ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং কি আসলেই মুক্ত পেশা ( ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা)
তাহলে এবার আসি একজন ফ্রিলান্সারের বাস্তব জিবনে। আপনি যদি নিজেকে একজন দক্ষ ফ্রিলান্সার হিসেবে গড়ে তুলতে চান তাহলে আপনার কঠোর পরিশ্রমি। আচ্ছা ফ্রিলান্সিং মানে তো ঘরে বসে কম্পিউটার চাপা এতে কিসের কঠোর পরিচয় তাই না? কিন্তু ভাবুন তো আপনি গতকাল সারারাত ঘুমান নাই। এবং সকালেও আপনি কম্পিউটারের টেবিল ছাড়তে পারছেন না! নিজের অগোচরে ভূলেই গিয়েছেন কখন বাজলো সকাল ১০ টার বেশি ওদিকে ব্রেকফাস্ট ও হয় নাই এখনো। এতো ব্যবস্তার কারন কি জানেন নির্দিষ্ট টাইমে বায়ার কে কাজ জমা দিতে হবে। আচ্ছা আজ না হয় কাজ জমা দিলাম সে পেমেন্ট করে দিলো। কিন্তু তাহলই কি আপনার কষ্ট শেষ? না কাজ শেষ নয় এখন আবার রাত জেগে কাজের খোজ করতে হবে।
হ্যাঁ এরকম হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং পেশা। যে বা যারা ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে মুক্ত পেশা এবং অগাধ টাকা আয় (earn money) এর পথ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন তাদের অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে ধারণা অর্জন করার পরে এসব কথা বলা উচিত। কারণ তারা যতটা সহজ ভাবে ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিং এর ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে আসলে এতটা সহজ বিষয় নয় ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার। তাহলে আসুন জেনে নেই বাস্তবে এই ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার কিরকম এবং একজন ফ্রিল্যান্সারের জীবন কি রকম হয়ে থাকে। তাহলে বুঝতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং কি আসলেই মুক্ত পেশা নাকি চিরাচরিত নিয়মে চাকরি করা থেকেও এটি একটি কঠিন কাজ।
প্রথমেই বলে রাখি আমাদের দেশ বর্ধমানের ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিং এর দিক থেকে বিশ্বে চতুর্থ অবস্থান ধরে রেখেছে। এবং ফ্রিল্যান্সিং প্রেসার এর সাথে যুক্ত রয়েছে এরকম মানুষের সংখ্যাও আমাদের দেশে কয়েক লক্ষ হবে। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন আনুপাতিক হারে এই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে সফল ব্যক্তির সংখ্যা খুবই কম যারা তাদের চাহিদা মতো অর্থ কামাই করতে পারেন এই সেক্টর হতে। এবং যার মাধ্যমে বিলাসী জীবন যাপন করতে পারছেন।
যাই হোক আসুন মূল বিষয়ে আসা যাক। এবং জেনে নেই বাস্তবে একজন ফ্রিল্যান্সারের জীবন কেমন। একজন ফ্রিল্যান্সারের যখন মনস্থির করে সে ফ্রিল্যান্সিং কে ক্যারিয়ার হিসেবে নিবেন তখন সর্বাগ্রে প্রয়োজন পড়ে তার কাজ শেখার। কারণ ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর আমাদের দেশের চাকরির মত নয় যে আপনি সার্টিফিকেট এবং মোটা অঙ্কের ঘুষ প্রদান করলে আপনার কাজ হয়ে যাবে। এখানে অবশ্যই আপনাকে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে আপনি একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার। তাহলেই আপনি কাজ পাবেন না হলে কাজের আশা ছেড়ে দেওয়াই শ্রেয়।
একজন ফ্রিল্যান্সারকে দক্ষ হতে হলে মাসের পর মাস কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কাজ শিখতে হয়। সেটা হোক ওয়েব ডেভলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন বা অন্য যে কোন সেক্টরে।
