সফলতা কি ও অর্জনের উপায় এবং সফলতার গল্প

কীভাবে সফলতা অর্জন বা উন্নতি করা যায় - জীবনে সফল হতে কে না চায়? এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি জীবনে সফলতা নামক সোনার হরিণ টি পেতে চান না। কিছু জিনিস মনে রাখলে এবং কিছু জিনিস এড়িয়ে চললে সফলতা অর্জন করা খুব একটা কঠিন ব্যাপার নয়। অনেকে আছে যারা অন্যান্য বিষয়ে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজের সফলতার দিক থেকে সরে যায়।
সফলতা অর্জনের উপায়
অনেকে বলে থাকে সফলতা ব্যাক্তির প্রতিভার উপর নির্ভর করে। কিন্তু যদি আমরা অন্যান্য সফল ব্যাক্তিদের জীবনে তাকাই, তাহলে দেখব তাদের জীবনে সফলতা অর্জনের প্রধান চাবিকাঠি ছিল তাদের প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি, তাদের পরিশ্রম এবং তাদের একাগ্রতা।
অনেকেই আছে যারা অল্পেই হতাশ হয়ে পড়ে। অল্পতেই ভেঙে পড়ে জীবনে আর যাই হোক কখনো সফলতা লাভ করা যায় না।  একটি নতুন কাজ করতে গেলে ভুল হতেই পারে, ফলাফল আশানুরূপ নাই হতে পারে কিন্তু সেজন্য হতাশ হয়ে পড়লে চলবে না। কিছু শুরু করলে মাঝপথে সেটাকে  ছেড়ে না দিয়ে সব সময় শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাবে। তাহলেই দেখবে সফলতা নামক সোনার হরিণ টি ঠিকই ধরতে পেরেছো। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, "failure is the pillar of success" অর্থাৎ আপনি ব্যার্থতা ছাড়াই যদি সফলতা অর্জন করতে চান চাহলে আপনি কখনোই সফলতা অর্জন করতে পারবেন না। তাই ব্যর্থতার গ্লানিকে সাদরে গ্রহন করে নিয়ে সফলতার জন্য চেষ্টা করেন তাহলে অবশ্যই সফল হতে পারবেন!
সফলতা কি
সফলতার আসলে কোনো নিজস্ব সংজ্ঞা নেই। এক একজনের কাছে সফলতার সংজ্ঞা এক একরকম। কারো কাছে অনেক অর্থ, বিলাস বহুল জীবন, সরকারী চাকুরী মানেই সফলতা,  কারো কাছে সমাজের মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে পারাই সফলতা, কারো কাছে জীবনে একটু ভালোভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারাই সফলতা ,আবার কারো কাছে সন্তানের সফলতাই নিজের সফলতা। অর্থাৎ সফলতার ব্যাখ্যা এক একজনের কাছে একরকম। প্রতিটি ব্যাক্তি তার নিজ নিজ জায়গা থেকে সফলতার বিচার করে থাকেন।
উপেক্ষা করতে হবে লোকলজ্জা
" তুমি করবে ব্যবসা? এসব তোমার মত লোকের জন্য না। তোমাকে দিয়ে এসব হবে না ।" " মেয়ে হয়ে সেনাবাহিনীতে চাকরি করবে? ওখানে কত কষ্ট জানো? পারবে না ওসব তুমি। সবার জন্য সবকিছু না।" " কি হতে চাও? সরকারী চাকুরি জীবি? বলি তোমার একাডেমীক রেজাল্ট কি? রেজাল্ট ভালো না আবার সরকারী চাকুরি করতে চাও? গরিবের ঘোড়ারোগ আর কি।"
এই কথা গুলো আমাদের সবাইকে জীবনে কোনো না সময়ে শুনতেই হয়। আপনি যখন কোনো ভালো উদ্যোগ নেবেন তখন সমাজের কিছু মানুষ চাইবে আপনাকে টেনে নামাতে, আপনাকে থামিয়ে দিতে এবং দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই বাধা টা আমরা সমাজের মানুষের থেকে যতটা পাই তার চেয়েও বেশী বাধা আসে আমাদের পরিবারের দিক থেকে। এসব পিছে কথা বলা মানুষগুলো বার বার আপনার মনোবল ভেঙ্গে দিতে চাইবে। আপনি হেরে গেলে এরাই সবচেয়ে বেশি খুশি হবে। 
জীবনে সফল হতে হলে এই মানুষ গুলোকে এড়িয়ে যেতে হবে। যে যাই বলুক, তোমাকে তোমার লক্ষ্যে ঠিক থাকতে হবে। মানুষের নেগেটিভ কথা গুলোকে তোমার ইচ্ছাশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। তবেই দেখবে তোমার জীবনের সফলতা তোমাকে সহজেই ধরা দিয়েছে। এর থেকে সহজেই আমরা বুঝতে পারি জীবনে সফলতা অর্জনে সমালোচনা ও লোকলজ্জা উপেক্ষা করা জরুরি কেন! 
সফলতার গল্প
*সাইচিরো হোন্ডা- জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়া  এক সৈনিকের নাম সইচিরো হোন্ডা- যিনি বারংবার ব্যার্থ হওয়ার  পর ও সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন এবং হয়েছেন। ছোটবেলা থেকে কলকব্জা নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসতেন তিনি। মাত্র পনেরো বছর বয়সে বাড়ি থেকে বের হয় যান হোন্ডা ।কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তার ছিল না। জীবিকার তাগিদে চলে যান রাজধানী শহর টোকিওতে এবং কাজ নেন একটি গ্যারেজে। সেখানে তিনি কলকব্জা পরিষ্কার ও মালিকের বাচ্চাদের দেখাশোনা করতেন। ইচ্ছে ছিল টয়োটা কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করবে কিন্তু চাকরিটা কপালে জোটেনি। কিন্তু তাই বলে তিনি থেমে যায়নি। নিজ ঘরে বাসেই বানাতে শুরু করেন স্কুটার। রাতের পর রাত নিরলস পরিশ্রম করে যান। ১৯৪৬ সালে তার স্বপ্ন পূর্নতা পায়। তৈরি করেন মোটরচালিত সাইকেল এবং ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন “হোন্ডা মোটর কোম্পানি”। শ্রম ও সাধনার বদৌলতে এ কোম্পানি হয়ে উঠে বিশ্ববিখ্যাত হোন্ডা কোম্পানি।
জ্যাক মা
চীনের ব্যবসায়ী এবং আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা সারা পৃথিবীর ব্যবসায়ী ও উদ্যাক্তাদের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম ।  বার বার ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হয়েও তিনি কখনো  ভেঙ্গে পড়েননি। সফলতার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে হেঁটে গিয়েছেন দুর্গম পথে। চীনের জাতীয় কলেজ থেকে  উত্তীর্ণ হতে সময় লেগেছে তিন বছর। যেখানে বছরে মাত্র একবার সুযোগ দেয়া হয়, সেখানে জ্যাক মার লেগেছে তৃতীয় চান্স। হাভার্ডে ভর্তির জন্য  দশবার আকবেদন করেও ব্যর্থ হয়েছেন। হোঁচট খেতে হয়েছে চাকুরী বাজারেও। ছোট বড় প্রায় ত্রিশটি কোম্পানিতে আবেদন করেও কোন সুফল পাননি ।  পুলিশের চাকুরীতে আবেদন করেও ব্যর্থ হয়েছেন এমনকি তার শহরে কেএফসি চালু হলে সেখানেও আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছেন। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। সফলতার স্বপ্ন দেখেছেন দিনের পর দিন। তাইতো আলিবাবা বর্তমানে বিজনেস টু বিজনেস, বিজনেস টু কাস্টমার, কাস্টমার টু কাস্টমার সার্ভিস দেয়া কয়েকশত বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। ফোর্বসের “রিয়েল টাইম নেট ওর্থ” এর হিসাব অনুযায়ী জ্যাক মার বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় চৌত্রিশ বিলিয়ন ডলার।
জীবনে সফলতা লাভের জন্য প্রয়োজন একাগ্রতা, নিষ্ঠা,  পরিশ্রম এবং সৎ পরিকল্পনা।  অসৎ পথে কখনোই জীবনে সফল হওয়া যায় না। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে । নিজেকে সবার সেরা ভাবতে হবে।  আমি পারবো, আমাকে পারতেই হবে। এমন মনোভাব নিয়েই সামনে আগাতে হবে। তবেই জীবনে ধরা দেবে সফলতা!
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url