চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বাংলা রচনা
রচনা: চিকিৎসাশাস্ত্রে বিজ্ঞানের অবদান। অথবা, চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান প্রবন্ধ রচনা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান অনুচ্ছেদ, চিকিৎসা শাস্ত্রে বিজ্ঞান রচনা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা পয়েন্ট, চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বাংলা রচনা, রচনা চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান
(সংকেত: ভূমিকা—প্রাচীনকালের চিকিৎসা শাস্ত্র- চিকিৎসা শাস্ত্রে বিজ্ঞানের অবদান- চিকিৎসা শাস্ত্রে বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের সাফল্য—বর্তমানে রােগ নির্ণয় ও রােগ নিরাময়ে বিজ্ঞান—রােগ প্রতিরােধে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অবদান- চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যর্থতা- উপসংহার)
ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বসভ্যতার প্রতিটি ক্ষেত্রেই লেগে আছে বিজ্ঞানের জাদুকরি হাতের স্পর্শ । ঘর-গৃহস্থালির ক্ষুদ্রতম কাজ থেকে শুরু করে যাতায়াত, যােগাযােগ, অফিস-আদালত, জ্ঞানের আকার-পুস্তক, প্রকাশনা, গবেষণা, মহাকাশ ভ্রমণ, চন্দ্রাভিযান সর্বত্রই বিজ্ঞানের একচ্ছত্র অবদান লক্ষণীয়। এমনকি মানুষের রােগ-ব্যাধি, অকাল মৃত্যু প্রভৃতি ঠেকাতেও এগিয়ে এসেছে বিজ্ঞানের হাত। বিজ্ঞানের আশীর্বাদেই চিকিৎসা শাস্ত্র আজ এত উন্নত এবং মানুষের এত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। মানুষ অতি সহজেই এখন জটিল রােগের চিকিৎসা পাচ্ছে।
প্রাচীনকালের চিকিৎসাশাস্ত্র : প্রাচীন সভ্যতায় মানুষ ছিল প্রকৃতির দাস। তখন সামান্য রােগেই মানুষ মারা যেত। প্রাচীনকালে কোনাে বিজ্ঞান সম্মত ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না। মানুষ তখন বিভিন্ন গাছ-গাছালি, লতা-পাতা, দোয়া-তাবিজ, পানি পড়া, ঝাড়-ফুক ইত্যাদির মাধ্যমে রোগ নিরাময়ের চেষ্টা করত। সংক্রামক রােগগুলাে তখন সহজেই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ত এবং এক সাথে এক একটা অঞ্চল সাবাড় করে দিত। কলেরা, টাইফয়েড, বসন্ত ইত্যাদি রােগে এক একটা এলাকায় মানুষ মরে প্রায় শেষ হয়ে যেত। মানুষ তখন সেটাকে ভাবত ঈশ্বরপ্রদত্ত গজব। তখন অবােধ প্রাণীর সাথে মানুষের তেমন কোনাে পার্থক্য ছিল না। বিজ্ঞানের অবদানে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটে এবং কবিরাজি চিকিৎসার পরিবর্তে প্রবর্তিত হয় আধুনিক হােমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং অত্যাধুনিক এলােপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা।
চিকিৎসাশাস্ত্রে বিজ্ঞানের অবদান : বর্তমান চিকিৎসা শাস্ত্র প্রায় সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। সামান্য জ্বর-ব্যথা থেকে শুরু করে জটিল-দুরারােগ্য রােগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করতে এখন উন্নত বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। পেনিসিলিন, অ্যাসপিরিন, ক্লোরােমাইসিন, স্ট্রেপটোমাইসিন প্রভৃতি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ আবিষ্কারে বিজ্ঞানের অবদান অসীম ও অনস্বীকার্য।
চিকিৎসাশাস্ত্রে বিশ শতকে বিজ্ঞানের সাফল্য : রােগ নির্ণয় ও রােগ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসাশাস্ত্রে বিশ শতকে বিজ্ঞানের সাফল্য অভাবনীয়। ১৯০০ সালে আবিষ্কৃত হয় কালা জ্বরের জীবাণু, ১৯০৩ সালে আবিষ্কৃত হয় জিনের কার্যপ্রণালি, ১৯০৩ সালেই আবিষ্কৃত হয় ইসিজি, ১৯৫২ সালে আবিষ্কৃত হয় রক্তের গ্রুপ, ১৯০৩ সালে আবিষ্কৃত হয় মরণব্যাধি ক্যানসারের চিকিৎসার রেডিওথেরাপি, ১৯০৮ সালে আবিষ্কৃত হয় কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড, ১৯১২ সালে আবিষ্কৃত হয় কোলেস্টেরল, ১৯২৮ সালে আবিষ্কৃত হয় পেনিসিলিন, কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র, ইলেকট্রো মাইক্রোস্কোপ, ১৯৪০ আবিষ্কৃত হয় রক্তরস, ১৯৪৩ সালে আবিষ্কৃত হয় কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন, ১৯৫৩ সালে আবিষ্কৃত হয় ডিএনএ, ১৯৫৮ সালে আবিষ্কৃত হয় পেসমেকার, ১৯৫৩ সালে আবিষ্কৃত হয় ওপেন হার্ট সার্জারি ও বাইপাস সার্জারি মেশিন, ১৯৫৭ সালে আবিষ্কৃত হয় আন্ট্রাসনিক স্ক্যানিং মেশিন ইত্যাদি। তাছাড়া মানুষের বন্ধ্যাত্ব ঘুচাতে ১৯৭৮ সালে আবিষ্কৃত হয় টেস্টটিউব প্রজনন পদ্ধতি এবং এ বছরই জন্ম নেয় প্রথম টেস্টটিউব বেবি লুইস ব্রাউন। ১৯৮৪ সালে এইডসের জীবাণু এবং ১৯৯৭ সালে আবিষ্কৃত হয় ক্লোন পদ্ধতি। এ আবিষ্কার গুলাে মানুষকে দিয়েছে বেঁচে থাকার শক্তি এবং জীবনকে করেছে সুখী ও সমৃদ্ধশালী । বিশ শতকে চিকিৎসাশাস্ত্রের এ অভাবনীয় সাফল্যের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে বিজ্ঞান।
বর্তমানে রোগ নির্ণয় ও রোগ নিরাময়ে বিজ্ঞান : রােগ নিরাময়ের পূর্বশর্ত হলাে রােগ নির্ণয়। সঠিক ভাবে রােগ নির্ণয় করতে না পারলে কোনাে রােগেরই চিকিৎসা দেওয়া স হয় না। এ রােগ নির্ণয় করা অত্যন্ত জটিল একটি কাজ। কিন্তু সেই জটিল কাজটি বিজ্ঞানের আশীর্বাদে অত্যন্ত সহজ ভাবেই সম্পন্ন করা যায় । এক্স-রে, আল্টাসনােগ্রাফি ইত্যাদির মাধ্যমে শরীরের অদৃশ্য অঙ্গ বা উপাদানগুলােকে সহজেই শনাক্ত করা যায়। এরপর যথাযথ ওষুধ প্রয়ােগ করলেই রােগী সুস্থ হয়ে ওঠে।
রোগ প্রতিরােধে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অবদান : রােগ নিরাময়ের চেয়ে রােগ প্রতিরােধ করা উত্তম। রােগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই রােগ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা নিতে পারলে অতিরিক্ত ভােগান্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। বিজ্ঞানের অবদানেই চিকিৎসা শাস্ত্র রােগ প্রতিরােধের জন্য পেয়েছে নানা প্রতিষেধক ওষুধ ও পদ্ধতি । যেমন : যক্ষ্মা, হুপিং কাশি, ধনুষ্টংকার, ডিপথেরিয়া, হাম, বসন্ত ইত্যাদি রােগ প্রতিরােধের জন্য টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলাে বিজ্ঞানের বিশেষ অবদান। বর্তমানে ক্যানসার, এইডসসহ আরাে মারাত্মক যত সব রােগ ব্যাধি আছে তার প্রতিষেধক ও ওষুধ আবিষ্কারের প্রচেষ্টা চলছে। চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সর্বশেষ অগ্রগতির চিকিৎসাসেবা উন্নতির জন্য বিজ্ঞানীরা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতিও অর্জন করেছেন। যেমন : জেনেটিক টেকনােলজির মাধ্যমে দুরারােগ্য ব্যাধি শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার, ক্লোনিং পদ্ধতি, কৃত্রিম রক্ত ও প্রােটিন আবিষ্কার ইত্যাদি। এসবের মাধ্যমে বিজ্ঞান চিকিৎসা শাস্ত্রকে অসাধ্য সাধনে সহায়তা করছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যর্থতা : চিকিৎসাশাস্ত্রে বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও অবদান যেমন অসংখ্য ও অবিস্মরণীয় তেমনি দু-একটি ব্যর্থতাও রয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যেমন : প্রাণঘাতী এইডসের বা সার্স রােগের চিকিৎসা বা প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিজ্ঞান এখন সফলতা অর্জন করতে পারেনি। এতে বিশ্বে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বিপর্যয় ঘটছে। তবে বিজ্ঞান নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এ দুরারােগ্য রােগ নিরাময়ের চিকিৎসা ও প্রতিষেধক আবিষ্কারে।
উপসংহার : মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখার জন্য মানুষের দীর্ঘায়ু, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধির জন্য চিকিৎসা শাস্ত্রকে এগিয়ে নিতে বিজ্ঞান নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষ মৃত্যুকে জয় করতে পারেনি সত্য; কিন্তু রােগ-ব্যাধিকে মানুষ যে প্রায় পুরােপুরিই জয় করেছে- এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। আর তা সম্ভব হয়েছে একমাত্র বিজ্ঞানের আশীর্বাদে। সুতরাং চিকিৎসাশাস্ত্রে বিজ্ঞানের অবদান অসামান্য ও অবিস্মরণীয়। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের এ অবদানের ধারা আরাে অব্যাহত থাকবে এবং মানুষ আরাে নীরােগ, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারবে।