কম্পিউটার এর শ্রেণিবিভাগ ও বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা (Classification of computers)
আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে বিজ্ঞানের জয়জয়কার শোনা যাচ্ছে চারিদিকে। আর বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কারের মধ্যে সবচাইতে বিস্ময়কর আবিষ্কার হচ্ছে কম্পিউটার। কম্পিউটারের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা বা বর্ণনা কর-বো আমাদের আজকের আর্টিকেলে এবং কম্পিউটারের শ্রেণীবিন্যাস ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা অর্জন করব।
ডিজিটাল কম্পিউটার কত প্রকার? কাজের দক্ষতা এবং আকারের ভিত্তিতে ডিজিটাল কম্পিউটার প্রধানত ৪ শ্রেণিতে বিভক্ত। যেমন- সুপার কম্পিউটার (super computer), মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe computer) , মিনিফ্রেম কম্পিউটার (Miniframe computer) এবং মাইক্রো কম্পিউটার (micro computer) বা পার্সোনাল কম্পিউটার (personal computer)।সুপার কম্পিউটার (super computer): সুপার কম্পিউটার (Super Computer) হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী, ব্যয়বহুল এবং সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন কম্পিউটার। সুপার কম্পিউটারের সাহায্যে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম এবং জটিল বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের কাজ করা যায়। এ ধরনের কাজ অন্য কোনাে শ্রেণির কম্পিউটারের সাহায্যে করা সম্ভব নয়। মহাকাশ গবেষণা, পরমাণু শক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে আধুনিক ও উন্নততর গবেষণার কাজ সুপার কম্পিউটার ছাড়া আশানুরূপভাবে পরিচালনা করা যায় না।
বর্তমানে ব্যবহৃত সুপার কম্পিউটারগুলিতে কয়েক হাজার প্রসেসর একই সঙ্গে কাজ করে এবং প্রতি সেকেন্ডে কোটি কোটি বৈজ্ঞানিক/ গাণিতিক বিশ্লেষণ ও প্রক্রিয়াকরণের কাজ সম্পাদন করে। আমেরিকা ও জাপান সহ বিশ্বের অনেক দেশ সুপার কম্পিউটার তৈরি করে থাকে। আবহাওয়া গবেষণা ও আবহাওয়া বার্তা অনুধাবনের জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ (Satellite), বিমান ও ভূ-কেন্দ্রের মাধ্যমে ভূমণ্ডলীর পরিবেশ (Atmosphere) এবং আবহাওয়ার উপাত্ত সংগ্রহ করে ইনপুট হিসেবে সুপার কম্পিউটারে প্রদান করা হয়। সুপার কম্পিউটারে বিদ্যমান প্রােগ্রামের সাহায্যে এ সব উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ হয়ে ফলাফল বা আউটপুট প্রদর্শিত/ মুদ্রিত হয়।
সুপার কম্পিউটার অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ কারণেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে এ সব কম্পিউটার ক্রয় বা ব্যবহারের কথা ভাবা যায়। সরকারিভাবে এবং খুব বড় ধরনের প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই কেবল সুপার কম্পিউটার ক্রয় ও ব্যবহার করা সম্ভব।
বাংলাদেশে কোনাে সুপার কম্পিউটার নেই। ভারত 'পরম' নামে একটি সুপার কম্পিউটার নিজেরাই তৈরি করেছে এবং সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করছে।
জুলাই ২০০৮ সময়কালে বিশ্বের দ্রুততম সুপার কম্পিউটার ছিল আইবিএম রােডরানার। এটি আসলে ৪০ টি প্রসেসর সংবলিত ৩২৪০ টি কম্পিউটারের গুচ্ছ।
মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer) : সুপার কম্পিউটারের চেয়ে তুলনামূলক কম শক্তিশালী কম্পিউটার হচ্ছে মেইনফ্রেম কম্পিউটার (Mainframe Computer)। মেইনফ্রেম কম্পিউটার বিপুল পরিমাণ উপাত্ত বিশ্লেষণের কাজ করতে পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম উপাত্ত বিশ্লেষণ ও গাণিতিক কাজ মেইনফ্রেম কম্পিউটারের সাহায্যে
দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদন করা যায়। তবে, অফিস আদালত, বড় বড় শিল্পকারখানা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ এবং জটিল তথ্য ব্যবস্থাপনার কাজের জন্যই সাধারণত মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