তবে কাজ শিখলে আপনি কাজ পাবেন এরকম কোনো নিশ্চয়তা নেই। হ্যাঁ আপনি কাজ লিখেছেন এবং দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারেন। কিন্তু সেটা প্রমাণিত করতে হবে কিনা! এর জন্য রাতের পর রাত জেগে আপনাকে কাজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। রাত জাগার প্রধান কারন হচ্ছে প্রধানত ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে যে সকল কাজ দেয়া হয় এগুলো বেশিরভাগই বহির্বিশ্বের লোকজন। তাদের টাইম জনের পার্থক্যের কারণে তাদের থেকে কাজ পেতে হলে আমাদের রাত জাগতে হয়। কয়েক রাত জেগে আপনি হয়তো একটি কাজ পেয়ে গেলেন। এখানেই কি শেষ না আপনাকে কাজ শেষ করতে হবে এবং কাজ ডেলিভারি দিতে হবে তবেই আপনি পেমেন্ট পাবেন। কিন্তু এর মধ্যেও রয়েছে হাজারো ঝামেলা।
প্রথমত আপনাকে কাজ শেষ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে দেওয়া হবে। আপনি যদি নির্দিষ্ট সময় পত্রে কাজ কমপ্লিট করতে না পারেন তাহলে যেমন সমস্যায় পরতে হবে। তেমনি কাজ শেষ করতে পারলেই আপনার ঝামেলা শেষ নয়। কাজ যদি ক্লায়েন্টের পছন্দ অনুযায়ী না হয় তাহলে আবার আপনাকে ঠিকঠাক ভাবে কাজ করে দিতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্লায়েন্ট না বলবে যে কাজ ঠিকভাবে হয়েছে এবং তার পছন্দ হয়েছে।
ধরুন আপনাকে একটি কাজের জন্য 10 ঘণ্টা সময় ধরে দেয়া হয়েছে। আপনি কাজটি পেলেন রাত 2 টার সময়। আপনি কাজটি গ্রহণ করার সাথে সাথেই আপনার সময় শুরু হয়ে গিয়েছে। তাহলে এই 10 ঘন্টার ভিতরে হবে কাজটি কমপ্লিট করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি সারারাত জেগে কাজ পেলেন এরপরে কাজ কমপ্লিট করতে গিয়ে নিউ ঘুমাতে পারলেন না। একদিকে কাজ করছেন অপরদিকে সময় শেষ হয়ে গেল কিনা তার চিন্তা। যাইহোক নির্ধারিত সময়ের ভিতর কাজ শেষ করে কাজ জমা দেয়ার পরে ক্লায়েন্ট বলল কাজটি ঠিক ভাবে হয়নি এবং কোথায় কোথায় সমস্যা দেখিয়ে দিল।
আপনি আবার বসে গেলেন কাজ ঠিক করতে কাজ ঠিকঠাক করার পরে আপনি কাজটি জমা দিলেন এবং তার পছন্দ হলো। সে আপনাকে প্রেমেন্ট করে দেবে। কিন্তু রাত গেল দিন গেল কিন্তু আপনি ঘুমাতে পারলেন না না পারলেন সঠিক সময়ে খাওয়া-দাওয়া গোসল শেষ করতে। তারপরে যাইহোক কাজটা কমপ্লিট হয়েছে। কিন্তু এখানে সমস্যা হলো আপনি কি কাজ পেয়েছেন তার মানে এই নয় আপনি সারা রাতের জন্য নিশ্চিন্ত। কারণ আপনার কাছেই জমা দেওয়ার পরেই আবার আপনাকে নতুন একটি কাজের জন্য খোঁজ করতে হবে।মনে করুন আগামী মাসে আপনার কোথাও যাওয়ার প্ল্যান আছে। কিন্তু যাবার 2-1 দিন আগেই আপনি কোন কাজ পেলেন। আপনি কি কাজটা ছেড়ে দিবেন? অবশ্যই না! কিন্তু আপনার ট্রিপটা ক্যান্সেল হতে পারে এই কাজের জন্য।
সর্বোপরি উপরোক্ত কথাগুলো থেকে বুঝতে পারার জন্য একজন ফ্রিল্যান্সারের সাধারণ জীবন যাপন কেমন। ফ্রিল্যান্সার কে শুধুমাত্র কাজ খুঁজলেই হয় না। সেই সাথে কাজ করলে কাজ করতে হবে আবার কাজ করার সাথে সাথে কাল কি কাজ করবেন সেটা খুঁজতে হবে। এবং ক্লায়েন্টের পছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
তাহলে খুব সহজ ভাবে বোঝা যায় ফ্রিল্যান্সিং আসলে মুক্ত পেশা নয় বরংচ চিরাচরিত নিয়মে চাকরির থেকেও এটি বেশি ঝামেলা দায়ক। চাকরিতে আপনার যতই চাপ থাকুক না কেন নির্ধারিত সময়ে আপনি ছুটি পাবেন। হয়তো বিশ্বাস করা কারনে আপনার কিছুটা সময় দেরী হতে পারে তবে তার মানে নয় আপনাকে সারা রাত জেগে কাজ করতে হবে। যাই হোক মাসে আপনার নির্ধারিত একটি বেতন পাবেন যাতে আপনার সংসার চলে যাবে। এবং যেহেতু আপনার বেতন সুনির্দিষ্ট তাই আপনি আপনার এই বেতনের মাধ্যমে আপনার সংসারে ম্যানেজ করে নিতে পারবেন। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরটা এমন নয় যে আপনি আগামী মাসে নির্ধারিত টাকা আয় করতে পারবেন!