গুগল এডসেন্স থেকে আয় করা এবং Google adsense পাওয়ার উপায় সহ বিস্তারিত টিউটোরিয়াল
আমাদের আজকের বিষয় গুগল এডসেন্স (Google AdSense) থেকে টাকা আয়েন উপায়। আমরা যারা অনলাইনে বিভিন্ন কাজের সাথে সম্পৃক্ত তারা সকলেই গুগল এডসেন্স সম্পর্কে কমবেশি জানেন। গুগল এডসেন্স হচ্ছে অনলাইন হতে অর্থ উপার্জনের একটি অন্যতম উপায়। আর আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা অনলাইনে অর্থ উপার্জন করতে চান। বিশেষ করে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে।
প্রথমেই আসি গুগল এডসেন্স (google adsense) কি এবং এর কাজ কি? গুগল এডসেন্স হচ্ছে গুগলের অন্যতম একটি প্লাটফর্ম যেখানে আপনি কন্টেন্ট তৈরির মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। মূলত গুগল এডসেন্স থেকে আয় আসে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের (advertisement) মাধ্যমে।
অর্থাৎ গুগল আপনার তৈরি কনটেন্টের ভিতরের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করবে। এবং তার বিনিময় আপনাকে তারা অর্থ প্রদান করবে। মূলত গুগল এডসেন্স বিভিন্ন কোম্পানি থেকে বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেলে এবং এপ্লিকেশনের মধ্যে প্রদর্শন করে থাকে। তাহলে এর থেকে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারলাম গুগল এডসেন্স এর কাজ কি।
প্রধানত গুগল এডসেন্স থেকে আপনি তিনটি উপায়ে টাকা উপার্জন করতে পারবেন। এগুলো হলো ব্লগ বা ওয়েবসাইট (earn money from website), ইউটিউব (Earn Money From YouTube) এবং অ্যাপ্লিকেশন (Application) হতে, আপনি এর যেকোনো একটির মাধ্যমে খুব সহজেই গুগল এডসেন্স থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
গুগল এডসেন্স এবং ইউটিউব: ইউটিউব আচ্ছা গুগোল এর অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে আপনি ফ্রিতে ভিডিও আপলোড এবং দেখতে পারবেন। তবে চাইলে এ ভিডিও আপলোড এর মাধ্যমে আপনি আয় করতে পারেন। ভিডিও আপলোড করে ইউটিউব থেকে আয় করতে হলে আপনাকে বেশ কিছু নিয়ম নীতি অনুসরণ করতে হবে। এগুলো হলো কোনভাবেই কোন কপিরাইটযুক্ত ভিডিও আপলোড করা যাবেনা। হাতে যদি আয়ের উদ্দেশ্যে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই নিজেই নিজের ভিডিও তৈরি করতে হবে। যদিও অনেকে আয়ের জন্য বিভিন্ন উপায়ে অন্যের ভিডিও এডিট করে আপলোড করে থাকে যেগুলো আসলে কোনো বৈধ বা কার্যকর উপায় নয়।
আপনার ইউটিউব চ্যানেলের গুগল এডসেন্স এর জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের অন্যতম 1000 সাবস্ক্রাইবার অর্জন করতে হবে। এবং আপনার ভিডিওতে 4000 ঘন্টা ওয়াচ টাইম থাকতে হবে। তাহলে আপনি আপনার ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একটি গুগল এডসেন্স একাউন্ট খুলতে পারবেন। উপরোক্ত শর্তসমূহ পূর্ণ হওয়ার পরে আপনি গুগল এডসেন্স এর জন্য আবেদন করবেন এবং তারা আপনার আবেদনটি পর্যালোচনা করার মাধ্যমে যদি আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি মনিটাইজেশন করার জন্য উপযুক্ত হয় তাহলে তারা আপনার ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন অন করে দেবে। এবং এরপরে আপনার ভিডিওর সাথে তারা বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করবে যা থেকে আপনি টাকা আয় করতে পারবেন।
