ইন্টারনেট কি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ
আমাদের দৈনন্দিন জিবনের অপরিহার্য অংশ হলো ইন্টারনেট।আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে ইন্টারনেটের ব্যবহার ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আজকের আলোচনা হতে জানবো, ইন্টারনেট কী, ইন্টারনেট আবিষ্কারের ইতিহাস, ইন্টারনেট কত প্রকার ও কি কি, ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে,ইন্টারনেট কি ও কি কাজে লাগে এবং এর গুরুত্ব, বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ইতিহাস। এছাড়াও জানবো ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা বা উপকারিতা এবং অসুবিধা সমূহ।
যেমন- চিঠি আদান-প্রদানের জন্য ইন্টারনেট নির্ভর ব্যবস্থা হিসেবে আবিষ্কৃত হয়েছে ইন্টারনেট, টেলিফোনে কথা বলাকে ইন্টারনেটের সাহায্যে আধুনিক করতে এসেছে টেলিকনফারেন্সিং বা ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি। ইন্টারনেটেট এখন পৃথিবীর প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজেদেও পরিচিতি সকলের সামনে তুলে ধরে। ইন্টারনেটভিত্তিক এই পদ্ধতি গুলাের ব্যাপক জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ সময় এবং অর্থের সাশ্রয়। ইন্টারনেটের উপাদান হলাে এর ব্যবহারকারী, তথ্য, টেলিযােগাযােগ ব্যবস্থা, কম্পিউটার প্রভৃতি। ১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের অভ্যন্তরীণ যােগাযােগ ব্যবস্থা গড়ে তােলার উদ্দেশ্যে ARPANET (Advance Research Project Agency Network) নামক প্রজেক্টের মাধ্যমে ইন্টারনেটের পত্তন ঘটে। আরপানেট পরবর্তীতে আশির দশকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সীমিতভাবে উন্মুক্ত ছিল।
ইন্টারনেটের সুবিধা সমূহ:
- ইন্টারনেট হলাে তথ্যের বিশাল ভাণ্ডার। ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে কাঙ্ক্ষিত তথ্যের নাম লিখে সার্চ করলেই বিশ্বের অসংখ্য সার্ভারে থাকা তথ্যগুলাে প্রদর্শিত হয় ।
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহূর্তেই বিশ্বের যেকোনাে প্রান্তে ই-মেইল করে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্যাক্স সুবিধা পাওয়া যায়।
- VOIP এর মাধ্যমে প্রচলিত ফোনের চেয়ে খুব কম খরচে বা বিনা খরচে বিশ্বের যেকোনাে প্রান্তে কথা বলা যায়।
- ইন্টারনেট টিভি ও ইন্টারনেট রেডিও চালুর ফলে ঘরে বসেই কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলের অনুষ্ঠান উপভােগ করা যায়।
- বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার, ফ্রিওয়্যার,বিনােদন উপকরণ ইন্টারনেট থেকে ডাউনলােড করে সংগ্রহ করা যায়।
- সংবাদপত্র ও পত্রপত্রিকার ইন্টারনেট সংস্করণ প্রকাশিত হবার ফলে এখন ঘরে বসেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা পড়া যায়।
- ই-কমার্সের সাহায্যে ঘরে বসেই পণ্য কেনা-বেচা যায়।
- ঘরে বসেই বিশ্বের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলাের শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।
- ভাইবার, হােয়াটসআপ, ম্যাসেঞ্জার, গুগল টক, স্কাইপি ইত্যাদি ইন্সট্যান্ট মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্বের যেকোনাে প্রান্তে থাকা যেকোনাে ব্যক্তির সাথে টেক্সট ও ভিডিও শেয়ার করা যায়।
- অনলাইনে চিকিৎসা সেবা নেয়া যায়।
- গুগল ম্যাপস এর মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনাে স্থানের স্যাটেলাইট মানচিত্র দেখে ওই স্থান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। ওইসব স্থানের ছবি জুম করে (বড় করে) খুব কাছে থেকেও দেখা যায়।
- শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হতে না পারলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের পাঠ্যক্রমের বিষয়ে নানা সহযােগিতা পেতে পারে। ইন্টারনেট থেকে শিক্ষামূলক বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা ও ব্যাখামূলক তথ্য আহরণ তাদের ফলাফল উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।
- ইন্টারনেট চাকরিজীবীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি, অধিক উপার্জন, সময় সাশ্রয় প্রভৃতি সুফল প্রদান করে।
- ব্যবসায়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাণিজ্যিক বিপণন, সরবরাহ, প্রচার প্রভৃতি বিষয়কে সাশ্রয়ী ও গতিশীল করে তােলে।
- বর্তমানে যেকোনাে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ইন্টারনেটের ব্যবহার অপরিহার্য।
ইন্টারনেটের কুফল:
- ইন্টারনেটে অনলাইন গেমস, সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমে মাত্রাহীন আড্ডা, কুরুচিপূর্ণ বিষয়ের চর্চা প্রভৃতি বিষয় গুলাে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মনযােগ ও সময় নষ্ট করে বলে তার ফলাফলে বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
- অনলাইনে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পণ্য বা সেবার মান সর্বদা সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে অর্থের অপচয় বা ক্ষতির শিকার হবার সম্ভাবনা থাকে।
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে কমপিউটারে হ্যাকিং, ভাইরাস বা মেলওয়্যার সংক্রমণ, স্প্যামিং প্রভৃতি আক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
- দীর্ঘসময় ইন্টারনেট ব্যবহারে ইন্টারনেট আসক্তির সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে ব্যবহারকারী নানা ধরনের স্বাস্থ্যহানির শিকার হয়ে থাকে এবং মানুষের পারিবারিক জীবনে ব্যাপক দূরত্বের সৃষ্টি হয়।
- ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোনাে সংবাদ খুব দ্রুত ভাইরাল আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে কোনাে ভুয়া বা ভুল। সংবাদ ভাইরাল হবার ফলে তা সামাজিক অস্থিরতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ব্যক্তিগত হয়রানির মতাে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।