বিশ্বের সবচাইতে ভয়ঙ্কর ৭ টি সাপ
পৃথিবীর ভয়ঙ্কর সাতটি সাপ:- সাপ! কথাটি শুনলেই যেন মনের অজান্তেই আমরা একটু শিউরে উঠি। অনেকে সাপ দেখলেই ভয়ে পালিয়ে যান,কেউবা ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নেন। ভয় কিংবা ঘৃনা যেটাই হোক না কেন সাপ পৃথিবীর অন্যতম একটি আকর্ষণীয় প্রানী। তবে সাপ দেখে আমরা যতই ভয় পাই না কেন সব সাপ ই কিন্তু বিষাক্ত নয়। পৃথিবীর এমন সাতটি বিষাক্ত সাপ নিয়ে সাজিয়েছি আমাদের আজকের আয়োজন। চলুন দেখে নেই।
১. র্যাটল সাপ (Rattlesnake)
র্যাটল সাপ (Rattlesnake) |
পৃথিবীর বিষাক্ত সাপ গুলোর মধ্যে র্যাটল স্নেক অন্যতম। এরা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। এদের লেজের পেছনে একটি ঝুমঝুমি সদৃশ অঙ্গ থাকে। এরা যখন গভীর জঙ্গলে চলাফেরা করে তখন এরা এদের লেজের ঝুমঝুমি সদৃশ অঙ্গটি নাড়াতে থাকে যাতে অন্য কোনো বড় প্রানী এদের চলার পথে মাড়িয়ে না দেয়। এরা এদের শরীরের দুই-তৃতীয়াংশ অংশকে কাজে লাগিয়ে আক্রমন করে থাকে। একে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বিষধর সাপ হিসেবে গন্য করা হয়। এই সাপ যদি কোনো প্রাপ্ত বয়স্ককে আঘাত করে তাহলে অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই এবং কোনো শিশুকে আঘাত করলে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু ঘটে। রেটল স্নেক এর আঘাতে রক্ত বমি,শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষন দেখা দিতে পারে।
২.কমন ডেথ এডার সাপ (Common death adder snake):
Common death adder |
বিষাক্ত সাপেদের তালিকার দ্বিতীয় স্থানটি দখল করে আছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউগিনির এই বাসিন্দাটি। নামের সাথে স্বভাবের ও এক অদ্ভুত মিল রয়েছে এই প্রাণীটির। স্বভাবে হিংস্র এই সাপটিকে সর্পখেকো বললে খুব একটা ভুল হবে না। এটি নিজের থেকে ছোট এবং দুর্বল সাপেদের তাড়া করে হত্যা করে এবং খেয়ে ফেলে। এই সাপের বিষ এতই মারাত্মক যে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই যেকোনো শক্তিশালী প্রাণীর মৃত্যু ঘটতে পারে। এই ডেথ এডার সাপটি তার এক কামড়ে ৪০থেকে ১০০মিলিগ্রাম বিষ ঢালতে পারে। এই সাপের একটি অন্যতম বিশেষত্ব হল এটি কাউকে কামড়ানোর পর অন্য যেকোনো সাপের তুলনায় খুব দ্রুত বিষ উৎপাদন করতে পারে।
৩.ভাইপার:
ভাইপারস আসলে কোনো নির্দিষ্ট একটি সাপ নয়। এটি মূলত সাপের একটি জাত। ভাইপার জাতের মধ্যেই অনেক ধরনের সাপ রয়েছে। প্রায় সারা বিশ্বেই এই জাতের সাপ দেখতে পাওয়া যায়। তবে ভারত, এশিয়া,চীন এবং মধ্য প্রাচ্যের দেশ গুলোতে এদের বেশী দেখতে পাওয়া যায়। এরা সাধারণত খুবই রগচটা ধরনের হয়ে থাকে। এরা রাতের বেলা শিকারে বের হয়। এই সাপের বিশেষত্ব হল এদের কামড়ে সাথে সাথে মৃত্যু ঘটে না। এই সাপের কামড়ের প্রধান লক্ষন হল শরীরে প্রচন্ড ব্যথা হয়। এরপর শ্বাসকষ্টের সাথে সাথে হৃদস্পন্দন কমতে শুরু করে। এই সাপের কামড়ালে সাথে সাথে চিকিৎসা দেওয়া হলেও সুস্থ হতে ২ থেকে ৪ সপ্তাহ সময় লাগে।
