ব্লকচেইন প্রযুক্তি কি এবং কিভাবে কাজ করে- Blockchain technology Bangla Tutorial
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্লক চেইন প্রযুক্তি (Blockchain technology) শব্দটি শুনে থাকি। তবে আমাদের কাছে শব্দটি নতুন হবার কারনে আমরা অনেকেই জানিনা ব্লকচেইন কি (What is blockchain)? ব্লকচেইন শব্দটি মূলত দুইটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। শব্দ দুটি হলো "ব্লক (Block)" এবং "চেইন (Chain)" বা শিকল। অর্থাৎ ব্লকচেইন (Blockchain) শব্দের অর্থ হচ্ছে অনেক গুলো ব্লক কে চেইন আকারে সাজানো বা "ব্লকের তৈরি তৈরি শিকল"।
অর্থাৎ ব্লকচেইন এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে প্রতিটি লেনদেনকে একেকটি ব্লক হিসেবে একটির সাথে একটি যুক্ত করে চেইন আকারে রাখা হয়৷ এই প্রযুক্তি-কে বর্তমান সময়ের সবচাইতে নিরাপদ এবং দ্রুতগামী লেনদেনের প্রযুক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কারণ এটি সম্পূর্ণ কম্পিউটার নির্ভর এবং কোন ব্যক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। একারণে হিসাবে কারচুপি হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। অথবা কোন হ্যাকার বা অসাধু চক্র চাইলেই এ প্রযুক্তির ভিতরে অনুপ্রবেশ করে হিসেবে গরমিল তৈরি করতে পারবেনা।এবং এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অর্থ সরাসরি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির নিকট প্রেরণ করা সম্ভব। অর্থাৎ ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি যদি লেনদেন করে থাকেন তাহলে আপনাকে কোন তৃতীয় পক্ষের সহায়তা গ্রহণ করতে হবে না।
এখানে তৃতীয় পক্ষ বলতে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। যেমন ব্যাংক, এছাড়াও আমাদের দেশে টাকা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানোর জন্য বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদির মতো থার্ডপার্টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে ব্লকচেইন প্রযুক্তিতে আপনাকে কোন থার্ডপার্টি প্রতিষ্ঠানে সহয়তা গ্রহন করতে হবেনা।
১৯৯১ সালে ব্লকচেইন (Blockchain) প্রযুক্তি এবং ক্রিপ্টোগ্রাফির (cryptography) এর মাধ্যমে লেনদেন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা প্রদান করেন স্টাউট হেবার এবং ডব্লিও. স্কট স্টোরন্নিটা। এবং ১৯৯২ সালে তার পদ্ধতিগত নকশা তৈরি করে যা ব্লকচেইন এর ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দেয়। পরবর্তীতে ড্যানিয়েল শাসা ও ডেভিট মাজিরিস নেটওয়ার্ক ফাইল ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেন ২০০২ সালে যা কেন্দ্রীয়কতা বিহীন নিরাপত্তা দেয়।
দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও এই ব্লকচেইন সম্পর্কে তেমন কেউ আগ্রহ দেখায়নি এবং সাধারণ মানুষের ভিতরেও এ বিষয়ে কোনো জানার আগ্রহ ও তৈরি হয়নি। তবে ২০০৮ সালে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় যেখানে বলা হয় ডিজিটাল মুদ্রা বা ভার্চুয়াল কারেন্সি উদ্ভাবন সম্পর্কে। যার নাম দেওয়া হয়েছিল বিটকয়েন (Bitcoin) এবং এটি তৈরি করেছিল জাপানের নাগরিক সাতোশি নাকামোতো ( ছদ্মনাম) নামে এক বা একাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তি। যার লেনদেন করার জন্য এই ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। যেখানে ক্রিপ্টোগ্রাফি এর মাধ্যমে সকল লেনদেন সম্পন্ন হবে। এবং এটি ছিল ব্লকচেইন প্রযুক্তির সর্বপ্রথম এবং সফল ব্যবহার।
সাতোশি নাকামোতো (Satoshi Nakamoto) এর তৈরি এই বিটকয়েন এর বিশেষত্ব হচ্ছে এটি হবে একটি বৈশ্বিক মুদ্রা। অর্থাৎ কোন দেশের সরকার এটিকে নিয়ন্ত্রণ করবে না। এবং এটি একবার তৈরি করার পরও সম্পূর্ণ নিজে থেকেই চলবে কেউ এটিকে কন্ট্রোল করবে না।
২০০৮ বিটকয়েন তৈরীর পরে আরো হাজারো ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা বা ভার্চুয়াল মুদ্রা তৈরি হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে এই ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে মানুষের জানার আগ্রহ যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক তেমনভাবেই এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে ২০০৮ সালে ১ বিটকয়েনের দাম ছিল ১ ডলারের ও কম। ২০২১ সালে এসে তার দাম সর্বোচ্চ ৬৪ হাজার ডলারে পৌছে।
এবং এই বিটকয়েন ও অন্যান্য ডিজিটাল কারেন্সি (digital currency) ভার্চুয়াল মুদ্রা (virtual currency) রাখার জন্য রয়েছে ডিজিটাল ওয়ালেট সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়ার ওয়ালেট বা লেজার। যেখান থেকে একজন ব্যক্তি ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে সরাসরি বিটকয়েন বা অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ব্যক্তি হতে অন্য ব্যক্তির সাথে লেনদেন করতে পারে।
এবং এই বিটকয়েন আবিষ্কারের পর থেকেই ব্লকচেইন সম্পর্কেও মানুষের জানার আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাহলে আমরা উপরোক্ত আলোচনা হতে জানতে পারলাম ব্লকচেইন প্রযুক্তি কি (what is blockchain technology) এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে ইত্যাদি। আমরা পরবর্তীতে বিটকয়েন ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং ভার্চুয়াল অন্যান্য মুদ্রা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আর্টিকেল নিয়ে হাজির হবো!