ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার এবং ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি দরকার
শিরোনাম দেখে অনেকেই ভাবতে পারেন এটা কোন পোস্ট হলো! তবে আপনার অবশ্যই জানা উচিত বর্তমান সময়ে এসেও অনেকের কাছেই ব্যাংক একাউন্ট খোলা হচ্ছে পর্বতসমান ঝামেলার কাজ! এবং কোন ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে বাকি এ নিয়েও অনেকের দ্বিধাদ্বন্দ্বের শেষ নেই! আবার অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার, ব্যাংক খুলতে কত টাকা লাগে, সোনালী ব্যাংক অথবা ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে! তবে আমাদের প্রথমেই এটি জেনে রাখা উচিত আপনি যে ব্যাংকে একাউন্ট করুন না কেন সকল ক্ষেত্রেই আপনাকে একই ধরনের কাগজপত্র সঙ্গে নিতে হবে।
প্রথমেই আমরা জেনে নেই ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার ও কি কি এ সম্পর্কে, ব্যাংক একাউন্ট সাধারণত চার ধরনের হয়ে থাকে। এগুলো হলো-
- চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্ট (current account)
- সঞ্চয়ী হিসাব বা সেভিংস একাউন্ট (savings account)
- ডিপিএস- ডিপোজিট পেনশন স্কিম (DPS - deposit pension scheme)
- এফডিআর - ফিক্সড ডিপোজিট রিসিট (FDR- fixed deposit receipt)
১:চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্ট (current account) - সাধারণত চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্ট খোলা হয়ে থাকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য। যেখানে নিয়মিত লেনদেন হয়ে থাকে। আপনি চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্টে প্রতিদিন যতবার খুশি ততবার টাকা জমা এবং উত্তোলন করতে পারবেন এক্ষেত্রে আপনার কোন বিধি-নিষেধ থাকবে না। তবে চলতি হিসাবের ক্ষেত্রে আপনার একাউন্টে যত টাকা থাকুক না কেন এর উপর আপনি কোন লভ্যাংশ পাবেন না। পক্ষান্তরে আপনাকে বছর শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে!
২: সঞ্চয়ী হিসাব বা সেভিংস একাউন্ট (savings account)- সঞ্চয়ী হিসাব বা সেভিংস একাউন্ট মূলত ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য খোলা হয়। এখানে আপনি টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন এবং আপনার সঞ্চিত টাকার উপর আপনি বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণে লভ্যাংশ পাবেন। মূলত ব্যাংক ভেদে লভ্যাংশের পরিমাণে হেরফের হতে পারে তবে সকল ব্যাংক-প্রতিষ্ঠান ৪-৬% লভ্যাংশ জমা টাকার উপরে প্রদান করে থাকে। এবং ব্যাংক ভেদে আপনি দিনে বা মাসে কতবার লেনদেন করতে পারবেন তা নির্ধারিত থাকে সেভিংস একাউন্টে।
৩: ডিপিএস- ডিপোজিট পেনশন স্কিম (DPS - deposit pension scheme) -ডিপিএস হচ্ছে এমন একটি ব্যাংকিং সুবিধা যেখানে আপনি প্রতিমাসে বা বছরে অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় পরপর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখলে নির্ধারিত সময় পরে আপনি আপনার জমা টাকা এবং লভ্যাংশ সহ এক বারে ফেরত পাবেন। এবং এ ব্যাংক একাউন্টে লেনদেন এর জন্য উপযুক্ত নয় এখানে শুধুমাত্র আপনার টাকা জমা রাখতে পারবেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে শেষেই তুলতে পারবেন।
[অনলাইনে ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম]
আমরা এবার আসি আমাদের দ্বিতীয় প্রশ্নে কোন ব্যাংকে একাউন্ট করলে ভাল হবে? এরকম প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন তবে সুনির্দিষ্টভাবে এই প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। কারণ আপনার সুবিধা আপনার নিজেকেই বুঝতে হবে অর্থাৎ কোন ব্যাংকের ব্রাঞ্চ আপনার কাছে হবে বা আপনার এলাকায় কোন ব্যাংকের ব্রাঞ্চ এর সার্ভিস কেমন এগুলো শুধুমাত্র আপনি জানেন। বা আপনার নিকটস্থ লোকজনের কাছ থেকেও আপনি জানতে পারেন। তবে একটা কথা জেনে রাখা ভালো বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে থাকা সকল ব্যাংকের ই সার্ভিস ভালো তাই নির্দ্বিধায় আপনি যেকোনো একটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারেন।
এবার আসি তৃতীয় প্রশ্নে এটি হচ্ছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অর্থাৎ ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে? একটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে আপনাকে বেশ কয়েকটি ডকুমেন্ট সাথে করে নিয়ে যেতে হবে ব্যাংকে! অর্থাৎ আপনি যে ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলবেন তার ব্রাঞ্চে আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে।
ব্যাংকে একাউন্ট তৈরী করতে যা যা দরকার তা হলো-
- পাসপোর্ট সাইজের 2 কপি ছবি।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- আপনার ব্যাংক একাউন্টে যাকে নমিনি রাখতে চান তার এক কপি ছবি (পাসপোর্ট সাইজের)
- নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- এছাড়াও চেয়ারম্যান বা মেয়র এর থেকে পরিচয় পত্র ( জাতীয় পরিচয় পত্র থাকলে চেয়ারম্যান বা মেয়র এর পরিচয় পত্র দরকার হবে না)।
- আপনার ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য আপনার বাসার বিদ্যুৎ বিল এর ফটোকপি ও তারা চাইতে পারে।
উল্লেখিত কাগজপত্র নিয়ে আপনি আপনার নিকটস্থ ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করলে তারা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেবে।
এছাড়াও চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্ট এর জন্য আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স। প্রতিষ্ঠানের নাম ঠিকানা সম্বলিত সিলমোহর ইত্যাদির দরকার হবে।
বিঃদ্রঃ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রের ফটোকপি তার সাথে সাথে মূলকপি ও আপনার সাথে রাখুন।
এবার জেনে নেই ব্যাংক খুলতে কত টাকা লাগে? ব্যাংক এবং একাউন্টের প্রকারভেদে আপনার কাছ থেকে তারা 500 থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত নিতে পারে। তবে এটা কার সম্পূর্ণই আপনার একাউন্টে জমা থাকবে। এর বাইরে আপনাকে কোন অতিরিক্ত চার্জ করা হবে না।