৪.টাইগার স্নেক (tiger snake):
tiger snake |
পৃথিবীতে যত ধরনের বিষাক্ত সাপ রয়েছে তার মধ্যে টাইগার স্নেক অন্যতম। এই সাপের বিষ খুবই মারাত্মক হয়ে থাকে। এই সাপের কামড়ানোর ৩০মিনিটের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু ঘটে থাকে। এমনিতে এটি খুব শান্ত এবং ভীতু স্বভাবের হয়ে থাকে কিন্তু এরা একবার রেগে গেলে শিকারকে কামড় দিয়েই থাকে।
৫.ব্ল্যাক মামবা (black mamba):
ব্ল্যাক মামবা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে একটি ছোটখাটো আতঙ্কের নাম। ক্ষ্যাপাটে এবং দ্রুত গতির জন্য এরা সারা বিশ্বে পরিচিত। আপনি যদি কখনো ব্ল্যাক মামবার পাল্লায় পড়েন তাহলে সেখান থেকে বেঁচে ফিরে আসা আপনার জন্য খুবই কঠিন একটি ব্যাপার হবে। কেননা পাগলাটে স্বভাবের এই সাপটি খুবই দ্রুতগামী হয়ে থাকে। এরা যার উপর ক্ষেপে যায় তাকে ঘোড়ার মত তাড়া করে থাকে। দেখতে কালো রঙের এই সাপটি ঘন্টায় প্রায় ২০কিলোমিটার তাড়া করতে পারে। এরা একদিনে ১২বারের বেশী কামড়াতে সক্ষম। এরা এদের এক এক কামড়ে প্রায় ১০০ থেকে ১২০ গ্রাম বিষ ঢেলে থাকে।
৬.ইনল্যান্ড টাইপান (Inland Taipan):
ইনল্যান্ড টাইপান মূলত টাইপান সাপের একটি প্রজাতি। খুবই বিষাক্ত এই সাপটি মূলত অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। স্থানীয়দের কাছে এই সাপটি দানাদারবিল্লা নামে ও পরিচিত। এই সাপের একবারের কামড়ে যে পরিমাণ বিষ নির্গত হয় তা অনায়াসে শতাধিক পূর্ন বয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে। কামড়ানোর সাথে সাথে প্রতিষেধক ব্যবস্থা না নিলে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু ঘটে থাকে। এই সাপের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এরা ঋতুর সাথে সাথে নিজের শরীরের রঙ বদল করে। এরা গ্রীষ্মে জলপাই রঙ এবং শীতে ধূসর রঙ ধারন করে। এরা স খুবই শান্ত এবং মানুষের থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করে।
৭.টাইপান (Tipan):
ইনি প্রধানত অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। অস্ট্রেলিয়ার বিষাক্ত সাপেদের মধ্যে টাইপান অন্যতম। এর এক দংশনে প্রায় ১২হাজার গিনিপিগের মৃত্যু ঘটতে পারে। এই সাপ দংশনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায়। এই সাপের কামড় খেয়েও বেঁচে গেছে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম আর যদি বেঁচে ও যায় তাহলে ও তাকে অনেকদিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়।
সাপ একটি আতঙ্কের প্রানী হলেও এটি অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অনেক উপকার ও করে থাকে। এমন অনেক প্রানরক্ষাকারী ওষুধ বা মেডিসিন আছে যা সাপের বিষ থেকে তৈরি করা হয়। অর্থাৎ সাপ কিন্তু শুধু আমাদের প্রান ই নেয় না, কখনো কখনো বাঁচায় ও। তাছাড়া কোনো সাপ ই কখনো নিজের থেকে কোনো মানুষকে আক্রমন করে না। তাই সাপ দেখে আতঙ্কিত হয়ে একে হত্যা না করে এদের সংরক্ষণ করতে হবে।