ধর্ম ও মানবতা বা মনুষ্যত্ব আসলে কি?
আমরা মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব! মানুষের সব কিছুই সুশৃঙ্খল বলে মনে করি কিন্তু আমরা কতোটা উশৃংখল তা হয়তো আমাদেরও ভাবনার বাইরে! মানুষ সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। তবে মানুষের সৃষ্টি কর্তা একজন নয় বরং সৃষ্টিকর্তা রয়েছে অনেকজন। যেমন হিন্দুদের সৃষ্টি করেছে ঈশ্বর বা ভগবান, মুসলিমদের সৃষ্টি করেছে আল্লাহ্, আবার খ্রিস্টানদের সৃষ্টি করেছেন গড। মানে আরকি মানুষ একই জাস্ট ব্রান্ড ভিন্ন। তবে সার্কিট এবং বডি ডিজাইন হয়েছে একই সিস্টেমে এবং একই কাঁচামালে। তবে এ কারনেই এক ব্রান্ডের সাথে অন্য ব্রান্ডের যেমন বানিজ্য যুদ্ধ লেগে থাকে ঠিক তেমনি মানুষের মাঝেও ধর্ম যুদ্ধ নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। তবে মানুষ হিসেবে কি এটিই আমাদের কর্তব্য? নাকি আমরা ভূল পথে হাটছি?
আমি একজন হিন্দু হিসেবে ধর্ম শব্দের অর্থ জানি "ধর্ম হচ্ছে যা আমাদের ধারন করে" অর্থাৎ যেটি আমাদের একটি সুশৃঙ্খল এবং সুন্দর জীবন বিধান নিশ্চিত করে। যেখানে থাকবে মানুষে মানুষে ভালোবাসা, সহযোগী মনোভাব, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব ইত্যাদি। এবং সর্বোপরি ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হলো সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভ করা। তবে অন্য ধর্ম ধর্মের সংজ্ঞা কিভাবে দিয়েছে আমি সঠিক ভাবে না জানলেও যেটুকু জানি সকল ধর্মের মূল কথা বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত, সুন্দর জীবন বিধান এবং মোক্ষলাভ।
তবে খুব বেশি পিছনে নয় ৫-৬ বছর আগেও জানতাম সকল সৃষ্টির মূলেই সৃষ্টিকর্তা এক জনই। তবে আমাদের মতের এবং রুচির বিভেদের কারনেই বিভিন্ন নামে আমরা সৃষ্টি কর্তাকে স্বরন করি। কিন্তু তা একজনের কাছেই পৌছায়। কিন্তু এই বানি বা চিত্র খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পরিবর্তন হয়ে গিয়ে এখন এক ধর্মের অনুসারীরা অন্য ধর্মাবলম্বীদের শত্রু মনে করা শুরু করেছে। এবং একে অপরের প্রতি হিংসাত্মক আচারন শুরু করেছে৷ যার ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে বিশ্বের শান্তি। তবে কি এতদিন আমরা যা জানতাম "প্রতিটি ধর্মই শান্তির শ্বাস্বত বানী প্রচার করে" কথাটি ভুল ছিল। নাকি বর্তমানে আমরা ভূল পথে হাটছি!
বর্তমানে একটি কথা প্রায়ই শোনা যায় ধর্ম রক্ষার জন্য অস্ত্র ধরা নাকি একজন ধার্মিকের কাজ। এবং বিভিন্ন ধর্মের জ্ঞানী ব্যাক্তিরাই অনুসারীদের এই দিক্ষায় দীক্ষিত করছে। এবং অন্য ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বাধা প্রদান করা, অন্যের উপাসনালয়ের ক্ষতি সাধন ইত্যাদি নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। এবং সাম্প্রতিক কালে আরো একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায় ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি। যার ফলে বাড়তে আছে ধর্মীয় সহিংসতা। এবং প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে ধর্মের নাম করে মানুষের মধ্যে বিভেদ।
এবার অাসি মনুষ্যত্বের বিষয়ে। মনুষ্যত্ব কি? মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা, সহযোগী মনোভাব, একজন মানুষ অসুস্থ তার সেবা করা সে যে ধর্মেরই হোক তাকে সেবার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলাই হলো মনুষ্যত্ব। সবচেয়ে বড় কথা একটি প্রানি পশু নাকি মানুষ তার বিচার হয় কিন্তু মনুষ্যত্বের মানদণ্ডেই। আপনার প্রান থাকলেই প্রানি হতে পারেন কিন্তু মানুষ হতে হলে মনুষ্যত্ব থাকতেই হবে এর কোন বিকল্প নেই। একারনেই বলা হয়েছে,"প্রান থাকলেই প্রানি হয়,কিন্তু মনুষ্যত্ব না থাকলে মানুষ হওয়া যায় না" । তাহলে আমরা জানি ধর্ম মানুষের জন্য পশুদের কোন ধর্ম নেই। আবার মনুষ্যত্ব না থাকলে আপনি মানুষ-ই নন। তাহলে মানুষ না হতে পারলে ধর্ম পালন করার তো আপনার কোন অধিকারই থাকলো না মশাই! তাহলে নিজের ভিতর মনুষ্যত্ব জাগ্রত না করেই ধর্ম নিয়ে লাফালাফি করে কি লাভ? আগে আমাদের এক জন প্রকৃত মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে হবে তার পরে আমাদের ধর্ম পরিচয় নিয়ে ভাবা উচিত!
আজ একজন হিন্দু একজন মুসলিম-কে বা খ্রিস্টান-কে দেখলে মনে করে ও আমার শত্রু ও আমার ক্ষতি করতে পারে। আবার একজন মুসলিম একজন হিন্দু-কে বা খ্রিষ্টান-কে দেখলে মনে করে ও আমরা শত্রুর ও ক্ষতি করতে পারে তাই ওর অমঙ্গল হোক। আবার একজন খ্রিস্টান ধর্মের লোকও তেমনি মনে করে। সর্বোপরি সকল ধর্মেই এই একই সমস্যা বিরাজ করছ।
কিন্তু কখনো কি কেউ একটি বার বিষয়টি এমন করে চিন্তা করছে যে, তিন বন্ধু একসাথে গল্প করতে করতে বের হইছে একজন হিন্দু, একজন মুসলিম, একজন খ্রিস্টান। তাদের গন্তব্য মন্দির, মসজিদ, গীর্জা। তো একসময় তাদের পথ আলাদা হওয়ার সময় হলো তখন প্রত্যেকে প্রত্যেকের উদ্দেশ্যে বললো বন্ধু তোমাদের উপাসনা শেষ হলে অপেক্ষা করো একসাথে ঘুরতে যাবো বা আড্ডা দিব বা একসাথে বাড়ি ফিরব! কোন বন্ধুর কোন সমস্যা হয়েছে বাকি দুই বন্ধু ও তাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছে তার সমস্যা হতে মুক্তির জন্য!
ভেবে দেখেছেন কি তাদের ধর্ম সবার আলাদা কিন্তু মানুষ হিসেবে একে অপরের প্রতি ভালবাসার কমতি নেই, এটাই মনুষ্যত্ব। কেউ কিন্তু অন্যের ধর্ম পালন করছে? না। কিন্তু এখানে নেই কোন বিভেদ নেই ভেদাভেদ। এ কারনেই আমাদের মনুষ্যত্বের বিকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আসলে একেকজন খাঁটি হিন্দু হতে চাই, খাঁটি মুসলমান হতে চাই, হতে চাই খাঁটি খ্রিস্টান। কিন্তু দুঃখের বিষয় কেউ প্রকৃত মানুষ হতে চাই না!