মেয়েদের মাথার চুল পড়ে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার
প্রতিটি মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ হচ্ছে তার মাথার চুল। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি আরো অনেক বড় বিষয় হয়ে দাড়ায়। তবে অনেকরই দেখা যায় অল্প বয়সেই মাথার চুল পড়ে যায় মেয়েদের। একারনেই মাথার চুল পড়া রোধ করতে জানতে হবে মেয়েদের মাথার চুল পড়ে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার। এবং মাত্রাতিরিক্ত চুল পড়ে গেলে এর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কেও জানা দরকার। আসুন জেনে নেই চুল পড়ার কারন ও প্রতিকার গুলো।
"চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নেশা"
জীবনানন্দ এভাবেই তার কবিতার মাধ্যমে তার প্রেয়সির চুলের বন্দনা করেছিলেন। ললনাদের সৌন্দর্যের অন্যতম প্রকাশ চুলে। বিভিন্ন কবি ,লেখকদের লেখনীতে তাই বার বার নারীর চুলের বর্ণনা পাওয়া যায়। যে চুল নিয়ে এত কাব্য এত কবিতা ,সেই চুল ই যদি অল্প বয়সে হারিয়ে যায়, তবে এর চেয়ে কষ্টকর আর কী হতে পারে!
অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ কি?
মেয়েদের মাথার চুল পড়ে যাওয়াকে ডাক্তারি ভাষায় অ্যানড্রোজেনেটিক অ্যালোপিসিয়া ( Androgenetic alopecia) বলা হয়। বিভিন্ন কারনে মেয়েদের মাথার চুল পড়ে যেতে পারে। মেয়েদের সাধারনত মাথার উপরিভাগের চুল ও দুপাশের চুল পাতলা হয়ে যায়। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারীর এ সমস্যা হয়ে থাকে। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২৫টি চুল পড়া স্বাভাবিক ব্যবহার । কিন্তু যখন দিনে ১২৫টির বেশি চুল পড়ে এবং সেই চুল গজায় না তখন সেটি সমস্যায় পরিনত হয়। পরিবারে যদি চুল পড়ার সমস্যা থাকে তাহলে ও চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয় ।
মেয়েদের চুল পড়ে যাওয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। অ্যানাজেন ইফফ্লুডিয়াম ও টেলোজেন ইফফ্লুভিয়াম। বিভিন্ন ওষুধ ও কেমোথেরাপির জন্য যখন চুল পড়ে যায় তখন তাকে অ্যানাজেন ইফফ্লুডিয়াম বলা হয় । আর যখন চুলের ফলিকল রেস্টিং স্টেজে যায়, তখন তাকে টেলোজেন ইফফ্লুভিয়াম বলা হয় । চুলের ফলিকল রেস্টিং স্টেজ হল চুল আর বড় না হওয়া এবং একসময় চুল ঝরে যাওয়া। চুলের এই ধরনের সমস্যা গুলো বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে। যেমন;
*শারীরিক অসুস্থতা। বড় ধরনের কোনো অস্ত্রোপচার, রক্তস্বল্পতা, ওজন কমে যাওয়া, হজমের সমস্যা ইত্যাদির কারনে চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায় ।
* মানসিক চাপ, অতিরিক্ত কর্মব্যস্ততা, পরিবারের কারো মৃত্যু ইত্যাদি ও অনেক সময় চুল পড়ার কারন হয়ে দাঁড়ায়।
* থাইরয়েড বা হরমোনজনিত সমস্যা।
* ডায়াবেটিস পলিসিসটিক ওভারি।
* মূত্রনালির প্রদাহ।
* গর্ভাবস্থা, পরিবার পরিকল্পনার জন্য পিল খাওয়া।
* ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া।
* অতি মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণ ইত্যাদি।
এছাড়া ও আরো কিছু কারন রয়েছে ;
ডায়েট ও চুল পড়া
ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত ডায়েট করা অনেক সময় চুল পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় । এজন্য অবশ্যই ডায়েটিশিয়ান, নিউট্রিশনিস্ট কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার তালিকা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট ডায়েটের সঙ্গে ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট খাবারের তালিকায় রাখতে হবে ।অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণে চুল পড়ে যায় । তাই ওজন কমাতে চাইলে নিজের মনমতো না করে ডায়েটিশিয়ান, নিউট্রিশনিস্ট, চিকিৎসক ও ত্বক বিশেষজ্ঞের মতামত নেবেন।
শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ ও চুল পড়া
শারীরিক অসুস্থতা, অপারেশন এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ চুল পড়ার অন্যতম কারণ। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, চুল ঝরে গেলেও আর নতুন চুল গজায় না এবং চুল বাড়েও না। শরীর সারাতে ব্যস্ত থাকে সব শক্তি । তাই অনাদরে পড়ে যায় চুল। এসব ক্ষেত্রে চুল পড়তে থাকে তিন মাস ধরে , আবার চুল গজাতে সময় লাগে তিন মাস। অর্থাৎ ছয় মাস সময় লাগে চুল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে। তবে শারীরিক ও মানসিক চাপের পরিমান যদি খুব বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চুল পড়তে পারে। রক্তস্বল্পতা ও থাইরয়েডের সমস্যার কারনে চুল পড়ে। সুতরাং খুব বেশি চুল পড়লে রক্ত পরীক্ষা ও রোগ নির্ণয় করা প্রয়োজন।
হরমোনের পরিবর্তন ও চুল পড়া
হরমোনের পরিবর্তনের সঙ্গে নারীদের চুল পড়ার সরাসরি সম্পর্ক আছে। গর্ভাবস্থায় কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া বন্ধ করলে চুল পড়তে পারে। হরমোনের পরিবর্তনের তিন মাসের মধ্যে এই পরিবর্তন লক্ষ করা সম্ভব। তবে সঠিক যত্নে তিন মাসের মধ্যে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। রজঃনিবৃত্তি বা মাসিক বন্ধ হওয়ার পরও নারীদের চুল পড়ে।
মেয়েদের মাথার চুল পড়া রোধে করণীয়:
মেয়েদের মাথার চুল পড়ার চিকিৎসা রয়েছে অনেক তবে চুল পড়া রোধে খাবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । আসুন জেনে নিই সেগুলো সম্পর্কে-
ডাব
ডাবের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন 'ই' ও চর্বি। এটি চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং চুলকে স্বাস্থ্যকর করে। রোজ এক গ্লাস ডাবের পানি পান করুন। কিছু দিন পর দেখবেন চুল পড়া কমে গেছে।
এলাচ
এলাচ চুলের গোড়া শক্ত করে। তাই চুলকে শক্ত ও স্বাস্থ্যকর করতে খাদ্যতালিকায় এলাচ রাখুন। এটি চুল পড়া বন্ধ করবে।
আমলকী
প্রাচীন সময় থেকেই চুলের সৌন্দর্য রক্ষা করতে এ উপাদানটি ব্যবহার হয়ে আসছে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'সি' থাকে, যা চুল পড়া রোধ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
হেয়ার প্যাক
বাড়িতে হেয়ার প্যাক তৈরি করে লাগাতে পারেন। চাইলে নিমের পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরাও মাথার চুল পড়া আটকানোর ক্ষেত্রে বেশ উপকারী।
পেঁয়াজের রস
পেঁয়াজের রসে প্রচুর সালফার থাকে। চুলের গোড়ায় লাগালে মাথা ঠাণ্ডা থাকে। আবার এর ফলে স্কাল্প এলাকায় রক্ত সঞ্চালনও বাড়ে। ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়াও নষ্ট হয়।
ফ্ল্যাক্সসিড
ফ্ল্যাক্সসিডের মধ্যে রয়েছে চুল বড় করার পুষ্টি এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। নিয়মিত ফ্ল্যাক্সসিড খেলে চুলের বৃদ্ধি ভালো হয়।
পানি পান করুন
পানি কম পান করা চুলকে দুর্বল করে দেয়। তাই চুল পড়া রোধে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। প্রতিদিন অন্তত ১০-১২ গ্লাস পানি পান করা চুল পড়া রোধে সাহায্য করবে।
বিটের রস
শরীরের পুষ্টির অভাবেই চুল বেশি পড়ে। এর প্রতিরোধে বিটের রস অনবদ্য। এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান থাকে। যা চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে।
নারিকেল কিংবা আমন্ড তেল
হ্যাঁ, তেল অনেকেই মাথায় দিয়ে থাকেন। তবে তেল দেয়ারও নিয়ম আছে। প্রথমে একটি বাটিতে তেল নিয়ে তা হালকা গরম করে নিন। এবার চুলের গোড়ায় তেল দিয়ে ম্যাসাজ করতে থাকুন। অল্প সময়েই উপকার পাবেন।