সংবাদপত্র রচনা
রচনা: সংবাদপত্র
অথবা, জ্ঞান বিকাশে সংবাদপত্রের ভূমিকা
অথবা, সংবাদপত্র পাঠের উপকারিতা
অথবা, জাতীয় জীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা
অথবা, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা
(সংকেত: ভূমিকা–সংবাদপত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ -সংবাদপত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া—বিভিন্ন প্রকার সংবাদপত্র সংবাদপত্রের প্রভাব–সংবাদপত্র এবং বর্তমান প্রেক্ষিত-হলুদ সাংবাদিকতা এবং সংবাদপত্র সংবাদপত্র ও ইন্টারনেট –উপসংহার)
ভূমিকা : তিমিরবিদারী সূর্যের আবির্ভাবের সাথে সাথে পৃথিবী এসে করাঘাত করে। আমাদের সংবাদপত্র সে পৃথিবীর বার্তা বাহক। ঘরকুনাে মানুষ মুহূর্তে তার সব সংকীর্ণতার গণ্ডি অতিক্রম করে এসে দাঁড়ায় বিশাল পৃথিবীর উদার আকাশের নিচে, সংবাদপত্র দৈনন্দিন জীবনে সীমাবদ্ধ মানুষের সামনে বিশ্ব মানবতার এবং বিশ্ব নাগরিকতার বিচরণ ক্ষেত্র উন্মােচন করে দেয়।
সংবাদপত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ : পৃথিবীতে সর্বপ্রথম সংবাদপত্রের বিকাশ চীন দেশে ঘটে বলে ধারণা করা হয়। ইউরােপীয় দেশ গুলাের মধ্যে এ আসন ইতালির প্রাপ্য। ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল আমলে রাজ্য শাসনের সুবিধার্থে সরকার সংবাদ লেখক নিয়ােগ করত। তারা নির্দিষ্ট স্থান থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে সরকারকে প্রেরণ করতেন। রাজ্য সংক্রান্ত গােপনীয় সংবাদ ছাড়া এ সংবাদলিপিগুলাে রাজ্যসভায় পাঠ করা হতাে এবং সভায় উপস্থিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে তা জনসাধারণের কাছে প্রচার করা হতাে। আমাদের দেশে সর্বসাধারণের জন্য সংবাদ পত্রের প্রচলন প্রথম শুরু হয় ১৭৮০ সালে। পত্রিকার নাম ‘বেঙ্গল গেজেট’ । এর সম্পাদকের নাম ‘হিকি'। সম্পাদকের নাম অনুসারে তা ‘হিকি গেজেট' নামে পরিচিত। বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র সাপ্তাহিক সমাচার দর্পণ' ১৮১৮ সালে শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত হয়। বাঙালি পণ্ডিতদের সহায়তায় জেসি মার্শম্যান এর সম্পাদনা করেন। এর অল্প কিছুকাল পূর্বে 'মাসিক দিকদর্শন' প্রকাশিত হয়। মুসলমান কর্তৃক সম্পাদিত প্রথম বাংলা পত্রিকা হচ্ছে ১৮৩১ সালে প্রকাশিত ‘সমাচার সভারাজেন্দ্র’ যা শেখ আলীমুল্লাহর সম্পাদনায় কলকাতা থেকে বাংলা ও ফারসি ভাষায় প্রকাশিত হতাে।
সংবাদপত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া : বর্তমান বিশ্বে ছাপাখানার উৎকর্ষের ফলে সংবাদপত্রের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে। উন্নত দেশে সর্বসাধারণের জন্য সংবাদপত্র প্রকাশের পরিকল্পনা, সংবাদ পত্রের জনপ্রিয়তা লাভ ও এর বিস্ময়কর উন্নতির মূলে মুদ্রণ যন্ত্রের ব্যবহার যেমন জ্ঞানের রাজ্যে বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়, আমাদের দেশেও মুদ্রণ যন্ত্র প্রবর্তনের ফলে পত্রিকা ও বই প্রচার বৃদ্ধি পেয়ে মানুষকে ক্রমেই পরস্পরের চিন্তা ভাবনা ও কর্মের সাথে পরিচিত করে তােলে এবং মুহূর্তে সমগ্র বিশ্বকে তার হাতের মুঠোয় এনে দেয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংবাদ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আছে। অতীতকালের সম্রাটদের মতাে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এসব প্রতিষ্ঠান সংবাদদাতা নিযুক্ত করে। সংবাদদাতাগণ তাদের নির্দিষ্ট অঞ্চলের সংবাদ স্বীয় প্রতিষ্ঠানকে জানালে তারা তা টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে সবার কাছে প্রচার করে।
বিভিন্ন প্রকার সংবাদপত্র : বর্তমানে বিভিন্ন প্রকার সংবাদপত্র আমাদের চোখে পড়ে। বিভিন্ন সময় এবং বিষয়ের পৃথক সংবাদ পত্র এখন পাঠক সমাজকে তথ্য প্রদানে ব্যস্ত। নিচে এর একটি সারণি তুলে ধরা হলাে :
সংবাদপত্রের প্রভাব : প্রায় দেড়শ বছর হতে চলল আমাদের দেশে সংবাদপত্রের প্রচলন হয়েছে। এর জনপ্রিয়তা উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ যতই বাইরের জগৎ ও আবেষ্টনী সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে ততই তার কাছে সংবাদপত্রের গুরুত্ব সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হচ্ছে। দেশ- বিদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংবাদ ও সমালােচনা তার চিন্তা ও কর্মশক্তিকে প্রেরণা দিচ্ছে। সংবাদপত্র ব্যতীত শিক্ষিত মানুষের আজ এক মুহূর্তও চলে না। আমাদের দেশে আধুনিকতার প্রসারে সংবাদপত্রের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বস্তুতপক্ষে ইংরেজি শিক্ষা ও অন্যান্য দেশের ধর্ম, সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান যে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, তা সংবাদপত্রের মাধ্যমেই সদ্ধ হয়েছে। প্রবাদ আছে, As newspaper can influence public opinion, it has enormous power.
সংবাদপত্র এবং বর্তমান প্রেক্ষিত : প্রবাদ আছে, The newspaper is a daily necessary article-সংবাদপত্র বর্তমান মানবসভ্যতার অপরিহার্য অঙ্গ। এ যুগের শিক্ষা ও সভ্যতা সংবাদপত্রের সহায়তা ছাড়া পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। বিশ্বের রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান,বাণিজ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, আমােদ-প্রমােদ সর্ব ক্ষেত্রেই তার সরব পদচারণা। আর পৃথিবীর যেখানে প্রতিকারহীন শক্তির অপরাধে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে, সেখানেই সংবাদপত্রের নির্ভীক উচ্চারণ ধ্বনিত হয়ে ওঠে।
হলুদ সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র : সংবাদপত্র মানুষের কথা বলে। সাম্প্রতিককালে বিশ্ব রাজনীতির কুটিলতা আর দেশীয় রাজনীতির কালাে থাবায় সাংবাদিকতা পেশাটি যেমন বিতর্কিত হয়ে উঠছে, তেমনই সংবাদপত্র হারাচ্ছে তার চেতনাকে। এক শ্রেণির সংবাদপত্র যত না সংবাদ পরিবেশনে তৎপর তার চেয়েও বেশি তৎপর পত্রিকার কাটতি বাড়ানােতে। সেই কারণে এসব পত্রিকা প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রকাশ করে মানুষকে বিব্রত করছে। যুবসমাজকে উসকে দিচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞের খেলায়। এর জন্য মূলত তিনটি কারণ দায়ী-
ক) মালিকানা : অধিকাংশই কোনাে না কোনাে ব্যক্তি বা গােষ্ঠীকে সমর্থন করে।
খ) সম্পাদক : নিজেকে বিক্রি করে ।
গ) পাঠক: সচেতনতার অভাব।
এরূপ অবস্থা দেশপ্রেম এবং মানব কল্যাণের আদর্শকে ভীষণভাবে পর্যুদস্ত করছে। এ অবস্থার উত্তরণ দরকার।
সংবাদপত্র এবং ইন্টারনেট : বর্তমানে সংবাদপত্র শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ নেই। সংবাদপত্র এখন মানবসভ্যতার আরেক বিস্ময় কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবস্থার মধ্যেও বিকাশ লাভ করেছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের সংবাদপত্র এখন ইন্টারনেটেও পাওয়া যায় । নিচে কয়েকটি সংবাদপত্রের ইন্টারনেট-সংযােগ নাম এবং লিংক উপস্থাপন করা হলাে :
উপসংহার : সংবাদপত্র আজ বিশ্ব সভ্যতার এক অপরিহার্য উপাদান। আধুনিক ইন্টারনেট যুগেও সংবাদপত্র তার পাঠক পরিধি ক্রমেই বাড়িয়ে চলেছে। যা সত্যিকার অর্থেই অবাক হবার মতাে। যে কোনাে দেশের অভ্যন্তরীণ ও জাতীয় উন্নয়ন এবং বিশ্ব ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নে এর ভূমিকা ব্যাপক। তাই সংবাদ পত্রকে নতুন এ শতাব্দী সুন্দর ভাবে গড়ে তােলার লক্ষ্যে তার নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়ােগ করতে হবে। তাহলেই সংবাদপত্র তার যথার্থ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে।