শীতে নবজাতক এবং শিশুর যত্নে করণীয় ও পরিচর্যা

শীতে নবজাতকের যত্ন করণীয় ও পরিচর্যা!

চলে এসেছে শীত। এসময় বয়স্কদের তুলনায় ছোট বাচ্চারা একটু বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ে।  তাই এসময় শিশুর দরকার একটু বাড়তি যত্ন। কোনো রকম বাড়তি দুঃশ্চিন্তা না করে শিশুর একটু বাড়তি খেয়াল রাখলেই শিশু থাকবে সুস্থ ও প্রানবন্ত। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা.মো: আতিউর রহমান বলেন,"শীতকালে বাতাসে ধুলাবালির পরিমান অতিরিক্ত বেড়ে যায়। যার ফলে শিশুরা সহজেই ঠান্ডা, কাশি, গলাব্যাথা,হুপিংকাশি ইত্যাদি রোগ বেড়ে যায়। তাই এই সময় মায়েদের নিতে হবে শিশুর বাড়তি যত্ন।  শিশুর যত্নে করণীয় কিছু বিষয় সম্পর্কে জেনে নেই! যেমন, শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন, শিশুর শীতকালীন খাবার, এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিভিন্ন টিপস!

শীতে নবজাতক এবং শিশুর যত্নে করণীয় ও পরিচর্যা
আপনার শিশুর যত্নে অবলম্বন করুন বাড়তি সচেতনতা: 

এসময় বাতাসে আদ্রর্তার পরিমান বেড়ে যাওয়ায় কারনে ধুলাবালির পরিমান ও বছরের অন্যান্য ঋতুর তুলনায় একটু বেড়ে যায়। বাচ্চা যাতে ধুলাবালির সংক্রমণ থেকে রক্ষা পায় তাই এসময় জনসমাগম স্থানে বাচ্চাকে না নিয়ে যাওয়াই ভালো। বাচ্চাদের ত্বক এমনিতেই সংবেদনশীল হয়ে থাকে। তাই এই সময় বাচ্চাদের গামছা, তোয়ালে ,রুমাল অন্যদের থেকে আলাদা রাখতে হবে। স্কুলগামী বাচ্চাদের অবশ্যই মাস্ক পরার অভ্যাস করাতে হবে। তবে ঠান্ডা লেগে গেলে আদা, লেবু,তুলসী দিয়ে বানানো চা খেলে এ সমস্যার থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা লেগে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। 


ব্যবহার করুন গরম পানি: 

শীতকালে শিশুর যেকোনো কাজে গরম পানি ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।  স্কুলগামী শিশুদের সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে হাতমুখ ধোঁয়া, খাওয়া সহ যেকোনো কাজে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।  যেহেতু এ সময় অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই এসময় কোনো কাজে ঠান্ডা পানি ব্যবহার না করাই ভালো। নবজাতকদের ক্ষেত্রে এ সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন না। এক বছর বা তার বেশী বয়সী শিশুদের গরম পানিতে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। অনেকে শীতের সময় বাচ্চার ঠান্ডা লেগে যাবে এই ভয়ে একদিন পর পর গোসল করান। এটা ঠিক নয়। এতে বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগার প্রবনতা আর ও বেড়ে যায়।  এক্ষেত্রে প্রতিদিন গোসল না করাতে চাইলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে পুরো শরীর মুছে দিতে হবে। অনেকে শিশুকে গোসল করানোর আগে সারা শরীরে সরিষার তেল মেখে তারপর গোসল করান। এটা করবেন না। এতে শিশুর শরীরের পানি শুকাতে আর ও দেরি হয় এবং ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা বাড়ে।


পরিধান করাতে হবে উষ্ণ পোশাক:

শীতকালে বাচ্চাদের সবসময় উষ্ণ পোশাক পরাতে হবে। তবে সরাসরি উলের কোনো পোশাক পরানো উচিত না। কেননা সরাসরি উলের পোশাক ব্যবহার করলে উল ফুসফুসে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রথমে সুতির কোনো পোশাক পরিয়ে তারপর উলের পোশাক পরাতে হবে। তবে শীত অনুপাতে গরম পোশাক পরাতে হবে। হালকা শীতে হালকা গরম কাপড় পরাতে হবে। হালকা শীতে বেশী ভারী কাপড় পরাবেন না। এতে গরমে ঘেমে বাচ্চার ঠান্ডা লাগতে পারে। 


শিশুদের জন্য শীতের খাবার:

এসময় বাচ্চাদের খাওয়ার চাহিদা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়। এ সময় বাচ্চাদের কোনো মতেই  ঠান্ডা খাবার খাওয়ানো যাবে না। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার কারনে বাচ্চারা খেতে চায় না। এসময় বাচ্চাদের ঘন ঘন খাবার খাওয়াতে হবে। শীতের সবজি যেমন: ফুলকপি, বাঁধাকপি, বিটরুট, কুমড়ো এসব দিয়ে পাতলা স্যুপ বা পাতলা খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো যেতে পারে। শীতকালে কমলা, মাল্টা পাওয়া যায়। এসব ফলের রস ও শিশুর জন্য খুবই উপকারী।  


যত্নে থাকুক ত্বক:

বাচ্চাদের ত্বক বড়দের তুলনায় খুবই সেনসিটিভ।  যার ফলে শীতকালে শিশুদের ত্বকের রুক্ষতা বেড়ে যায় এবং ত্বক ফেটে যায়। তাই এ সময় শিশুর ত্বকে তার ত্বকের উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার, তেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে হবে। 



শীতে শিশুর প্রয়োজন অধিক যত্ন। উপরোক্ত বিষয় গুলো অনুসরণ করলেও আপনার শিশুকে এসময়ের যেকোনো সমস্যা  থেকে দূরে রাখা সম্ভব।  তারপর ও এসময় শিশুর যেকোনো সমস্যাকে সামান্য হিসেবে না নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী চলতে হবে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url