সক্ষম হয়। সারা দেশ থেকে পলিথিন উঠে যাওয়ায় জনমনে স্বস্তির নিঃশ্বাস বয়ে গেছে। কারণ পলিথিন পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। শহর, বন্দর ও গ্রাম সর্বত্র পরিত্যক্ত পলিথিনে নােংরা হয় পরিবেশ, মাটির উর্বরতা যায় কমে, কৃষির ব্যাপক ক্ষতি।
পলিথিনের বিকল্প উদ্ভাবন: পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করণের পাশাপাশি জনগণের জন্য বিকল্প উদ্ভাবন করা খুব জরুরি। আর এক্ষেত্রে পাট ও কাগজের ব্যবহার সবার মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। প্রতিদিন যে পরিমাণ পলিথিন ব্যবহার করা হতাে সেই হারে ব্যাগ যােগান দেবে পাট ও কাগজের পলিথিন। পলিথিন বাংলাদেশে আসার পূর্বে তাে মানুষ পাটের/চটের ব্যাগ ও কাগজের ঠোঙ্গা ব্যবহার করত। পলিথিনের প্রভাবে আশির দশক থেকে এটির ব্যবহার কমে গিয়েছিল। জনগণ আবার তার পূর্বের অভ্যাসে ফিরে যাবে, গেছেও তাই। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এক সময় পাটের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। আজ আবার, দেশের অভ্যন্ত্ৰীণ চাহিদা মেটাতে পাটের কদর বেড়েছে। পাটজাত দ্রব্য আমাদের দেশে সমাদৃত হচ্ছে। কাজেই পলিথিনমুক্ত পরিবেশ আমাদের জনসাধারণের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে ব্যাপক। আবার পাটজাত পণ্য ও কাগজের ব্যাগের বহুবিধ ব্যবহারের ফলে দেশীয় শিল্প আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
উপসংহার: পলিথিন ছিল সহজলভ্য ও অত্যন্ত সস্তা। ফলে ক্ষতিকর এ পণ্যের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছিল হু হু করে। অনেক দিন ধরেই পলিথিন বন্ধের ব্যাপারে নাগরিক সমাজে একটি দাবি উঠে আসছিল। পরিবেশবাদীদের সচেতনতা ও পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে দেশকে পলিথিন মুক্ত করার ব্যাপারে গুরুত্ব আরােপ করা হয়। বিবেক বান মানুষ মাত্রই ছিল পলিথিনের বিরুদ্ধে। পলিথিন ব্যবহারের ফলে নানা ধরনের রােগ এবং নানামাত্রিক সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছিল প্রতিনিয়ত। আবার বর্তমানে আমরা কাগজ ও পাটজাত দ্রব্য থেকে উৎপাদিত ব্যাগ ব্যবহার করে দেশীয় অর্থনীতিতে গতির সন্ধান করার প্রয়াস পাচ্ছি। তবে কথা হলো, ২ মার্চ সারাদেশে পলিথিন বন্ধ হলেও এখনাে পলিথিন অন্যভাবে বাজারে আসছে। কাজেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। কেউ এ পলিথিন গােপনে উৎপাদন করলে সঙ্গে সঙ্গে আইন প্রয়ােগকারী সংস্থার কাছে বিষয়টি অবহিত করতে হবে।