বাংলার সৌন্দর্য সৃষ্টিতে বাংলার পাখি রচনা, বা- বাংলাদেশের পাখি
রচনা: বাংলাদেশের পাখি
ভূমিকা : বাংলাদেশের সবুজ শ্যামল প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে এখানে সমাবেশ ঘটেছে নানা জাতের বৈচিত্র্যময় পাখির। অসংখ্য পাখপাখালি এখানকার প্রকৃতিকে করেছে সৌন্দর্যমণ্ডিত। জীবনকে করেছে আনন্দময়। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের চারপাশে অগণিত পাখির মেলা। বনবাদাড়, নদীনালা, খাল-বিলে হরেক রকম পাখির উপস্থিতি প্রকৃতিকে করেছে আকর্ষণীয়। এখানে পাখির ডাকে মানুষের ঘুম ভাঙে, এখানে পাখির গানে মানুষের মন মুগ্ধ হয়। বাংলাদেশের জীবন ও প্রকৃতি উপভোগ্য হয়ে উঠেছে বিচিত্র পাখির কলকাকলিতে।
পাখির পরিচয়: বাংলাদেশে অসংখ্য জাতের পাখির বাস। কিছু সংখ্যক পাখি সারা বছর ধরে দেখা যায়। কিছু পাখি কোন কোন জতে বেশি দেখা যায়। কখনও তা কমে আসে। বিশেষ বিশেষ এলাকায় বিশেষ ধরনের পাখি পরিদৃষ্ট হয়। সাধারণভাবে বাংলাদেশের পাখিকে দুভাগে ভাগ করা যায়। এদের মধ্যে এক ধরনের পাখি ডাঙায় জীবনযাপন করে। সেগুলোকে ডাঙার পাখি বলে চিহ্নিত করা যায়। এই শ্রেণীর পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দোয়েল, শালিক, ময়না, টিয়া, শ্যাম্যা, ফিঙে, পাপিয়া, বুলবুল, নীলকণ্ঠ, কোকিল, বউ কথা কও, ঘুঘু, পায়রা, বাদুড়, পেঁচা, কাক, বাবুই, চড়ুই প্রভৃতি। অপর এক শ্রেণীর পাখি আছে যাদের পানির সাথে সম্পর্ক বেশি। এদের বলা যায় জলের পাখি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পাতিহাঁস, রাজহাস, বেলে হাঁস, বক, সারস, মাছরাঙা, কাদাখোঁচা, জলপিপি, পানকৌড়ি, ডাহুক, চিল, গাঙচিল, গাঙশালিক ইত্যাদি।
পাখির প্রকৃতি বাংলাদেশে যেমন অসংখ্য পাখি আছে, তেমনি আছে যথেষ্ট বৈচিত্র্য। আকারে, আচারে, বসবাসে, জীবন যাপন প্রণালীতে নানারকম বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য এনেছে। বাবুই ও চড়ুই খুব ছোট আকারের পাখি। রাজহাঁস বেশ বড় আকারের। রঙের মধ্যে কত বৈচিত্র্য। সাদা বক, সবুজ টিয়া, কালো কাক, কোকিল, ধূসর দোয়েল, লাল শালিক কত রঙের বাহার। আবার কোন পাখি নানা রঙের হয়ে থাকে।
পায়রার মধ্যে নানা রঙের সমাবেশ সহজেই লক্ষ করা যায়। জীবন-যাপনের রীতিও তাদের নানারকম। চড়ুই পরের ঘরে থাকে। বাবুই নিজের তৈরি কুঁড়ে ঘরকে খাসা মনে করে। মাছরাঙা মাটির গর্তে বাস করে । কোকিল কাকের বাসায় ডিম পাড়ে। পাখির ডাকাডাকির মধ্যেও কত বৈচিত্র্য। কাকের কর্কশ কা কা ডাক বিরক্তিকর, সহজেই দৃষ্টি হাতর্ষণ করে। কাকের ডাকে রাতের আঁধার কেটে ভোরের আভাস নিয়ে আসে। কালো কোকিল তার গলার সুরে সবাইকে মুগ্ধ হবে।
বসন্তের দূত হিসেবে তার আগমন আর মানুষের মনে দোল দেয়াই তার কাজ। ঘুঘুর উদাস ডাক মানুষের মনকেও উদাস করে তোলে। চড়ুই পাখি কিচিমিচি করে বিরক্তি উৎপাদন করে। শাস্তির প্রতীক পায়রা বাকবাকুম ডেকে আনন্দে নেচে বেড়ায়। এমনি অসংখ্য বৈচিত্র্যের প্রকাশ বাংলাদেশের পাখির মধ্যে।
উপকারিতা : বাংলাদেশের অসংখ্য পাখি এখানকার জীবনে নানাভাবে উপকারের নিদর্শন রাখে। যত ছোট বা যত বড়ই হোক না কেন পাখির অবদানে মানুষ নানাভাবে উপকার লাভ করছে। পাখির সৌন্দর্য অনাবিল। প্রকৃতিকে সুন্দর করে তোলে পাখিরা। গানের পাখিরা মানুষের মনে আনন্দের দোলা দেয়। কোন কোন পাখি ময়লা খেয়ে পরিচ্ছন্নতায় সাহায্য করে। পোকা-মাকড় খেয়ে পাখি উৎপাদনে সাহায্য করে। পাখি মানুষের খাবার হয়েও সীমাহীন উপকার করছে। বাংলাদেশে সুন্দর প্রকৃতিকে আকর্ষণীয় করার জন্য পাখিদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। শীতের অতিথি পাখি বাংলাদেশের আরেক আকর্ষণ।
উপসংহার : প্রকৃতির সম্পদ পাখি। মানুষের অবহেলা ও অত্যাচারে পাখির বংশ বিলোপ হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির সৌন্দর্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাখি হত্যা বন্ধ করতে হবে। অভয়ারণ্য তৈরি করে পাখিদের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। হারিয়ে যাচ্ছে পাখি একথা ভেবে তার সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।