বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের লাভ ক্ষতি ও সঞ্চয় হিসেবে এর গ্রহনযোগ্যতা
আমরা বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের আলোচনা সমালোচনা শুনে থাকি। বিটকয়েন (Bitcoin) বা ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকার কারণে আমাদের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে। আমাদের আজকের আলোচনায় জেনে নেব আমরা কেন ব্যবহার করবো বা কেন ব্যবহার করবো না। ভবিষ্যৎ সঞ্চয় হিসেবে এটির গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু। বা এর ব্যবহারের ফলে আপনি কোন কোন ধরনের লাভ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন সে সম্পর্কে।
এছাড়াও আপনি 100 টাকা নিয়ে দোকানে গিয়ে যদি বলেন 100 টাকা সমমূল্যের কোন জিনিস আপনাকে দিতে তাহলে দোকানদারকে অবশ্যই আপনার 100 টাকা গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ সে কখনোই বলতে পারবেন আর যে আপনার এই 100 টাকার চলবে না বা অচল। যদি সে একথা বলে তাহলে আপনি চাইলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবেন কারণ এটি সরকার কর্তৃক প্রদত্ত এবং সরকার ব্যবস্থা ছাড়া নিয়ন্ত্রিত। এছাড়াও সরকার চাইলেই আপনার এই 100 টাকা বন্ধ করে দিতে পারবে না। কারণ এখানে তার কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে।
তবে আপনার কাছে 100 টাকা সমমূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি থাকলে আপনি যদি কোন দোকানে গিয়ে বলেন 100 টাকা সমমূল্যের পণ্য ক্রয় করার পরে আপনি বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করবে চান তাহলে দোকানি যদি তা গ্রহন অস্বীকৃতি জানায় আপনার কিছু করার নেই। অর্থাৎ সেখানে আপনার এই ক্রিপ্টোকারেন্সি অচল।
তবে কেন ব্যবহার করবো আমরা এই বিটকয়েন? বর্তমান সময়ে অনেক জায়গায় আপনি এটি ব্যবহার করতে পারবেন। এবং আপনাকে নগদ অর্থ পরিবহন করতে হবে না। সহজে লেনদেন এর সুবিধা ও গোপনীয়তা রয়েছে।
তাহলে কেন বিটকয়েন আমরা ব্যবহার করব না? যেহেতু এটি একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা এবং সবার কাছে এখনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি সে ক্ষেত্রে আপনি যদি নগদ অর্থের পরিবর্তে শুধুমাত্র বিটকয়েন ব্যবহার করেন তাহলে আপনি সব ক্ষেত্রে এর মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন না।
বিটকয়েন ব্যবহারে আমাদের কোন ধরনের লাভ হতে পারে? বিটকয়েন এবং অন্যান্য ভার্চুয়াল মুদ্রা যে গুলো রয়েছে তার দাম ক্রমান্বয়ে ওঠানামা করে। ধরুন আপনি 35 হাজার ডলারে এক বিটকয়েন কিনলেন। তারপরের দিন বিটকয়েনের দাম বৃদ্ধি পেয়ে 50 হাজার ডলার হয়ে গেল! তাহলে আপনি শুধুমাত্র এই ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহারের কারণে এক দিনে 15 হাজার ডলার লাভ করে ফেললেন! অর্থাৎ আপনি এই 35 হাজার টাকা দিয়ে এখন 50 হাজার টাকা সমমূল্যের লেনদেন করতে পারবেন। তাহলে আমরা বুঝতেই পারছি এই ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহারের ফলে আমাদের সম্পদের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে।
বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের ফলে যে ধরনের ক্ষতি বা লোকসান হতে পারে:- ধরুন আপনার কাছে 10 হাজার টাকা রয়েছে এক্ষেত্রে আপনার 10000 টাকা দিয়ে আপনি আজ যা ক্রয় করতে পারবেন একবছর পরেও 10000 টাকা সমমূল্যের পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে আপনার একই পণ্য কিনতে টাকা বেশি বা কম লাগতে পারে। কিন্তু আপনার আজকের 10000 টাকার মূল্য এখন যা আগামী এক বছর পরেও আপনার 10000 টাকা 10000 টাকাই থাকবে। অর্থাৎ নগদ অর্থ হ্রাস/বৃদ্ধি ঘটবে না।
কিন্তু আপনি যদি এখন 10000 টাকার বিটকয়েন ক্রয় করে লেনদেনের জন্য রাখেন তাহলে লেনদেনের সময় আপনার বিটকয়েনের দাম কম থাকলে অর্থাৎ 10 হাজার টাকার বিটকয়েন যদি 9000 টাকা হয়ে যায় তাহলে একই পরিমাণ বিটকয়েন দিয়ে আপনি 9000 টাকার পন্য ক্রয় করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনার লস হয়ে গেল ১০০০ টাকা।
এবার আসি সঞ্চয় এর জন্য বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি কতটুকু গ্রহণযোগ্য:- যেহেতু বিটকয়েন বা অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং এর দাম সব সময় ওঠানামা করে তাই আপনার সঞ্চয় এর জন্য বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি উপযুক্ত নয়।
তবে উপরি কিছু অর্থ লাভের জন্য আপনি বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি সঞ্চয় করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার সঞ্চয় এর অতিরিক্ত কিছু অর্থ এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে সঞ্চয় পুরোটা বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ করা সম্পূর্ণ বোকামি। কারণ মূল্য হ্রাসের কারণে এখানে বিশাল বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। তবে মূল্য বৃদ্ধি পেলে সেটাই আপনার ভাগ্য।
তাই আমি পরামর্শ দেবো কখনোই সঞ্চয় হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার না করার। কারণ এখানে বড় পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
কিভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে আপনি অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে পারেন:- বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়ার কতগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এগুলোর উপর ভিত্তি করে দাম কম থাকা অবস্থায় যদি আপনি এটি ক্রয় করে রাখেন তাহলে মূল্যবৃদ্ধি সময় বিক্রি করে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে পারেন। যা ক্রিপ্টো ট্রেডিং নামে পরিচিত।
তবে লাভের আশায় না জেনে না বুঝে এখানে বিনিয়োগ করার সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ এবং বোকামি।
ক্রিপ্টো ট্রেডিং করতে হলে অবশ্যই আপনাকে এ বিষয়ে যথেষ্ট পরিমাণে ধারণা অর্জন করতে হবে তবেই আপনি লাভবান হতে পারবেন।
সর্বোপরি আমাদের দেশে এবং বিভিন্ন দেশে বিটকয়েন এবং ভার্চুয়াল মুদ্রা সরকারি ভাবে অবৈধ। এর লেনদেন এবং ব্যবহার বেআইনি এবং অপরাধমূলক কাজের শামিল। একটি দেশের নাগরিক হিসেবে সেই দেশের আইন মেনে চলা আমাদের সকলের কর্তব্য। তাই আইনি জটিলতা এড়াতে এবং একজন নাগরিক হিসেবে দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সকল ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন আমাদের বর্জন করা সকলের উচিত।