ওয়েবসাইট বা ব্লগের মাধ্যমে গুগল এডসেন্স থেকে আয়: ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে আয় করার মতোই গুগল এডসেন্স থেকে আয় করার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ওয়েবসাইট বা ব্লগ। ওয়েবসাইট বা ব্লগের লেখালেখির একটি প্ল্যাটফর্ম এখানে আপনি আপনার আর্টিকেল লেখালেখি করে আয় করতে পারবেন। আপনার ব্লগে যদি মোটামুটি পরিমাণে ভিজিটর থাকে এখন এডসেন্স এর সকল নিয়ম নীতি অনুসারে আপনি ব্লক তৈরি করে থাকলে 20 থেকে 25 টি আর্টিকেল সাবমিট করার পরেই আপনি গুগল এডসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারেন। এক্ষেত্রেও তারা আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটে পর্যালোচনা করে দেখবে আপনার ওয়েবসাইটে অ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য উপযুক্ত কিনা। যদি উপযুক্ত হয় তাহলে তারা আপনার আবেদনটি গ্রহণ করবে এবং আপনার ব্লগের জন্য অ্যাডসেন্স একটিভ বা অ্যাপ্রুভ করে দেবে।
অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এডসেন্স থেকে আয়: আমরা বিভিন্ন কাজে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে থাকি এবং এসব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সময় আমরা দেখে থাকি এর ভিতরে প্রচুর পরিমাণে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হয়। চাইলে আপনিও একটা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে আয় করতে পারেন। তবে অ্যাপ্লিকেশন এর ক্ষেত্রে আপনাকে এডমোব (admob) ব্যবহার করতে হবে। কারন গুগল এডসেন্স অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে এক নামের মাধ্যমে।
তবে অ্যাপ্লিকেশন আর এক্ষেত্রে ইউটিউব এবং ওয়েবসাইটের থেকে কিছুটা ভিন্নধর্মী। আপনার জন্য এপ্লিকেশন জন্য এডসেন্স ব্যবহার করেন চান তাহলে এড ভাবে লগইন করে আপনাকে এড করতে আগ্রহ করে আপনার অ্যাপসটিতে বসাতে হবে যার ফলে তারা আপনার অ্যাপ্লিকেশনটিতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন শুরু করবে। এর জন্য আপনাকে কোন আবেদন প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে না সরাসরি তারা আপনার অ্যাপসে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে শুরু করবে।
ইউটিউব বলুন বা ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপ্লিকেশন এগুলোতে অ্যাডসেন্সে অ্যাপ্রভে হওয়ার পরে যখন আপনার আয় 10 ডলার ছাড়িয়ে যাবে তখন গুগল এডসেন্স কতৃপক্ষ আপনার ঠিকানায় ডাকযোগে একটি পিন লেটার (Pin letter) পাঠাবে। যে চিঠির মধ্যে ছয় সংখ্যার একটি কোড দেওয়া থাকবে। যে কোড টির মাধ্যমে আপনার এডসেন্স একাউন্টের পিন ভেরিফাই সম্পন্ন করতে হবে।
