ভাবসম্প্রসারন: সুধাল পথিক, সাগর হতে কী অধিক ধনবান? জ্ঞানী বলেন, “বাছা, তুষ্ট হৃদয় তারাে চেয়ে গরীয়ান।”

ভাবসম্প্রসারন: সুধাল পথিক, সাগর হতে কী অধিক ধনবান? জ্ঞানী বলেন, “বাছা, তুষ্ট হৃদয় তারাে চেয়ে গরীয়ান।”

মূলভাব : আত্মতৃপ্তি সব সুখের মূল। অতৃপ্ত হৃদয়ের ব্যক্তি সাগর পরিমাণ ধন-সম্পদ, খ্যাতি-যশ থাকলেও সুখী হতে পারে না। কিন্তু তুষ্ট হৃদয়ের ব্যক্তি অল্পেই প্রশান্তি পায়। আর সেজন্য তার হৃদয় মহীয়ান ও গরীয়ান।

ভাবসম্প্রসারন লাইব্রেরি

ভাব-সম্প্রসারণ : কবি বলেন, “এ জগতে হায়, সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি” কথাটি অমূলক নযপৃথিবীতে যার যত আছে সে ততই চায়। মানুষের অভাবের বা চাওয়ার কোনাে শেষ নেই। অনেকে অগাধ টাকার মালিক, অগাধ সম্পত্তির মালিক। কিন্তু তারপরও তার অভাবের শেষ নেই। আসলে সমুদ্র পরিমাণ ধন-রত্ন এনে দিলেও তার চাওয়া শেষ হবে না। কারণ তার হৃদয় হচ্ছে অতৃপ্ত। মরুভূমিতে পানি ঢেলে যেমন কোনাে দিন মরুর তৃষ্ণা মেটানাে যায় না, তেমনি অতৃপ্ত হৃদয়বান ব্যক্তিকে সমুদ্র পরিমাণ ধন-রত্ন দিয়েও তুষ্ট করা যায়। আর এ কারণেই সে কখনাে সুখী হতে পারে না। তাছাড়া ধন-সম্পদ প্রকৃত অর্থে মানুষকে শান্তি দিতে পারে না; বরং বেশি সম্পদশালী হলে তাতে নানা দুশ্চিন্তা বা সমস্যার সৃষ্টি হয়। সেজন্য ধনের চেয়ে মনের মূল্য অনেক বেশি। যারা মনের দিক থেকে বড়, তারাই প্রকৃত অর্থে মহীয়ান। সুখ তাদের উপভােগ্য। সুখ শান্তিতে জীবনকে উপভােগ করার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সফলতা ও মর্মার্থ নিহিত। আর পরিতৃপ্তির মধ্যেই রয়েছে সে সুখ-শান্তি পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা।

সেজন্য আমাদের নিজেদের যার যা কিছু আছে তা নিয়েই সবাইকে পরিতৃপ্ত থাকতে হবে। তাহলেই আমাদের দ্বারা মহৎ কিছু করা সম্ভব হবে। আর যাদের ধন সম্পদের লােভ-লালসা প্রবল, তাদের কাছে ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের কোনাে ভেদাভেদ থাকে না। তারা নিজেদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে কোনাে কিছুই দেখেন না। তারা অন্ধের মতাে নিজেদের স্বার্থের পেছনে মরিয়া হয়ে ছুটতে থাকে। কিন্তু তাদের সে ছােটার কোনাে অন্ত নেই। কারণ মানুষের চাওয়ার কোনাে শেষ নেই। একটি চাহিদার নিবৃত্তি ঘটলে আর একটি চাহিদার সৃষ্টি হয়। যার জন্য সে যতই পাক না কেন, সে কখনাে পরিতৃপ্ত হতে পারে না। না পাওয়ার বেদনা সর্বক্ষণ তাকে তাড়া করে; দগ্ধ করে। এতে সবসময় তার মনে অশান্তি বিরাজ করে। তাই যে ব্যক্তি তুষ্ট হৃদয়ের অধিকারী; অল্পতেই যে পরিতৃপ্ত হয়, তার জীবন অনেক সুখী; অনেক শান্তিময়। তার হৃদয় অনেক ধনবানের চেয়েও মহীয়ান ও গরীয়ান। পৃথিবীতে যারা জ্ঞানী-গুণী, মহীয়ান-গরীয়ান তাদের জীবনী পড়লেও আমরা দেখতে পাই যে, ধন-সম্পদের প্রতি তাদের কোনাে লােভ-লালসা ছিল না। না পাওয়ার বেদনা কখনাে তাদের বিচলিত করতে পারে নি। যার যা ছিল তা নিয়েই তারা সুখী ছিলেন। আমাদেরও সে রকম হওয়া উচিত।

মন্তব্য: পরিতৃপ্তি বা আত্মতুষ্টিই সব সুখের মূল। অগাধ সম্পদশালী হওয়ার চেয়ে পরিতৃপ্ত হৃদয়বান মানুষ হতে পারলেই জীবনে প্রকৃত সুখ পাওয়া যায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url