মেইনফ্রেম কমিপউটারে মূল কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটের সঙ্গে অনেকগুলি টার্মিনাল যুক্ত করে একই সঙ্গে অনেক ব্যবহারকারী বিভিন্ন।ধরনের কাজ করতে পারেন। এ কমিপিউটারে বিভিন্ন প্রকার এ্যাপ্লিকেশন প্রােগ্রাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যায়। এ ছাড়া উচ্চ স্তরের প্রােগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করেও প্রয়ােজনীয় সব ধরনের কাজ করা যায় ।
[ কম্পিউটারের প্রকারভেদ ও তার বৈশিষ্ট্য]
বাংলাদেশে প্রথম মেইনফ্রেম কমিপিউটার স্থাপিত হয় ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে। এরপরে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোের্ড ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে মেইনফ্রেম কম্পিউটার স্থাপিত হয় আইবিএম, ইউনিপিস, হিউলেট প্যাকার্ড ইত্যাদি কোম্পানি মেইনফ্রেম কম্পিউটার তৈরি করে।
মিনিফ্রেম কম্পিউটারও ছিল বহুমুখী ব্যবহারের কমিপিউটার। অফিস-আদালত, শিল্পকারখানা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা ও বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ এবং তথ্য ব্যবস্থাপনার জন্য মিনিফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহার করা হত। উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ থেকে শুরু করে শিল্প কারখানার উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংক বীমার দ্রুত ও তাৎক্ষণিক হিসেব নিষ্পন্ন করার কাজে মিনিফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহার করা হত।
মাইক্রো কম্পিউটার (micro computer): মাইক্রোকম্পিউটার (Microcomputer) হচ্ছে ছোট আকারের কম্পিউটার। এক ব্যক্তি একটি কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকেন । এ জন্য মাইক্রো কম্পিউটারকে পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি বলা হয়।
মাইক্রো কম্পিউটার বা পার্সোনাল কমিপউটারের ব্যবহার সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটার প্রযুক্তি সাধারণ স্তরের মানুষের ব্যবহারের আওতায় এসেছে। অফিস-আদালত, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত ধরনের কাজ করতে পারেন। এ কমিপিউটারে বিভিন্ন প্রকার এ্যাপ্লিকেশন প্রােগ্রাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যায়। এ ছাড়া উচ্চস্তরের প্রােগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করেও প্রয়ােজনীয় সব ধরনের কাজ করা যায়।
প্রয়ােজন ইত্যাদি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের কাজে এখন মাইক্রো কম্পিউটার ব্যবহুত হচ্ছে। মাইক্রোকম্পিউটার প্রধানত একক প্রসেসর (Uniprocessor) বিশিষ্ট হয় । তবে সম্প্রতি মাইক্রো কম্পিউটারে মাল্টিপ্রসেসর যুক্ত হচ্ছে।
মাইক্রো কম্পিউটারে ব্যবহৃত প্রসেসরের ক্ষমতা অতি দ্রুত উন্নত থেকে উন্নততর হওয়ায় মিনিফ্রেম কম্পিউটারের প্রয়ােজনীয়তা ইতােমধ্যেই ফুরিয়ে গেছে। মিনিফ্রেম কমিপউটার এখন আর ব্যবহ্ত হয় না।
বিশ্বে এখন সর্বাধিক জনপ্রিয় মাইক্রো কম্পিউটারকে পিসি বা পার্সোনাল কমিপউটার বলা হয়। টেবিলের উপর রেখে কাজ করা যায় বলে মাইক্রোকমিপিউটারকে ডেস্কটপ কম্পিউটার হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাইক্রোকম্পিউটারের আকার ও ওজন কমে আসত থাকে। বহনযােগ্য আকারের কমিপউটারে মাইক্রো কম্পিউটারের সকল গুণাবলি অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব হয়। এ সব বহনযােগ্য কম্পিউটার ল্যাপটপ কম্পিউটার হিসেবে পরিচিত। ল্যাপটপের আকারও ছােট হচ্ছে। ল্যাপটপের চেয়ে ছােট আকারের কম্পিউটারও এখন জনপ্রিয় হচ্ছে। মােবাইল ফোনও হয়ে উঠছে মাইক্রো কম্পিউটার।