তবে এক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে আপনার এডসেন্স একাউন্ট খোলার সময় আপনাকে অবশ্যই সঠিক ঠিকানা দিতে হবে না হলে আপনি কোনদিন 3 লেটার হাতে পাবেন না এবং আপনার এডসেন্স একাউন্টের পিন ভেরিফাই করতে পারবেন না। তবে পিন ভেরিফাই এর বিকল্প হিসেবে আপনি ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করেও কাজটি সেরে নিতে পারবেন। তবে সবচেয়ে সঠিক কাজ হবে সঠিক ঠিকানা এর মাধ্যমে আপনার এডসেন্স একাউন্ট টি তৈরি করা।
এবং পরবর্তীতে যখন আপনার এডসেন্স একাউন্টে 100 ডলার পূর্ণ হবে তখন গুগল এডসেন্স কর্তৃপক্ষ আপনাকে আপনার ব্যাঙ্ক একাউন্টের মাধ্যমে প্রেমেন্ট করে দেবে। এ কারণে তিনি ভেরিফাইয়ের পরে এবং 100 টাকার পূর্ণ হওয়ার আগেই আপনি একশনস একাউন্টের পেমেন্ট অপশনে গিয়ে আপনার ব্যাংক একাউন্টটি যুক্ত করে দিবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই যে নামে এডসেন্স একাউন্ট তৈরি করেছেন এই নামে ব্যাংক একাউন্ট দেওয়া ভালো হবে। অন্যথায় পেমেন্ট গ্রহণে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং আপনার এডসেন্স একাউন্টে 100 ডলার পূর্ণ হলে প্রতি মাসের 23 তারিখ তারা আপনার ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেবে। তবে প্রতি মাসের 23 তারিখের পেমেন্ট পাঠালেও ব্যাংক ভেদে একাউন্টে টাকা জমা হতে দেরি লাগতে পারে। কিন্তু এর জন্য চিন্তার কোন কারণ নেই। একদিন দেরী হলেও আপনার তথ্য সব ঠিকঠাক থাকলে অবশ্যই পেমেন্ট জমা হয়ে যাবে।
গুগল এডসেন্স সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: অনেকের মধ্যে গুগল এডসেন্স সম্পর্ক ধারণার ভিন্নতা দেখা যায়। এগুলো হলো ব্লগ বা ওয়েবসাইটে গুগল এডসেন্স থাকলেই আপনি টাকা উপার্জন করতে পারবেন। অথবা গুগল এডসেন্স প্রতি ভিজিটর হিসেবে অর্থ প্রদান করে থাকে। কিন্তু বিষয়টি সে রকম নয়। আপনার ব্লগে বা ইউটিউব চ্যানেলে ভিজিটর না থাকলেও আপনি টাকা পাবেন এমনটা নয়। আবার ভিজিটর থাকলেই যে আপনি টাকা পাবেন সেটাও কিন্তু নয়।
এডসেন্স থেকে কত টাকা আয় করবেন তা মূলত নির্ভর করে আপনার কন্টেন্ট এবং CPC এবং ক্লিকের উপর। ক্লিক এবং সিপিসি বেশি থাকলে আয় বেশি। আর আর কম হলে আয় কম। কিন্তু তবে তার মানে এই নয় যে গনহারে ক্লিক আসলেই আয় বেশি। অতিরিক্ত পরিমান ক্লিক আসলে এডসেন্স ডিজেবল হয়ে যেতে পারে।
কিভাবে বুঝবেন আপনার অ্যাডসেন্সে অতিরিক্ত ক্লিক আসছে? অতিরিক্ত ক্লিক বোঝার উপায় হচ্ছে CTR অর্থাৎ ক্লিক থ্রো রেট দেখা। এটি পেইজ ভিউ এবং এডস ক্লিকের একটি রেশিও। আপনার পেইজ ভিউ যদি ১০০ হয় এবং ক্লিক ৫ টি তাহলে আপনার CTR হচ্ছে ৫%।
গুগল এডসেন্স সম্পর্কে কত গুলো বিধি নিষেধ: গুগল এডসেন্স সম্পর্কে কতগুলো বিধিনিষেধ রয়েছে যেগুলো আপনি সঠিকভাবে না করলে আপনার এডসেন্স একাউন্ট অ্যাড লিমিত করে দিবে। এমনকি ডিজেবল করে দিতে পারে।
এগুলো হলো: প্রথমত কখনোই নিজের বিজ্ঞাপনে নিজেই ক্লিক করা যাবে না। আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেলের বিজ্ঞাপন নিজেই ক্লিক করেন তাহলে তারা আপনার এডসেন্স অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দিবে। এছাড়াও পেইড ট্রাফিক অথবা পেইড ক্লিক করালে Google AdSense অ্যাকাউন্টটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।