সৎসঙ্গ রচনা

সৎসঙ্গ রচনা
সৎসঙ্গ অনুচ্ছেদ রচনা
অনুচ্ছেদ রচনা সৎসঙ্গ

(সংকেত : ভূমিকা- সৎসঙ্গী কারা-সঙ্গ দেখে মানুষ চেনা যায়- সসঙ্গের প্রয়ােজনীয়তা-সৎসঙ্গের উপকারিতা –অসৎসঙ্গের অপকারিতা- উপসংহার)
সৎসঙ্গ

ভূমিকা: মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে বসবাস করতে হলে সবার সাথে মিলেমিশে বসবাস করতে হয়। আমরা বাবা-মা, ভাই-বােন, আত্মীয়-স্বজন সবার স্নেহ-ভালােবাসা নিয়েই বেঁচে থাকি। জীবন ধারণ সহ নানা কাজের প্রয়ােজনে পারিবারিক গণ্ডির বাইরেও অনেকের সাথেই আমাদেরকে মিশতে হয়। কিন্তু সবার সাথেই আমরা সমানভাবে মিশি না। যাকে আমাদের ভালাে লাগে তার সাথেই আমরা ভালােভাবে মিশি। যাদের সাথে আমরা মিশি তারাই হচ্ছে আমাদের সঙ্গী। জীবনপথের বাঁকে বাঁকে আমাদের অনেক সঙ্গী বা বন্ধু-
বান্ধব সৃষ্টি হয়। কিন্তু সব সঙ্গী যথার্থ ও সৎসঙ্গী হয় না। অথচ জীবনপথে ভালােভাবে চলতে গেলে সৎসঙ্গীর খুবই প্রয়ােজন।

সৎসঙ্গী কারা: মানবসমাজে দুই শ্রেণির মানুষ রয়েছে। প্রথমত, যারা মানুষের ভালাে চায়, হিতাকাঙ্ক্ষী, নিঃস্বার্থ, পরােপকারী, যাদের মন নিষ্কলুষ। দ্বিতীয়ত, যারা মানুষের অনিষ্ট চায়, স্বার্থপর এবং পরােপকারী নয়, যাদের চরিত্রও কলুষিত। এ দু' শ্রেণির মানুষের মধ্যে যারা প্রথম শ্রেণির তাদেরকে যদি সঙ্গী হিসেবে পাওয়া যায়, তবে তাকেই বলা হবে সৎসঙ্গী । সৎ সঙ্গী পাওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে আগে নিজেকে সৎ হতে হবে। যে যেমন তার সঙ্গীও তেমনই জোটে। তবে জীবনে ভালাে কিছু করতে চাইলে ভালােভাবে মানুষ হতে চাইলে সৎ সঙ্গীর বা সৎসঙ্গের বিকল্প নেই। সৎসঙ্গ বা সৎসঙ্গী সবসময় সৎপথে চলার নির্দেশ দেবে, ভালাে হওয়ার বা ভালাে কিছু করার প্রেরণা দেবে, সহযােগিতা করবে। খারাপ কিছু দেখলে তা পরিহার করতে বলবে। পারস্পরিক সহযােগিতা ও সহমর্মিতা হবে তার সম্পর্কের ভিত্তি। সৎসঙ্গীকে যেমন সুদিনে কাছে পাওয়া যাবে, তেমনই পাওয়া যাবে দুর্দিনে। বাজে চিন্তা, বাজে কাজকর্ম থেকে নিজে যে দূরে থাকবে এবং সঙ্গীকেও দূরে রাখবে; এসব বৈশিষ্ট্য যার মধ্যে পাওয়া যাবে তাকেই বলা হবে সৎসঙ্গী।

সঙ্গ দেখে মানুষ চেনা যায়: জগৎ বিচিত্র মানুষের হাট। এ হাটে যে মহাজনের যেমন চরিত্র সেই মহাজনের সাথে তেমন মহাজনেরই মিল। যে যেমন মানুষ তার লেনদেনও ঠিক তেমন মানুষের সাথেই। কাজেই যদি কারাে সম্পর্কে জানার ইচ্ছে হয় যে, লােকটার চরিত্র কেমন তবে বেশি কিছুর প্রয়ােজন নেই। শুধু দেখতে হবে যে, সে কাদের সাথে মেলামেশা বা চলাফেরা করে। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- A man is known by the company he keeps. অর্থাৎ সঙ্গী দেখে মানুষ চেনা যায়।

