রচনা: বাংলাদেশের গৃহপালিত পশু।

রচনা: বাংলাদেশের গৃহপালিত পশু।

সূচনা: বিচিত্র আমাদের দেশ, বিচিত্র এর প্রকৃতি। আর এ প্রকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে এ দেশের জীবজন্তু গড়ে ওঠেছে। আমাদের বাংলাদেশ গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে সাধারণত যে-সকল পশু-পাখি দেখা যায়, তার সব কনাটিই বাংলাদেশে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে অনেক রকমের জীবজন্তু রয়েছে। এদের কোনটা বড় আবার কোনটা ছোট। কোনটা ঘরে বাস করে আবার কোনটা বাস করে বনে। পানিতেও কোন কোন জীব বাস করে থাকে। তবে আমরা গৃহে যেসব জীবজন্তু লালন-পালন করি, তাদেরকে বলে গৃহপালিত পশু। সাধরণত গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, কুকুর, বিড়াল প্রভৃতি বাংলাদেশের গৃহপালিত পশু।

রচনা: বাংলাদেশের গৃহপালিত পশু।
গরু: গৃহপালিত চতুষ্পদ পশুর মধ্যে গরুর প্রয়োজনীয়তাই অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় সবচেয়ে বেশি। এদেশে এমন কোন গৃহস্থ বাড়ি নেই, যেখানে গরু নেই। গরু না হলে আমাদের দেশের কৃষিকার্য অচল হয়ে যেত। কারণ আমাদের দেশের শতকরা আশিজনই কৃষিজীবী। এ গরুর মাধ্যমেই আমাদের দেশে কৃষিকার্য পরিচালিত হয়। গাভীর দুধ আমাদের জীবনে যে কত উপাদেয়। ও পুষ্টিকর পানীয় তা বলে শেষ করা যায় না। ঘি, দধি, ছানা প্রভৃতি গাভীর দুধ হতে হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্ন প্রবার গাভীর দুধ থেকে প্রস্তুত হয়ে থাকে। গরু খড়-কুটা ও ঘাস খেয়ে জীবন ধারণ করে। এদের রোগ হলে চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।


মহিষ: উপকারী জন্তু হিসেবে মহিষকে দ্বিতীয় স্থান দেয়া যেতে পারে। মহিষ গরুর ন্যায় কৃষিকার্যে ব্যবহৃত হয় ও প্রচুর দুধ দিয়ে থাকে। এদেরকে পালন করা খুবই কষ্টকর। শান্ত স্বভাব ও তৃণভোজী এ বিশালকায় প্রাণীটির গুণ অন্যান্য পশু অপেক্ষা কম নয়।


ঘোড়া: গৃহপালিত পশুর মধ্যে ঘোড়াও বিশেষ উপকারী প্রাণী। এ সুশ্রী, বলবান, কর্মকুশল জন্তুটি বড়ই মূল্যবান প্রাণী। কোন কোন দেশে ঘোড়া যারা কৃষিকার্য করা হয় এবং এর পিঠে চড়ে বিভিন্ন দূর পথে যাওয়া যায়।


ছাগল: আমাদের দেশে অনেক লোক ছাগলের দুধের জন্য ছাগল পুষে থাকে। ছাগলের দুধ বলকারক ও ক্ষয়নাশক। উদরাময়, আমাশয় প্রভৃতি রোগে এটি অতিশয় উপকারী। শিশুদের জন্য তা অমৃতের মতো ফলদায়ক। খাদ্য হিসেবে ছাগলের মাংস দেশবাসীর খুব প্রিয়।


কুকুর: গৃহপালিত পশুর মধ্যে কুকুরের প্রয়োজনীয়তা কম নয়। আমাদের দেশে অধিকাংশ গৃহস্থই কুকুরকে খুব আদর-যত্ন করে থাকে। তবে অন্যান্য শীতপ্রধান দেশে কুকুরের মতো আমাদের দেশের কুকুর তত বেশি সুন্দর নয়। উপযুক্তভাবে লালন-পালন করলে আমাদের দেশের কুকুর সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে থাকে। রাতে যখন তার প্রভু নিদ্রায় থাকে, তখন সে প্রভুর বাড়ি পাহারা দিয়ে থাকে।


বিড়াল: বিড়াল গৃহপালিত ক্ষুদ্র প্রাণী। উহা ইঁদুর, আরশোলা ও ব্যাঙ-এর উপদ্রব হতে আমাদেরকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়া অন্য কোন উপকার এর যারা পাওয়া যায় না। কিন্তু বিড়ালের আদর অন্যান্য পশু অপেক্ষা অধিক। বিড়াল তার নিজস্ব কত গুলো গুণ দ্বারা মানুষের নিকট খুব প্রিয় হয়ে থাকে। গৃহপালিত পশু হিসেবে প্রত্যেকে একে স্বপরিবারভুক্ত প্রাণী বলে মনে করে থাকে। সামান্য আহারের বিনিময়ে এরা যেরূপ নিঃস্বার্থভাবে আমাদের সেবা করে তার তুলনা হয় না।


ভেড়া: আমাদের দেশে ভেড়া খুব বেশি নেই। যা আছে তাও আকারে ছোট। ভেড়া ছাগল জাতীয় প্রাণী। তবে ছাগলের চেয়ে ভেড়া বেশি শক্তিশালী। ভেড়ার গা বড় বড় লোমে আবৃত থাকে। ভেড়া একগুয়ে প্রাণী। এরা দলবদ্ধভাবে চলে। সামনের ভেড়া যে-দিকে যায় পালের সমস্ত ভেড়া তাকেই অনুসরণ করে। ভেড়ার লোম কম্বল, কার্পেট ইত্যাদি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। ভেড়ার মাংস খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।


জীবন-ধারা: গৃহপালিত পশুর জীবন-ধারা মনিবের মর্জির ওপর নির্ভরশীল। মনিবের ইচ্ছেমত এদের আহার-বিহার নিয়ন্ত্রিত হয়। গরু-বাছুরকে কেউ খড়, বিছালি, খৈল ও ভুষি খেতে দেয়। আবার কেউ মাঠ থেকে তাজা ঘাস সংগ্রহ করে খেতে দেয়। উপসংহার : গৃহপালিত পশু নানাভাবে আমাদের উপকার করে থাকে। এদের প্রতি নিষ্ঠুর হওয়া কিছুতেই উচিত নয়, বরং সাধ্যমত যত্ন করা আমাদের কর্তব্য।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url