সৎসঙ্গের প্রয়ােজনীয়তা : একটি প্রবাদ আছে- “সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ।” কথাটি প্রতিটি মানুষের জীবনের জন্য প্রাতঃ স্মরণীয়। আমরা জীবন পথে চলতে গিয়ে কত বিচিত্র মানুষের সাথে মিশি, সম্পর্ক তৈরি করি তার ইয়ত্তা নেই। হাটে-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে, ব্যবসায় বাণিজ্যে, দেশে- বিদেশে বিচিত্র প্রকৃতির মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদেরকে সংসারে টিকে থাকতে হয়। কিন্তু যতই মিশি বা যার সাথেই মিশি, আমাদেরকে একটা বিষয় সবসময় মনে রাখতে হবে যে, আমি যার সাথে মিশছি তার চরিত্র ও মন-মানসিকতা কেমন বিষয়টি আগে খুতিয়ে দেখতে হবে। অসৎ সঙ্গের তালে পড়লে জীবনটাই বরবাদ হয়ে যেতে পারে। সঙ্গী বা বন্ধু নির্বাচনে তাই সবসময় সৎ ও সমমনা সঙ্গী নির্বাচন করতে হয়। জীবনে সফলতা বা পরিপূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে একজন সৎসঙ্গীর ভূমিকা অসামান্য। পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত যত মানুষের ক্ষতি হয়েছে, তার অধিকাংশই হয়েছে আপনজন তথা অতি নিকটতম বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে।

সৎসঙ্গের উপকারিতা : জীবন মানেই সুখ-দুঃখের খেলা। সুখের মুহূর্তে অনুভূতি শেয়ার করার জন্য যেমন বন্ধু-বান্ধবের প্রয়ােজন, তেমনই দুঃখ-দুর্দিনের সময় বন্ধু-বান্ধবের প্রয়ােজন আরাে বেশি। মানুষ দুর্দশাগ্রস্ত হলে তার কোনাে হুঁশ থাকে না। চরম একাকিত্বে তখন মানুষ অসহায়ত্ববােধ করে। এমন সময় একজন সৎ সঙ্গী থাকলে তার সাহচর্য-সহযােগিতা, সহমর্মিতা মানুষের মনে আশার সঞ্চার করে; তাকে বেঁচে থাকার প্রেরণা দেয়। জীবনের চরম সংকটের মুহূর্তে সংকট থেকে উত্তরণে একজন সৎসঙ্গী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অসৎসঙ্গের অপকারিতা: পৃথিবীতে সৎ মানুষের তুলনায় বলা যায় অসৎ মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। মানুষ বাস্তব জীবনের অভিঘাতে ধৈর্য ও নীতি চ্যুত হয়ে অসৎ কাজকর্মে লিপ্ত হয় এবং একসময় সে তাতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এমনকি অসৎকর্ম করতে করতে সে আত্মপর ভেদাভেদ বা মানবতাবােধটুকুও হারিয়ে ফেলে। আমাদের দেশের বর্তমান তরুণ সমাজের বিপথগামী হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে অসৎ সঙ্গ।ছাত্র ছাত্রীদের জীবনে এর প্রভাব আরাে প্রবল। অনেক মেধাবী ছাত্রও অসৎসঙ্গের পাল্লায় পড়ে একেবারে নষ্ট হয়ে যায় । তাছাড়া অনেক চরিত্রবান লােকও অসৎ সঙ্গের পাল্লায় পড়লে দুশ্চরিত্র হয়ে যায়। কাজেই অসৎসঙ্গী সর্বদাই পরিত্যাজ্য।

উপসংহার: সততা বা সৎ চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ। কথায় আছে-“দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য।” অসৎ মানুষ বা চরিত্রহীন মানুষ পশুর তুল্য। তাই এমন মানুষের সঙ্গ পরিহার করে সবসময় নিজের চরিত্র ঠিক রাখা অপরিহার্য এবং সৎ,চরিত্রবান, সমমনা মানুষের সঙ্গ গ্রহণ করা উচিত। একজন অসৎ সঙ্গীর সাহচর্য যেমন জীবনকে নরকে ঠেলে দিতে পারে, তেমনই এক জন সৎসঙ্গীর সাহচর্য জীবনে স্বর্গের সুখ এনে দিতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url